দীর্ঘ ২৮ বছর পর আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে চলচ্চিত্রাঙ্গনে আবারও শুরু হচ্ছে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উদ্যোগে এবং এফডিসি’র সহযোগিতায় চতুর্থবারের মতো এই আয়োজন শুরু হতে যাচ্ছে।
মোট ‘সাতটি ক্যাটাগরি’তে এবার প্রতিভা খুঁজে বের করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে; নায়ক, নায়িকা, পার্শ্ব অভিনেতা, পার্শ্ব অভিনেত্রী, খলনায়ক, কমেডিয়াম ও শিশু শিল্পী।
তবে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই চলচ্চিত্র পাড়ায় এই আয়োজন নিয়ে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ বলছে, চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট দূর করতে হলে নতুন মুখ প্রয়োজন। নতুন মুখের যারা আসবে তাদের হাত ধরে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
আরেকপক্ষ বলছে, যেসব শিল্পীরা এখন চলচ্চিত্রে কাজ করছেন, তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাহলে আবার নতুন মুখে কেন? এ নিয়ে দু’পক্ষই মজবুত যুক্তি দিচ্ছে।
এই ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ও একসময়ের বাংলা চলচ্চিত্রের শীর্ষনায়ক রিয়াজ বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেককিছু প্রয়োজন আছে। এরমধ্যে নতুন মুখেরও প্রয়োজন। বর্তমানে সময়ে সিনেমার জন্য নতুন মুখের শিল্পীদের যতটা প্রয়োজন, আমি মনে করি তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন অন্যান্য নতুন ‘কলাকুশলী’। শিল্পীদের চেয়ে চলচ্চিত্রে এখন এই কলাকুশলীদের প্রয়োজনটা আরও বেশি।
‘কলাকুশলী’ বলতে নায়ক রিয়াজ বুঝিয়েছেন পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, গল্পকার প্রমুখদের। রিয়াজ বলেন, ২০১৮ সালে এসে একজন নির্মাতার মেধা হতে হবে বিশ্বমানের। তিনি যেন ওয়ার্ল্ডের যেকোনো দেশের নির্মাতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ছবি নির্মাণের যোগ্যতা রাখে সেটা দেখতে হবে। তার চিন্তা শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না।
রিয়াজ আরও বলেন, আমাদের অনেক নির্মাতা কিন্তু বিশ্বমানের ছবি বানাতে পারছেন না। আর যারা আগে নিয়মিত ছবি বানাতেন, তারা তো বানাচ্ছেন না! কয়জন পরিচালক এখন ছবি বানাচ্ছেন? আমার মনে হয়, ছবি বানাচ্ছে অন্য কেউ। আর নিজের নাম দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে কেউ কেউ। পোস্টারে দেখা যাচ্ছে পরিচালকের নাম ভিন্ন। আমি এটা বাণিজ্যিক ছবি কথা বললাম। অন্য ঘরানার ক্ষেত্রে নয়।
‘নিঃশ্বাসে তুমি বিঃশ্বাসে তুমি’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘বাঁধা’র মতো সুপারহিট সব ছবির এই নায়ক বলেন, নায়ক-নায়িকা আসবে যাবে কিন্তু এই কলাকুশলীরা চলচ্চিত্রে থেকে যাবে। তারাই সমৃদ্ধ করবে। তাই নায়ক-নায়িকার চেয়ে কলাকুশলী আগে দরকার।
যোগ করে রিয়াজ বলেন, এই কলাকুশলীরা যেভাবে কাজের নির্দেশ দেন, শিল্পী কিন্তু সেভাবেই কাজ করতে বাধ্য থাকেন। বাধ্যগত হয়ে কাজের বাইরে তার কিছুই করার থাকে না।
তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নায়কের মতে, একটা ছবি ভালো হওয়ার অন্যতম কারণ ভালো গল্প। সেজন্য প্রয়োজন ভালো গল্পকার।
সেই ভালো গল্প দিয়ে একজন নির্মাতা তার মেধা দিয়ে ছবিটা বানান, প্রযোজক অর্থ লগ্নী করেন। ছবি বানানোর পর হলে প্রদর্শনের সময় আমি অন্যরকম কিছু দেখতে পাই। যেখানে একচেটিয়ে একজন মানুষ হল দখল করে রেখেছেন। এটাকে অনেক সময় আমার কাছে চাঁদাবাজি মনে হয়। এই সিস্টেমের পরিবর্তন হওয়া খুব করে দরকার।
ছবি: নাসিম