‘রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ?’ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন প্রশ্ন রেখে আদালত বলেছেন, দেশের সাধারণ জনগণ এমন রাজনীতি চায় না।
১৪ বছর আগে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এছাড়া এ মামলার আসামি ১১ সরকারি কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে বুধাবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত রায় ঘোষণা করেন।
আলোচিত এই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। ‘শেখ হাসিনাকে হালকা নাস্তা করানো হবে’, এই উদ্ধৃতি দিয়ে দেশিয় জঙ্গি সংগঠনের কতিপয় সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সহয়তায় হামলা করে।
তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের সহয়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় এমন স্পেশাল মারণাস্ত্র ,আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটানো হয়। প্রশ্ন উঠে কেন এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার? রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? শুধু আক্রমণই নয় দলকে নেতৃত্ব শূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা।
রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদলের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে দলই থাকবেন, বিরোধী দলের প্রতি তাদের উদার নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটেই গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়। দেশের সাধারণ জনগণ এই রাজনীতি চায় না। সাধারণ জনগণ চায় যেকোন রাজনীতি দলের সভা, সমাবেশে যোগ দিয়ে সেই দলের নীতি, আর্দশ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ধারণ করা। আর সেই সভা সমাবেশে আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণকে হত্যার এই ধারা চালু থাকলে পরবর্তীতে সাধারণ জনগণ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়বে।
আদালত সিলেটের শাহ জালাল (র) এর মাজার শরীফ ঘটনার, সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়ার ওপর নৃশংস হামলার, রমনা বটমূলের সংগঠিত বোমা হামলার এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস বর্বর রচিত এই হামলার পুনরাবৃত্তি চায় না।’’
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতা-কর্মী।
বুধবার ওই গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।