চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দেশ ভালো চলছে, তবু মানুষের মনে সংশয়-শঙ্কা

আজকাল রাজধানীকে কম বেশি অস্থির শহর মনে হয়। প্রতিযোগিতাময় জীবন ঘরে বাইরে। সে তুলনায় দেশের অন্যান্য অঞ্চল বিশেষ করে, মফস্বল শহরকে বেশ লাগে। চারদিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। সারাদেশের রাস্তা ঘাট সংস্কার হচ্ছে ক্রমাগত। আবার তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে এখন ঢাকার বাইরেও ফাস্টফুড আর আধুনিক পোশাকের দোকান চোখে পড়ার মত। মানুষের হাতে মোবাইল ইন্টারনেট। সব মিলিয়ে সরকারের উন্নয়ন দৃশ্যত। তথাপি কোথাও যেন একটা সংশয় আর শঙ্কা জনগণের ভাবনা চিন্তায়।

আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে তরুণ সমাজ নিয়ে পরিবার সমাজ চিন্তিত। রাজনৈতিক সন্ত্রাস এখন নাই। কিন্তু ইন্টারনেটের অপব্যবহার, মাদক সন্ত্রাসকে দমন করা যাচ্ছে না। আবার নেট থেকে জুয়া,গেমস সহ নানা ধরনের খারাপ বিষয়গুলো নীরবে ধ্বংস করছে তরুণদের।

অর্থনৈতিকভাবে আয় যেমন বেড়েছে তেমনভাবে ব্যয়। বাজার ব্যবস্থায় গা সওয়া মনোভাবের কারণের ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। এ অবস্থা শহর গ্রাম সর্বত্র। ব্যাংকিং খাতের লোটপাট চলমান। বিদেশে টাকা পাচার সে সাথে মধ্যবিত্তের ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ হ্রাস নিয়ে মানুষ হতাশ।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এর পাশাপাশি মানবিক উন্নয়নটা নিম্নমুখী। আর সে কারণে একটা সংশয় সাধারণ মানুষের মাঝে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনীতির হিসেব করাটা মুশকিল। আবার সাদাচোখে এর মন্দটা বলা ও দৃষ্টিতে আনাটা অনেকের কাছে শোভনীয় নয়। কিন্তু দলকে সামলিয়ে চলতে হবে নিজ দায়িত্বে। দলের প্রত্যেকে ভাবতে হবে বর্তমান সময়ে নিয়ে।

সামাজিক মাধ্যমে নরসিংদীর নেত্রী পাপিয়াকে নিয়ে খুব শোরগোল চলছে। কিন্তু এমন পাপিয়ার ঘটনা এদেশে নতুন কিছু কি আসলে। তদবির তোষামোদের রাজনীতিতে পাপিয়ারা সকল আমলে ছিল। দেশের নেতা, আমলাদের থেকে কাজ আদায়ে এদের দেখা মিলে সচিবালয়, পাঁচ তারকা হোটেলের লবি,অফিসে অফিসে।

তবে দলের পদ পদবি ধারণ করে প্রকাশ্যে ধর পাকড় করাটা সহজ কোন কথা নয়। একজন পাপিয়া মুহূর্তে দলকে কুলষিত করার জন্য যথেষ্ট। তবে এ মহিলা এককভাবে অন্যায় করেছে তা কিন্তু নয়। সুতরাং তার পেছনের মুখোশধারীদের পরিচয় উন্মোচন করা প্রয়োজন। তা না হলে নতুন কোন পাপিয়ার জন্ম দিবে সুবিধাভোগী কীটগুলো। কদিন আগের ক্যাসিনো ঘটনার সম্রাট জেলে কিন্তু তার অন্তরালের ব্যক্তিরা মুক্ত বাতাসে তাদের যাপিত জীবনেই আছে। সেখানেও আওয়ামী লীগ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।

দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন দল নেই। স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফলে তাই বলে। আগামী চসিকের নগর নির্বাচনে ও এর ব্যতয় ঘটবে না। কারণ জনগণ মনে করে তাদের ভোট মূল্যহীন এ সরকারের আমলে।

বরং তারা সরকার, রাজনীতির লড়াই যুদ্ধকে এড়িয়ে যেতে চায়। তাদের চাওয়া নিজেরা কাজ করে খেয়ে পরে ভালো থাকাটা। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন থাকাতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা নিয়ে তারা আশাবাদী। কিন্তু দলের নামে নেতা কর্মীদের কর্মকাণ্ড ক্রমশ বিতর্কিত অবস্থান তৈরি করছে মানুষের মাঝে।

টেন্ডার, ব্যবসা বাণিজ্য সবখানে সরকার দলের আধিপত্য। একটা বিশেষ শ্রেণি ধনী হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি বা অন্যদলের ব্যক্তিরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে আশ্রয় নিচ্ছে আওয়ামী লীগে। যাদের হাইব্রিড বলে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এ হাইব্রিড নেতা কর্মীদের অনুপ্রবেশের পথ করে দিয়েছে আওয়ামী নেতা কর্মীরা। যা খাল কেটে কুমির আনার সামিল। আবার দলের অধিকাংশজন ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মনে করে। তাই তাদের ভুল বা অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে না এ চিন্তায় সুবিধামত ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।

একজন প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনার পাশাপাশি দলকে সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে সচেষ্ট থাকার ঘটনা বিরল। কিন্তু জন নেত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী, নেতা কর্মীদের কাজকে যতটা সম্ভব পর্যবেক্ষণ করেন। সকল প্রতিকূলতাকে সামল দিয়ে আগলে রেখেছেন দেশ ও দেশের মানুষকে। তবে তার এ পরিশ্রম আর দেশ প্রেমকে ক্ষমতার দাপটে নেতা কর্মীরা মূল্যায়ন করতে অক্ষম।

কথায় আছে, ‘সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশি। ‘ দেশের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী নিয়ে এমন ই প্রতিক্রিয়া। নীরব চাঁদাবাজি, পার্সেন্টস,কাজের ভাগ বাটোয়ারা, হুমকি ধমকি, বিচার সালিশে দলীয় প্রভাব হতবাক করে দেয়।

আর এসব দেখে দলের ভেতরের প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি সহ আত্মনিবেদিত সর্মথকরা শঙ্কিত হয়। কারণ ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয়৷ আওয়ামী লীগ নিজেকে সংশোধিত করতে হবে। তা না হলে জনগণ তাদের হালখাতাতে যোগবিয়োগে ছাড় দিবে না।

সুতরাং সরকারের উন্নয়নকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের জীবনকে অজানা সংশয় আর শঙ্কা মুক্ত করতে হবে। আর এর জন্য নেতাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে শুনতে হবে জনগণের অভিব্যক্তি। তবে এ কাজটি করতে হবে নিজেকে জনগণের একজন মনে করে তাদের সাথে মিশে গিয়ে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)