২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১ লাখ টাকা থেকে ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক চলছে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ক বিতর্কের প্রতি ইঙ্গিত করে ফেসবুকে লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
মোহাম্মদ এ আরাফাত ফেসবুকে লিখেছেন,
“কিছু কিছু ব্যাংকে অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছে এটা সত্যি কথা। কিন্তু এটাও সত্যি যে সরকার প্রতিটি বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কেউই ছাড় পাবে না। যদিও আমরা অতীতে দেখেছি বিএনপি-জামায়াত শাসন আমলে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকটি পুরো ধ্বসে গেল, কোন আইনি ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। বর্তমানে যেখানেই অনিয়ম হচ্ছে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অথচ, কিছু অপশক্তি প্রতিনিয়ত অপপ্রচার করে যাচ্ছে। ‘লুটেরা চক্র’ শব্দটা এখন একটা গল্প হয়ে গেছে। সকল যুক্তি যেখানে হারিয়ে যায়, সেখানেই চলে আসে এই শব্দের ব্যবহার। পদ্মা সেতু নিয়েও এরকমই গল্প ফাঁদা হয়েছিল। সুশীল সমাজ আর বিএনপি-জামাত-বামাত দল বেঁধে মিথ্যা প্রচারনায় নামলো। কিন্তু দেখা গেল কি? কানাডিয়ান কোর্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিলো। তথ্য প্রমান আর যুক্তি যে সমাজে নাই, আছে শুধু কথার ফুলঝুড়ি সে সমাজ এগিয়ে যায় না।
এর আগে সব ধরনের আমানতেই (এমনকি ১,০০,০০০ টাকার নীচে আপনার ২০,০০০ হলেও) ৫০০ টাকা শুল্ক ছিলো। নতুন প্রস্তাবে ১,০০,০০০ টাকার নীচের আমানতে এটা সম্পূর্ন প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতকারীর শতকরা ৮০% ভাগের আমানত ১,০০,০০০ টাকার নীচে।
সরকার এই বাজেটে কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, দিনমজুর, রিক্সাচালক, শ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মীসহ এই ৮০ ভাগ ডিপোজিটরদের Excise Duty রহিত করেছেন। যা আগে ছিল ১৫০/- কিংবা ২৫০/-“…….
তাহলে যারা “সরকার ব্যাংকে আমার জমা টাকা সব নিয়ে গেল” বলে চেঁচামেচি করছেন তাঁরা কারা? সরকার তো দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির স্বার্থই সবার আগে দেখবে। তাই না ?
৮০% গরীব মানুষকে এখন কোন পয়সা দিতে হবে না। এটা কি খুব খারাপ হলো ?
আমানতের উপর excise duty থাকা উচিত কি না, এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আপনি তুলতেই পারেন। কিন্তু এটাতো নতুন নয়। আগেও ছিল। শুধু গরীব মানুষদের এটা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে আর যাদের অপেক্ষাকৃত বেশী টাকা আছে তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। মৌলিক প্রশ্ন উঠিয়ে যদি বলেন যে Excise Duty আমানতের উপর থাকাই উচিত না, আমি আপনার সাথে একমত হব এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদনও করবো এটিকে উঠিয়ে দেয়ার জন্য।
কিন্ত, আপনার কাছে আমার মৌলিক প্রশ্ন থেকেই যাবে, দেশের গরীব মানুষ যখন এই কর দিচ্ছিল আপনি তখন কথা বলেন নি কেন? তাহলে কি দেশ চলবে শুধু মাত্রই ২৫ লাখ ফেইসবুক ব্যাবহারকারীদের স্বার্থই শুধু রক্ষা করে, যারা চাইলেই ‘হাউকাউ’ বাঁধাতে পারে ???? আসলে আপনারা সবাই স্বার্থপর। দেশের বেশীরভাগ মানুষ সরব হতে পারে না, তাই শেখ হাসিনাকেই তাদের স্বার্থ চিন্তা করতে হয়।”
নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী এক লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা আবগারি দিতে হবে। এ ছাড়া ১০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে আড়াই হাজার টাকা, এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটির ওপরে ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা আবগারি দিতে হবে।
বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ১ লাখ টাকার ওপরে যাদের সম্পদ আছে তারা যথেষ্ট সম্পদশালী।