চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নব্য জেএমবি’র সদস্য সংগ্রহে ‘সেতুবন্ধন’ ছিল সামাদ

নারায়নগঞ্জে জঙ্গি আস্তনায় অভিযানে নিহত হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালের অক্টোবরে দেশে ফিরেই নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ার চেষ্টা করেন। অত্যন্ত কম সময়ে নব্য জেএমবি’র সদস্য সংগ্রহ ও গঠনের পেছনে সামাদের বড় অবদান ছিল। সদস্য সংগ্রহে সামাদ ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে কাজ করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপি’র কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মহাখালী থেকে আব্দুস সামাদ, জিয়াদুল ইসলাম ও আজিজুল ইসলাম নামে নব্য জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০০টি ডেটোনেটর, ১টি পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, তামিম চৌধুরী দেশে ফিরে দেশের অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। ২০১৪ সালে জেএমবির আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিকের সঙ্গে তামিমের পরিচয় হয়। তামিম চৌধুরী প্রধান এবং সামাদকে সেকেন্ড ইন কমান্ড করে ‘জুনুদ আল তৌহিদ আল খিলাফা’ নামে একটি দল গঠন করেন।

যেহেতু এর আগে থেকেই সামাদ জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সেহেতু তার সঙ্গে অনেক সদস্যই তামিম চৌধুরীর দলে যোগ দেয়। পরবর্তিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলোর আদর্শে প্রভাবিত হয়ে তারা নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেন। যা পরে নব্য জেএমবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, দিনাজপুরের বাসীন্দা সামাদ ২০১০ সালে জেএমবিতে যোগ দেন। দেলোয়ার মিস্ত্রী ও শহীদুল ইসলাম খালিদের মাধ্যমে ২০১৪ সালে তামিমের সঙ্গে দেখা হয় সামাদের। নতুন দল গঠনের পর সে অনেকগুলো ট্রেনিং ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা দিয়ে সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতো।

সামাদের বাড়ি উত্তরবঙ্গ হওয়ায় এবং সেই এলাকা নতুন সদস্য রিক্রুটের উপযুক্ত মনে করায় সামাদকে একসময় তাকে উত্তরবঙ্গে পাঠিয়ে দেন তামিম। সামাদ নেতৃত্বপর্যায়ের হওয়ায় কোন অপারেশনে তার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায়নি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, আটক চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসীন্দা জিয়াদুল ইসলাম সামাদের শ্বশুর। নব্য জেএমবির অস্ত্র সরবরাহকারী ছোট মিজান ও সোহেল মাহফুজের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আনা অস্ত্র ও ডেটোনেটরগুলো জিয়াদুল তার মাছের খামারে লুকিয়ে রাখতো। আরেকজন আটক আজিজুল দুই বছর আগে হিজরত করেন।

নব্য জেএমবির সদস্য সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নব্য জেএমবির হাজার হাজার সদস্য সংখ্যা ছিল না। হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার ঘটনার বাইরে একজনই এক থেকে সর্বোচ্চ ২২টি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেছে। হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তি সময়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন নব্য জেএমবির সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। বিভিন্ন অভিযানে প্রায় ৮০ জন মারা গেছে। তবে সংগঠনটি এখন বিপর্যস্ত, তাদের নতুন কোন ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা নেই।

‘হলি আর্টিজান ঘটনার আগেই সামাদকে উত্তরবঙ্গে পাঠয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই সেই ঘটনাতেও তার প্রমান পাওয়া যায়নি। যেসব অস্ত্রগুলো তারা ঢাকায় নিয়ে এসেছে, সম্ভবত সেগুলো কারো কাছে হস্তান্তরের জন্য আনা হয়েছিল। তবে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’ বলেন মনিরুল ইসলাম।