চীন সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্বপূর্ণ আহ্বানে বিস্ময়ের কিছু নেই। এক বছর আগেই ‘চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ধর্ষণ করছে’, এমন বিস্ফোরক মন্তব্যকারী ট্রাম্প, এখন চীনকে বন্ধু বলতেই পারেন! বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রবাহে অবস্থান বদলাতে সময় লাগেনা। কিন্তু তা নিঃসন্দেহে আমোদের সৃষ্টি করে।
১২ দিনের এশিয়া সফরে বুধবার চীনে পৌঁছান ট্রাম্প। চীনে পৌঁছার পর বড় ধরনের সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাকে। বৃহস্পতিবার উভয় নেতা বৈঠকে মিলিত হন এবং দুইবার বক্তব্য দেন। বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন ট্রাম্প।
প্রথমবারের মতো চীন সফরে এসে আড়াই হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থমূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। একে ‘সত্যিকারের বিস্ময়’বলছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী জং শান।
মার্কিন ধনকুবের ট্রাম্প গত বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। এ বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি।
২০১৬ সালের মে মাসে রিপাবলিকান দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প এক প্রচারণা সভায় বলেছিলেন, “চীন আমাদের দেশকে ধর্ষণ চালিয়ে যাবে, তা চলতে দিতে পারি না। কিন্তু তারা তাই (ধর্ষণ) করছে। এটা বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি।” দেশ দুটির মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির প্রতি ইঙ্গিত করে তার এমন মন্তব্য ছিলো।
এবারের সফরে ট্রাম্প ‘চীনকে দোষ দেন না’ জানিয়ে বললেন, “কোন দেশ তার নাগরিকের জন্য অপর একটি দেশ থেকে সুবিধা আদায় করে নিলে, তাকে তো দোষ দেওয়া যায় না। আমি চীনকে কৃতিত্ব দেই।”
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে জোড় লড়াইয়ে নামার আগেও চীনের তীব্র সমালোচনা করতেন ট্রাম্প। টুইটারে অত্যন্ত সক্রীয় ট্রাম্পের সে সময়কার কয়েকটি টুইট তার প্রমাণ।
২০১১ সালের ১৫ আগস্ট ট্রাম্পের টুইট, “চীন আমেরিকার জন্য হুমকি। তারা আমাদের বন্ধু নয়।”
২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের টুইট, “চীন আমাদের বন্ধু নয়। তারা আমাদের মিত্র নয়। তারা আমাদের ছাড়িয়ে যেতে চায় এবং আমরা যথেষ্ট স্মার্ট ও কঠোর না হলে, তারা তা করবে।”
২০১৪ সালের ১৯ মে’তে ট্রাম্পের টুইট, “মনে রাখবেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু নয়।”
ট্রাম্পের মনোভাব এখন একেবারেই বদলে গেছে। চীনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, আমরা একটা বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি, আমি তা দেখতে পাচ্ছি। আমি মনে করি, দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্ত ভালো একটা সম্পর্ক থাকবে আমাদের, সেদিকেই দৃষ্টি আমার।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তিনি বলেন, আপনার প্রতি আমার অত্যন্ত উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি রয়েছে।
ট্রাম্পকে অভ্যর্থনা জানানো সামরিক মহড়ার প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, আজকের সকালে যে সামরিক মহরার আয়োজন করা হয়েছিলো তা অসাধারণ। পুরো বিশ্ব তা দেখেছে।
অথচ ২০১২ সালে যখন তৎকালিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শি জিনপিংকে একই ধরণের সামরিক মহড়ার মাধ্যমে অর্ভ্যথনা জানিয়েছিলেন তখন ১৪ ফেব্রুয়ারির টুইটে এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প। একে অভিহিত করেছিলেন ‘বড় ভুল!’ হিসেবে।
চলতি এশিয়া সফরে পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি দেশে যাবেন ট্রাম্প। জাপান থেকে শুরু হওয়া এই সফর পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন দিয়ে শেষ হবে।