ধৈর্য্য এবং মমতা নিয়ে জীবনটাকে দেখুন: ফারুকী
প্রসঙ্গ: শনিবার বিকেল
‘শনিবার বিকেল’-এর দুটি স্থিরচিত্র প্রকাশের পর সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে, সেসব বিষয় নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
আনুষ্ঠানিকভাবে সবেমাত্র দুটি স্থিরচিত্র প্রকাশ হয়েছে। দুটি চরিত্রের। একটিতে জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের মুখ ভর্তি দাড়ি, কপালে সেজদার দাগ এবং অন্যটিতে অভিনেত্রী তিশা। যিনি বোরকা ও হিজাবে আবৃত। অথচ তাতেই সোশাল মিডিয়ায় বইছে সমালোচনার ঝড়। কেউ বলছেন ধর্মকে অবমাননা করতেই এমন সাজে জাহিদ-তিশা! নির্মাতাকে তুলোধুনো করছেন অনেকে।
বলছিলাম, মুক্তি প্রতীক্ষিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবি ‘শনিবার বিকেল’ প্রসঙ্গে। সম্প্রতি সেন্সর বোর্ডে দেখানো হয়েছে চলতি বছরের বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘শনিবার বিকেল’। মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত না হলেও ছবিটি যে শিগগির বড় পর্দায় আসছে সেটা নিশ্চিত করেছেন প্রযোজক। ছবিটি শিগগির আসছে এমনটা জানান দিতেই ছবির দুটি স্থিরচিত্র প্রকাশ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। আর তাই যেন কাল হলো!
‘শনিবার বিকেল’-এর স্থিরচিত্র দেখেই সোশাল মিডিয়ায় ছবির বিরুদ্ধে চলছে প্রচার প্রচারণা। বিভিন্ন গ্রুপে ছবি দুটিকে শেয়ার করে ‘শনিবার বিকেল’কে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ বলেও মন্তব্য করতে ছাড়ছেন না অনেকে। অথচ স্থিরচিত্রে নেই তেমন কোনো আভাস, চলচ্চিত্রের কাহিনীতো দূরের কথা স্থিরচিত্র দুটি দেখে বোঝা যাচ্ছে না ছবিতে জাহিদ হাসান ও তিশার চরিত্র! টিজার, ট্রেলার প্রকাশের পর এমন সমালোচনা উঠলেও অমূলক হতো না। এসব বিষয়ে কী ভাবছেন ‘শনিবার বিকেল’ নির্মাতা? শুধুমাত্র স্থিরচিত্র দেখে এমন বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি কীভাবে ডিল করছেন তিনি? এসব নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন ফারুকী:
ফারুকীর সিনেমা আসবে আর বিতর্ক তৈরী হবে না এমনটা সাধারণত ঘটতে দেখি না। ‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে আপনি কি ধরণের বিতর্ক উঠতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন? মানে পূর্ব ধারণা ছিলো কিনা?
এটা আসলেই দুঃখজনক। একটা সিনেমা পর্দায় আসার আগেই সেটাকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ করে অনলাইনে ঝড় তোলার ফলে, শান্ত মাথায় সিনেমাটা দেখা বা সিনেমার ভিতরের সুক্ষ্ণ অলিগলি-গুলো উপলব্ধি করা একটা কঠিন কাজ হয়ে ওঠে। এটা দর্শকদের জন্যে যেমন অস্বাস্থ্যকর, ফিল্মমেকারের জন্যও। আর আমার সিনেমার জন্য এই পরিস্থিতিটা আরো ক্ষতিকর। কারণ আমার সিনেমায় যেহেতু সাদা-কালো কোনো পক্ষ-বিপক্ষ থাকেনা, সেইহেতু তার সুক্ষ্ণ অলিগলিগুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলে সিনেমাটা আরেকটু পরিষ্কার হয়।
‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে অনেক রকম কথাই উঠতে পারে, অনেক আলোচনাও হতে পারে। কিন্তু ছবি মুক্তির আগে থেকেই অনলাইনে সক্রিয় একটা গ্রুপ এর ফিল্মমেকারকে যেভাবে ইসলাম-বিরোধী সাব্যস্ত করে তার বিচার চাইছে, তাতে করে মনে হয় এদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। আপনাদের মনে থাকার কথা ‘আয়েশা’র সময়ও একই কাজ করা হয়েছে।
আপনার ছবি মুক্তির আগেই সোশাল মিডিয়ায় আদ্যোপান্ত সমালোচনামূলক রিভিউ প্রকাশ হয়ে যায়, তাদের সাথে আপনার এমন টিউনিংয়ের রহস্য কী?
হাহাহা! এটার উত্তর তো আমার জানা নাই। আমি শুধু তাদের প্রতি আহ্বান জানাবো ধৈর্য্য এবং মমতা নিয়ে জীবনটাকে দেখুন।
‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে চারদিকে হইচই। চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য জনপ্রিয় সব ফেসবুক গ্রুপে সমালোচনা হচ্ছে। ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে, এমনটাও বলছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে আপনার কী ব্যাখ্যা?
এটা প্রায় অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার। দুইটা স্টিল দেখে কীভাবে নিশ্চিত হয়ে গেলো তারা যে সিনেমায় ইসলাম অবমাননা হয়েছে নাকি হয় নাই?
‘শনিবার বিকেল’ কি সত্যিই হলি-আর্টিজানের ঘটনা কেন্দ্র করে কিনা?
আগেও বলা হয়েছে, শনিবার বিকেল হোলি আর্টিজান এর ঘটনা থেকে অণুপ্রানিত, কিন্তু সেই ঘটনার হুবহু পুনঃনির্মাণ নয়। এটা আগাগোড়াই ফিকশন।
মাত্র দুটি স্থিরচিত্র দেখেই আপনার ছবির কাহিনী বর্ণনা করে সোশাল মিডিয়ায় যারা ছবি বয়কটের আহ্বান তুলছেন, তাদের এই দূরদর্শিতাকে কীভাবে দেখেন?
তাদেরকে নাসার মহাকাশ স্টেশনে নিয়োগ করার দাবী জানাচ্ছি। এতে করে তারা কোনো রকম টেলিস্কোপ ছাড়াই খালি চোখেই অতি দূরের গ্রহ আবিষ্কার করে ফেলতে পারবে।
সমালোচকদের কাছে যে প্রশ্নটি এই মুহূর্তে মুখ্য সেটা হল, জাহিদের মুখে দাড়ি ও কপালে সেজদার দাগ কেনো? এবং তিশাকে কেনো হিজাব পড়ালেন?
এই প্রশ্নের উত্তর কি ফিল্মমেকার এখন দিবে? নাকি এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য সিনেমাটা দেখতে হবে?
শনিবার বিকেল-এর মুক্তির বিষয়টি নিয়ে বলেন? কবে মুক্তি পাচ্ছে?
জাজ মাল্টিমিডিয়া এই বিষয়ে পরিকল্পনা করছে। মুক্তির তারিখ ঠিক হলে জানিয়ে দেয়া হবে। দর্শক ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান, কোনো রকম পক্ষ-বিপক্ষের টোপে না পড়ে ঠান্ডা মাথায় সিনেমাটা দেখতে যান। তারপর নিজের মত নিজেই তৈরি করেন। আমার পক্ষ থেকে আমি এইটুকু শুধু বলতে পারি, এই ছবিটা আমাদের হৃদয়ের অনেক কথা, অনেক অনুভূতি পর্দায় তুলে ধরবে।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন