ঘটনা টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের। ওই ইউনিয়নের ছাত্রীকে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে গত বুধবার রাতে মেয়েটির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজনকে আসামী করে গোপালপুর থানায় ধর্ষণ মামলা করেছে তার বাবা। এদিকে ঘটনার ৪দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ আসামীদের কাউকেও গ্রেফতার করতে পারেনি।
অপরদিকে আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কোন কূল কিনারা পাচ্ছেনা মেয়েটির বাবা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশী সেনেরচর শাহসুফি আলীম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মাজহারুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে নিয়মিত টিভি অনুষ্ঠান দেখতে যেতো। আর এই যাতায়াত ছিল দীর্ঘদিনের। মাওলানা মাজহারুল ইসলাম বাবলুকে মেয়েটি ডাকতেন বড় বাবা বলে। বাবা আর মেয়ের সম্পর্ককে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেনি উভয় পরিবারের কেউ। অবাধ এই মেলামেশার কোন এক সময় মেয়েটির উপর লোভের জন্ম নেয় মাওলানা বাবুলের। কৌশলে ও ভয় দেখিয়ে সে মেয়েটির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে গড়ে তুলে। এরই ধারাবাহিকতায় তিন মাস আগে মেয়েটির ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে ধর্ষণ করলে মেয়েটি গর্ভধারণ করে। বিপদ আঁচ করে বড় বাবা মওলানা বাবুল ওই ছাত্রীকে কৌশলে আবার বাড়িতে ডেকে নিয়ে ঘরে আটকে রেখে গর্ভপাতের ওষুধ সেবন করিয়ে গর্ভপাত ঘটায়।
এলাকায় ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে তা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু হয়। সদ্য সমাপ্ত ইউ নির্বাচনের হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতির ফাঁদে পড়ে অসহায় পরিবারটি। ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষ যার যার ফায়দা তুলতে মেয়েটিকে পুঁজি করে শুরু করে নোংরা রাজনীতি। এতে করে আইনের দ্বারস্থ হতেও বিলম্ব হয় অসহায় পরিবারটির। পরে গত বুধবার রাতে মেয়েটিকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে এমন খবরে তাকে উদ্ধার করেগোপালপুর থানা পুলিশ। ওই রাতেই মেয়েটির বাবা পাঁচজনকে আসামী করে গোপালপুর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করে।
মামলার ৪দিন অতিবাহিত হলেও মামলার সকল আসামীরাই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
মেয়েটির বাবা বলেন, মামলা করার পর এখন আরো বিপদে আছি। প্রতিনিয়ত আমি আর আমার মেয়েকে নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মামলা চালানোর মতো কোন টাকা নেই। সম্মান গেলো এখন বিচার পাব কিনা সন্দেহ। এর চেয়ে আমরা আত্মহত্যা করলেই সকল যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যেতাম।
ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত মাওলানা মাজহারুল ইসলাম বাবুলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও কথা অন্য আসামী নওজেশের সাথে। তিনি বলেন, এমন ঘটনা যদি ঘটেও থাকে তা অন্য কোন মানুষের সাথে। এমন ঘটনায় বাবুল জড়িত থাকতে পারেনা। আমরা সকলেই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।
গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল জলিল চ্যানেলআই অনলাইনকে মামলা দায়েরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রকট থাকায় আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সহিত প্রাথমিক তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
মেয়েটিকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পাওয়া পেলেই প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। আসামীরা সকলেই পলাতক থাকায় এখনো কেউ ধরা সম্ভব হয়নি বলেও জানান ওসি।