ধর্মনিরপেক্ষতার সঠিক অর্থ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, বরং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। তিনি বলেন: ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরতেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই শান্তি যেন বজায় থাকে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। এদেশে অনেক ধর্মের মানুষ বাস করে। প্রত্যেক ধর্মের মানুষই এদেশে স্বাধীনভাবে তার নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। এর নামই ধর্মনিরপেক্ষতা। এটাই ছিল জাতির পিতার চেতনা এবং চিন্তা।
মডেল মসজিদ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ৯টি জেলা-উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রাথমিকভাবে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঝালকাঠি, খুলনা, বগুড়া, নোয়াখালী এবং রংপুরে এই মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করা হবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন: ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই ধর্মের প্রচার ও প্রসারে জাতির পিতা আরও অনেক কাজ করেছেন।
তিনি বলেন: ইসলামের নাম নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ধর্মের মূল শিক্ষা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়া এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের এই পবিত্র ধর্মের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা চাই, ধর্মের মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।
‘‘আজকে জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এই দেশটা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন এই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে সে পথে যাত্রাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা সম্পন্ন করতে পারেননি। কারণ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপরেই বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে।
ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাটা যেন মানুষ পায় এবং ইসলামী সংস্কৃতি মানুষ যেন ভালভাবে রপ্ত করতে পারে, চর্চা করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় আমরা ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করে দেব। যেখানে সত্যিকারভাবে ইসলাম ধর্মের চর্চা হবে’’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, আগে তাদের জন্য (ইমাম-মুয়াজ্জিনদের) কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমি প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হই সেসময় ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড করে দেই।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশে বেতারে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ভাষণের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন: ‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করিম (সা:) ইসলাম। যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে- ন্যায় ও সুবিচারের মন্ত্র। আমরা সেটাই বিশ্বাস করি এবং আমাদের ধর্মের সেই মর্যাদাটা সমুন্নত থাকুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন: ‘আমরা চাই বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ ও মাদক থাকবে না। প্রতিটি মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। তাঁদের আর্থসামাজিক উন্নতি হবে এবং বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশ যেন সব দিক থেকে উন্নত হয়, আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনা করে তিনি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন: ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের পবিত্র ধর্ম সম্পর্কে মানুষ যেন জানতে পারে এবং ধর্ম পালনে আরও উৎসাহিত হতে পারে। তারা ধর্মচর্চাটা যেন করে এবং বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারি।’