হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২০১৭ সালের অধ্যায়ের শেষ। সূচনা হলো নতুন দিগন্তের। নতুন বছর মানে নতুন ভাবনা। নতুন কোনো উদ্যমে এগিয়ে যাওয়া। চলচ্চিত্রের মানুষরাও তেমনটাই ভাবছেন। ‘নতুন বছরে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে’ এমনটা প্রত্যাশা বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের সমন্বয়ে চলচ্চিত্র পরিবারের নেতাদের। ব্যবসায়িক মন্দা, উন্নত চিন্তাধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণ, লগ্নিকারক, নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ-রেষারেষি সবকিছু ভুলে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করবেন সবাই, এটাই আশা করছেন তারা।
চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক ও প্রবীণ অভিনেতা ফারুক বলেন, গত বছরটা চলচ্চিত্রের জন্য মোটেও ভালো ছিল না। খুব খারাপ গেছে। এই বছরে চলচ্চিত্রের উন্নতি না হলে খুব খারাপ হবে। চলচ্চিত্রের উন্নতির জন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই। আমাদের সিনেমা হলগুলো গুটিকয়েক ব্যক্তির কব্জায়। এ জন্য যত ভালো ছবি গল্প আর ছবি বানানো হোক না কেন কোনো লাভ হবে না। আমি নিজে এখনো লাঠিতে ভর না করেই হাঁটি। আমি মনে করি, চলচ্চিত্রের পা এখনও ভেঙে যায়নি।
তবে আমাদের চলচ্চিত্র কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। দুটো জায়গায় থেমে রয়েছে। সেটা হচ্ছে, প্রজেক্টর মেশিন ও সিনেমা হলের পরিবেশ খারাপ। এই দুটো জিনিস যদি উন্নতি করা যায় তবে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবেই। তখন চলচ্চিত্র পরিবার থেকে বছরে মিনিমাম ৫০ টি ছবি নির্মিত হবে। এরমধ্যে দেশের সংস্কৃতিতে, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ১০ টি নির্মিত হবে। চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক হিসেবে আমার চাওয়া থাকবে এই বছর সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক। তাহলে আমরা দেখিয়ে দেব শিল্পীরাও কী পারি।
চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্য সচিব ও চিত্রপরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম খোকন বলেন, ২০১৮ সাল হবে চলচ্চিত্রের টার্নিং বছর। আমি মনে করি, এই বছর হবে চলচ্চিত্রের মানুষদের প্রত্যাশা নয়, হবে প্রাপ্তির বছর। আমরা এ বছর চলচ্চিত্রের উন্নতির শিখরে পৌঁছবো। আগামীতে চলচ্চিত্রাঙ্গন আবার উত্তপ্ত হবে বলে আমি মনে করি না। যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা এসেছে। আমাদের চাওয়া পূরণ হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব মহোদয় (নাসির উদ্দিন আহমেদ) এসেছেন। আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি। নতুন করে তিনি আমাদের চলচ্চিত্রের উন্নতির জন্য কাজ করবেন বলে আশা রাখছি।
মোটকথা আমার এখন আর গোলযোগে যাবো না। নিজেদের মেধা দিয়ে ছবি বানাবো। ভালো ভালো ছবি বানাতে চাই। নিজের দুটো ছবি (হারজিৎ ও আমার মা আমার বেহেশত) মুক্তি পাবে এই বছরই। দর্শকদের চিন্তাধারাকে প্রাধান্য দিয়েই ছবি দুটি নির্মাণ করছি। আমরা সিনিয়ররাও যে ডিজিটাল ফরম্যাটে ছবি বানাতে পারি সেটা দেখাতে চাই। দর্শকদের বলবো আপনারা হলে আসুন। আমাদের ছবি দেখুন। আমাদের উৎসাহ দিন।
চলচ্চিত্র পরিবারের আওতায় অন্যতম সংগঠন চলচ্চিত্রের শিল্পী সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক বলেন, চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৭ সাল অনুকূলে ছিল না। নতুন বছরে আমি আশা করছি, আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল-ভ্রান্তিগুলো শুধরে নেব, মনোমানিল্য দূর করে আমরা কাঁধ মিলিয়ে চলচ্চিত্রের স্বার্থেই কাজ করব। এই বছর ভালো ভালো ছবি হলে আসবে। সিনেমায় অশনি সংকেত দূর করতে গেলে ভালো ছবির বিকল্প নেই। দর্শকদের হলে আসতে হবে। আমার বিশ্বাস এ বছর আমাদের সিনেমা অনেকদূর এগিয়ে যাবে। আমি মনে থেকে এটা বিশ্বাস করি। আমার অভিনীত জান্নাত, আমার মা আমার বেহেশত, গোলাপতলীর কাজল ছাড়াও ভালো কিছু ছবি আসছে।
আরেকটা বিষয় বলি, সাফটা চুক্তির মাধ্যমে কলকাতার ছবি এদেশে আনা হচ্ছে। আমরা তাদের ছবির জন্য যতটা পরিশ্রম করছি, তারা আমাদের ছবির প্রমোশনে কি অতটা শ্রম ব্যয় করেন? আমি মনে করি এটা কোনো চুক্তির আওতায় পড়ে না। কী লাভ হচ্ছে এই সাফটা চুক্তির মাধ্যমে? আমাদের সিনেমার বাজার বড় হচ্ছে? যখন চায়ের শুরু তখন, ব্রিটিশরা একসময় আমাদের মাগনা চা খাওয়াত। আমরা কিনে খেতাম না। এখন আমরা চা ছাড়া চলতে পারিনা। সাফটা চুক্তির ব্যাপারটা যেন এমন না হয়। আমার মনে হয়, সাফটা চুক্তি আমাদের সিনেমার জন্য ভালো দিক না।
চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্য ও চিত্রপরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, ২৭ বছর পর ২০১৮ সাল থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি তথা চলচ্চিত্র পরিবার ও এফডিসির সহযোগিতায় নতুন মুখ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আমাদের শিল্পী সংকট এতে করে অনেকটা কেটে যাবে বলে মনে করি। এই বছরে আমরা চলচ্চিত্রে যাদের পাব, তারাই তো আগামীর হাল ধরবে। এটা খুব ভালো হবে, সেজন্য আমি বলবো ২০১৮ সাল চলচ্চিত্রে জন্য শুভ একটি বছর। দর্শক হলে ফিরে আসুক, লগ্নিকারকরা চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করুক; আবার চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসুক। ২০১৮ সাল জুড়ে এটাই আমার প্রত্যাশা।