চলতি সপ্তাহ ফেসবুকের জন্য ছিল ভয়াবহ। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুবই দ্রুত জনপ্রিয়তা হারিয়েছে বহু ব্যবহারকারীর কাছে।
আর এরই সুযোগ নিয়ে প্রায় নতুন একটি সামাজিক মাধ্যম পেয়েছে নতুন অনেক ব্যবহারকারী। তাই ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে ফেসবুক বন্ধের পরোক্ষ প্রচারণায় নেমেছে সাইটটি।
ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের ডেটা অ্যানালিসিস ফার্মের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে অবৈধ উপায়ে ফেসবুকের প্রায় ৫ কোটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক গণ্ডগোল।
এ ঘটনায় অনেকেই ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলছেন, এত বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা দেয়ার মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা ফেসবুকের নেই। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে চলছে #deletefacebook হ্যাশট্যাগ আন্দোলনের জোয়ার।
এই যখন অবস্থা, তখন ফেসবুকের পাশ ঘেঁষেই উঠে দাঁড়াচ্ছে মাস্টোডন নামে অনেকটা টুইটারের মতো একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। চলতি সপ্তাহে একদিকে ফেসবুকের ইমেজে নামছে ধস, অন্যদিকে মাস্টোডনে নতুন ব্যবহারকারী যোগ দেয়ার প্রবণতা হুট করেই বেড়ে গেছে।
মাস্টোডনের প্রতিষ্ঠাতা ইউগেন রচকো নিজেই এক সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অন্যান্য অসময়ের তুলনায় এই সপ্তাহে নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে সাইনআপ করার হার বেড়েছে চারগুণের মতো। শুধু গত সোম আর মঙ্গলবারেই ৫ হাজার ৮শ’ নতুন ব্যবহারকারী যোগ দিয়েছেন মাস্টোডনে।
এত ব্যবহারকারী পুরো সপ্তাহ জুড়েও সাধারণত এই সাইটে রেজিস্ট্রেশন করে না।
তুলনামূলক নতুন সামাজিক মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের ২২০ কোটি ব্যবহারকারীর তুলনায় মাস্টোডনের ব্যবহারকারী মাত্র ১১ লাখ। ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনা করলে ফেসবুকের তুলনায় মাস্টোডনকে মনে হতে পারে কিছুই না।
কিন্তু তারপরও ব্যবহারকারীরা ফেসবুক ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মাস্টোডনে। ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ারও তাগিদ দিচ্ছেন তারা। এর প্রধান কারণই হলো ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের প্রতি এর দৃষ্টিভঙ্গি। আর এই দু’টো জিনিস নিয়েই বিপদে পড়েছে ফেসবুক। যার ফলে এখন তার ‘তথ্যখেকো ব্যবসা মডেল’ নিয়ে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়েছে বিক্ষুব্ধ ব্যবহারকারীদের।
মাস্টোডনের কোড ওপেনসোর্স ভিত্তিক। যার অর্থ হলো, যে কেউ চাইলেই এর ডিজাইন পরীক্ষা করে দেখতে পারে। কোডগুলো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে ডিজাইন করা। এর ফলে ফেসবুকের মতো কোনো বিশেষ ডেটা সেন্টার থেকে কর্পোরেট নির্বাহী কর্তারা সাইটটি চালান না। প্রতিটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী নিজে নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা নিজেদের মতো স্বাধীন সার্ভার গঠন করে নিতে পারেন।
সাইটটির উন্নয়ন ব্যয় বহন করা হয় অনলাইন ডোনেশন বা অনুদানের মাধ্যমে। ফেসবুকের মতো ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে অর্থ যোগাড় করতে হয় না।
ফেসবুক জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সেসব অ্যাপ খুঁজে বের করতে যেগুলো ব্যবহারকারীদের তথ্য থার্ড পার্টি কোম্পানিগুলোর কাছে ফাঁস করে দিতে পারে। কিন্তু দিনশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্বই বারবার প্রমাণিত হচ্ছে।
এটাও অনেক বড় একটা কারণ ফেসবুক থেকে সরে ব্যবহারকারীদের অন্যান্য সাইটের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার।