কানাডার সাস্কাচুয়ান প্রদেশের সাস্কাটুন শহরে ‘বাংলাদেশ: ইউর ডেসটিনেশন ফর ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশন, সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউসাস্ক) গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি এবং এগ্রি-ওয়েস্ট বায়ো ইনক-এর যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার এ সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার, মিজানুর রহমান, সাস্কাটুন পশ্চিম-এর সংসদ সদস্য ব্র্যাড রেডিকপ্, সিটি অব সাসকাটুনের মেয়র চার্লি ক্লার্ক, কানাডা ও বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য, শিল্প, গবেষণা এবং সরকারী বিভিন্ন সংস্থা থেকে অন্যান্য সদস্যগণ এই সেমিনারে যোগদান করেন।
এ সেমিনারটি দুটি সেগমেন্টে বিভক্ত ছিল। প্রথম সেগমেন্টের আলোচনায় পবন চৌধুরী, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেজা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়; সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বিডা; ডাঃ সেলিম রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং কার্যনির্বাহী পরিচালক, সানেম, বি-এ-আর-সি’র কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান এস-এম বখতিয়ার বাংলাদেশের প্যানেল সদস্য হিসাবে বক্তব্য রাখেন।
প্রথম সেগমেন্টে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার বাংলাদেশকে উদীয়মান বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের গন্তব্য হিসাবে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের বিস্তৃত আন্তঃসংযোগ, ক্রমবর্ধমান রপ্তানি, শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা, অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং দক্ষ কর্মশক্তির বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
কানাডা এবং সাস্কাচুয়ান -এর মধ্যে পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উম্মচিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ হাইকমিশন এর আগে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্কের জন্য ক্যালগারি, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, টরোনটো, উইন্ডসর সহ কানাডার অন্যান্য শহরে জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করেছে।
সেমিনারে বাংলাদেশের মূল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিকে তুলে ধরা হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে জৈব-প্রযুক্তি, কৃষি উৎপাদন, কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, খামার সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, ফার্মাসিউটিক্যালস, তথ্য প্রযুক্তি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং সক্ষমতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অবারিত সুযোগ রয়েছে বলে অন্যান্য বক্তারা মনে করেন। প্রথম সেগমেন্টের আলোচনায় বাংলাদেশের উপরোল্লিখিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের, বিভাগের ও প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগণ বাংলাদেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অবারিত সুযোগের বিষয়ে কানাডার ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
জি-আই-এফ-এসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন ওয়েব তার বক্তব্যে বলেন যে, কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী কৃষি খাদ্য এবং জৈবপ্রযুক্তি বাস্তুসংস্থান-সহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষি সংক্রান্ত কোম্পানি ও খাদ্য উৎপাদনের নামকরা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। তিনি আরো বলেন যে, বাংলাদেশের সাথে আমাদের টেকসই খাদ্য সুরক্ষা অংশীদারিত্ব ও বাংলাদেশ, সাস্কাচুয়ান এবং কানাডার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সম্পর্ককে আরো উন্নত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
যৌথ গবেষণা সহযোগিতা ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ও জি আই এফ এস-এর মধ্যে অব্যাহত যৌথ বহুমুখী গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। কৃষি, খাদ্য ও জৈব-প্রযুক্তি বিষয়ে সাস্কাচুয়ানের অর্জিত বিশেষ উন্নত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কৃষকের আয় বৃদ্ধিকরণ, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব মোকাবেলা, এস ডি জি-এর লক্ষ্য অর্জনসহ ক্ষুধামুক্ত ও নারীর ক্ষমতায়নকে জোরদার করাই এই যৌথ সহযোগিতার মূল উদ্দেশ্য।
কৃষি খাদ্য রপ্তানিতে কানাডার সাস্কাচুয়ান প্রদেশ অগ্রণী ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে ২০১৯ সালে ১২.৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে। সাস্কাচুয়ান প্রদেশ ২০১৯ সালে ৫৮৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করে। বাংলাদেশ এখন শীর্ষ ১০ টি রপ্তানি বাজারগুলির মধ্যে একটি। সাস্কাচুয়ান হতে বাংলাদেশে প্রধান রপ্তানি সামগ্রী হলো গম, সয়াবিন, মসুর, ডাল এবং ক্যানোলা বীজ।
১৯৭২ সালে কানাডা এবং বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের সেমিনার বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। উভয় দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরও জোরদার করার সুযোগ রয়েছে বলে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় আরও উন্নত করার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।।