রিও অলিম্পিকে খেলা নিয়ে বড়সড় সংশয়ও তৈরি হয়েছিলো, পিঠের ইনজুরির কারণে অলিম্পিকের ট্রায়াল থেকে নিজেকে সরিয়েও নেন বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্ট। কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি, ঠিকই রিও অলিম্পিকে পৌছে হুঁশিয়ারি বার্তা দেন গণমাধ্যমকর্মীদের।
বিমান বন্দরে নেমেই তিনটি স্বর্ণই জয়ের হুংকার দিয়ে জ্যামাইকান স্প্রিন্টার বোল্ট বলেছিলেন, ‘আসন্ন অলিম্পিক নিয়ে আমি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। এটুকু বলতে পারি ১০০ মিটার, ২০০ মিটার এবং ৪x১০০ মিটারে গত দু’বারের মতো তিনটি স্বর্ণই জিতবো আমি।’
ঠিকই কথা রেখেছেন বোল্ট, ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে, ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের পর সোমবার রিও অলিম্পিকেও ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জয় করলেন উসাইন বোল্ট। ৯ দশমিক ৮১ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হন জ্যামাইকান বোল্ট।
বোল্ট সম্পর্কে গ্রেট ব্রিটেনের সাবেক দৌড়বিদ ক্রেইগ পিকারিং বলছলিনে, ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা হওয়ায় বোল্ট জন্মগত ভাবেই সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। ‘অতিরিক্ত লম্বা পা হওয়ায় শুরুতে গতি তুলতে পারে না সে। কিন্তু যখন গতির শীর্ষে পৌঁছে যায় তখন তার গতি হয় সবার চাইতে বেশি, কারণ লম্বা পা থাকার দরুন অন্যদের চাইতে কম ধাপ দিলেই অন্যদের সমান বা বেশি গতি সে পায়’।
এবারের রিও অলিম্পিকের ১০০ মিটার স্প্রিন্টেও তাই হলো, শুরুতে বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিলেন, তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকার জাস্টিন গ্যাটলিনের পেছনেতো ছিলেনই। বোল্ট আর গ্যাটলিনের মাঝে ছিলেন আরো তিন জন। কিন্তু কি এক অদ্ভুত মন্ত্রে শেষের দিকে গতিদানব বোল্ট চার জনকেই পেরিয়ে গেলেন চিতার ক্ষিপ্রতায়।
অলিম্পিকের সব থেকে আকর্ষণীয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। আর গেল দুই আসর ধরে এই রাজ্যের অবিসংবাদিত রাজা উসাইন বোল্ট। ২০০৮ সালে ৯ দশমিক ৬৯ সেকেন্ডে দৌড়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন বজ্রবিদ্যুৎ। এর পরের বছরেই আবারো তুলকালাম। বার্লিনে অ্যাথলেটিক্স বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ভাঙ্গেন নিজের রেকর্ড।
রেকর্ড ভাঙ্গা গড়া যেন বোল্টের কাছে ছেলে খেলা। আটলান্টায় ১৯৯৬ সালে মাইকেল জনসন ১৯.৩২ সেকেন্ডে দৌড়ান ২০০ মিটার। সেই সীমাও বোল্ট কমিয়ে এনেছেন ১৯ দশমিক ১৯ এর কোটায়। আসলে বোল্ট যেখানে উপস্থিত থাকেন, লড়াইটা সেখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের জন্যই হয়।
২০০৮ সালে বেইজিং ও ২০১২ সালে লন্ডনে ১০০, ২০০ ও ৪*১০০ মিটার রিলেতে জয়ী বোল্টের অলিম্পিক সোনা হলো ৭টি। এই আসরে ২০০ আর ৪*১০০ মিটারের সোনা জিতলে হবে ঐতিহাসিক ‘ট্রিপল ট্রিপল’।
বয়সের ভারে এখন অনেকটাই ক্লান্ত জ্যামাইকান এই দৌড়বিদ। বোল্ট নামক এই গতির নক্ষত্রটি বিশ্ব ক্রীড়া জগতের আকাশে দ্বীপ্তমান তারকা হয়ে জ্বলে থাকুক আরো অনেকটা সময় এই প্রত্যাশা বিশ্বের কোটি কোটি বোল্ট ভক্ত ক্রীড়ামোদীদের।