প্যারিসে ভয়াবহ সিরিজ সন্ত্রাসী হামলায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে এটাই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।
হামলার পর প্যারিসে জরুরি অবস্থা জারি করে অতিরিক্ত দেড় হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সীমান্ত।
এই ঘটনাকে ফ্রান্সের জন্য ‘নজিরবিহীন’ বলেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলা শুধু ২১ শতকের ব্যাপার না। সন্ত্রাসী হামলার প্রায় ২০০০ বছরের রক্তাক্ত ইতিহাস রয়েছে ফ্রান্সের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলাগুলো দেখে নেওয়া যাক-
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ফ্রান্সের ব্যাঙ্গ পত্রিকা শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। মুখোশধারী দুই হামলাকারী অফিসে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালালে পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকসহ ১১ জন নিহত হয়।
ওই ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। পরে হামলাকারী দুই ভাই চেরিফ ও কাউসি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
শার্লি হেবদো ঘটনার আট মাস বাদেই আবার সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে যায় ফ্রান্স। প্যারিসের একটি ট্রেনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এক বন্দুকধারী। তবে তিন আমেরিকান, এক বিট্রিশ ও এক ফরাসির নাগরিকের চেষ্টায় সেই দফা বেঁচে যায় প্যারিস।
পরে বন্দুক, ২৭০ রাউন্ড গুলি ও ব্যাপক বিস্ফোরকসহ ২৬ বছর বয়সী এক মরক্কোর নাগরিককে আটক করে পুলিশ। তখন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ বলেছিলেন, ‘এই হামলা সংগঠিত হলে ফ্রান্সের জন্য এটা হতো ভয়াবহ।’
আইয়ুব এল-খাজ্জানিকে আটকের পর কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ঘটনার অল্প সময় নিজের সেলফোনে জিহাদি ভিডিও দেখছিলেন তিনি।
২০১২ সালের মার্চে আরেকটি সন্ত্রাসী হামলা হয় ফ্রান্সে। একটি ইহুদী স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় তিন শিশু, একজন শিক্ষক ও তিন প্যারাসুট বাহিনীর সৈনিক নিতহ হয়। ওই হামলাকারীর জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার সঙ্গে যোগযোগ ছিলো বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
২০১৪ ও ২০১৩ সালে আরো দুটি হামলায় এক সেনা ও তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়।
চলতি বছরের গোড়ায় শার্লি হেবদোতে হামলার আগে পত্রিকাটির অফিসে ২০১১ সালেও একবার হামলা হয়েছিলো। ওই বছরের ২ নভেম্বরের হামলায় অবশ্য কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
১৯৯৫ সালের ২৫ জুলাই প্যারিসের পাতাল রেলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। তখন বোমা হামলায় আট জন নিহতের পাশাপাশি দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়। ওই হামলা আলজেরিয়ার ‘আর্ম ইসলামিক গ্রুপ’ চালায় বলে অভিযোগ আছে।
১৯৭০ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় বহু মানুষ আহত হয়। আর ১৯৮০ সালে প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে এক বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে প্রথম সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে ১৯৬১ সালে। প্যারিসের স্টার্সবার্গে একটি ট্রেনে বোমা হামলায় ২৮ জন নিহত হয়।