কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ বা এনআরসি থেকে বাদ দেওয়ার বিধান নেই। বুধবার রাজ্যসভায় একথা বলেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ভারতের যেকোনও নাগরিক এনআরসি তালিকায় স্থান পাবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ধর্ম বিবেচ্য নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের থেকে এনআরসি সম্পূর্ণ পৃথক।’
রাজ্যসভায় শাহ বলেন, ‘পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান এবং পারসি শরণার্থীদেরই নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত। তাঁদের ভারতের নাগরিক করে তুলতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রয়োজন।’
এদিকে, আসামে এনআরসির দৌলতে প্রায় বিশ লাখের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কোনও সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি ছাড়াই এমনটাই দাবি করেছে মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন ইউএসসিআইআরএফ।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি আপডেট করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলে দেখা যায় ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
ইউএসসিআইআরএফ-এর একটি রিপোর্টে জানানো হয়, ১৯ লাখ মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সেই তালিকায় কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে, সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
কমিশনের কমিশনার অণুরিমা ভার্গব মঙ্গলবার বলেন, আসামের ২০ লাখের কাছাকাছি মানুষকে রাষ্ট্রহীন হতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কোনও সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত এনআরসি পদ্ধতি ছাড়াই।”
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে, ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বারবার জানিয়েছেন কীভাবে এনআরসি পদ্ধতি প্রয়োগ করে তারা মুসলিমদের সরিয়ে দিতে চান। এবং এখন সারা ভারত জুড়ে রাজনৈতিক নেতারা এনআরসি করতে চাইছেন। এবং মুসলিমদের জন্য আলাদা নাগরিকত্বের মান তৈরির কথা ভাবছেন।”
ইউএসসিআইআরএফ-এর সভাপতি টনি পার্কিন্স বলেছেন, সংশোধিত এনআরসি ও তার পরবর্তী পদক্ষেপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্বের ধর্মীয় পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছে। লক্ষ্য সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়।
ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতে এনআরসিকে মুসলিম নাগরিকদের বৈষম্য সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত শতাব্দীর শুরুর দিক থেকেই অাসামে বাইরে থেকে লোকেরা বিশেষ করে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে বহিরাগতরা এসেছে। বাংলাদেশ থেকে হিন্দু ও মুসলিম শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছেন এই রাজ্যে এসে।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে। গত সেপ্টেম্বরে এক বিবৃতিতে বলা হয়,ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি পুরো পদ্ধতিটি খতিয়ে দেখছে।
পাশাপাশি এও দাবি করা হয়েছে যে, এই পদ্ধতিতে কোনও বৈষম্য নেই। কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানো হয়নি বা অন্যায় করা হয়নি। এমনকী, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির কোনও ফর্মেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ও জানতে চাওয়া হয়নি।