চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দেশের প্রতিটি পরিবারের সদস্য এখন বিকাশ

দেশে মোবাইল আর্থিক সেবার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে দাঁড় করাতে নিরলস পরিশ্রম করেন উদ্যোক্তা কামাল কাদীর। তার ফলশ্রুতিতে ২০১১ সালের ২১ জুলাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় বিকাশের। নতুন নতুন সেবায় বিকশিত হতে থাকে বিকাশ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিমালা মেনে চলায় এবং নিয়মিত উদ্ভাবন ও নতুন সেবা আনতে পারায় বিকাশ আজ দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আস্থার জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।

যখনই প্রয়োজন তখনই গ্রাহককে তার অর্থ ব্যবহারে আরো সক্ষম ও স্বাধীন করতে বিকাশ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বাইরে থাকা বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে তো বটেই, শহর ও গ্রামের প্রতিটি পরিবারের কাছেই এখন পরিচিত একটি নাম ‘বিকাশ’। টাকা পাঠানোর সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বিকাশ করা’।

বিকাশ দেশের সেই সব মানুষকে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছে, যারা ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ এক দশক পূর্ণ করল গত ২১ জুলাই।

বিকাশে ১০ বছরের পথচলা কেমন ছিল এ প্রশ্নের উত্তরে কামাল কাদীর বলেন, শুরু থেকে লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের আর্থিক লেনদেনকে সহজ করা, তাদের কষ্টগুলোকে কমিয়ে আনা। সরকারের দিক থেকেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি নির্দেশনা ছিল এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতির মধ্যে আনা। নতুন উদ্যোগ হওয়ায় শুরুতে কাজে চ্যালেঞ্জ ছিল যেগুলো পরবর্তী সময়ে দূর হয়েছে। আমাদের প্রথম গ্রাহকেরা এমন সব মানুষ ছিলেন, যারা ব্যাংক সেবার বাইরে। সহজ লেনদেনের উপায় হিসেবে গ্রাহকদের মধ্যে নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি জনপ্রিয় করে তোলা হয়। এজেন্টের কাছে না গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন করার পদ্ধতির ওপর আমরা জোর দেই। আবার লেনদেনে ব্যাংককে কীভাবে যুক্ত করা যায়, সেটিও করা হয়েছে। সেবার মান বা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হয়নি। এভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়েছে বিকাশ।
১০ বছরের যাত্রায় বিকাশের প্রাপ্তি প্রসঙ্গে কামাল কাদীর বলেন, বিকাশ ব্যবহার করে গ্রাহকদের একদিকে আয় বেড়েছে, অন্যদিকে সঞ্চয় বেড়েছে। এর ফলে আয় ও ভোগের মধ্যে ভারসাম্য রেখে পরিবারের কল্যাণ সাধিত হয়েছে এবং যেকোনো অভিঘাতের সময় ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়েছে। সামাজিক খাতে, যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এবং বিশেষত নারীর ক্ষমতায়নে বিকাশ ব্যবহারের প্রভাব অত্যন্ত উৎসাহজনক। অর্থ স্থানান্তর অথবা বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে মুঠোফোন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে লেনদেনের ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে বিকাশ অর্থনীতির নৈপুণ্য বাড়িয়েছে। বিকাশের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে চারটি বিষয় – বিনিয়োগের গুণগত মান, প্রযুক্তি, বিতরণ নেটওয়ার্ক ও কমপ্লায়েন্স। জীবনমান উন্নয়নের এই পথযাত্রায় মানুষের আস্থা আর বিশ্বাস অর্জন করে বিকাশ এখন বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের সদস্য। এমএফএস এর সব কমপ্লায়েন্স মেনে বিকাশ এখন ৫ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহকের এক বিশাল পরিবার যেখানে প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত পদ্ধতিতে পরিচয় নিশ্চিত করে যুক্ত হচ্ছেন আরও নতুন গ্রাহক।

বিকাশের শুরুর গল্পটা কেমন ছিল এ প্রশ্নের উত্তরে কামাল কাদীর বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকটি মোবাইল ফোন একেকটি কম্পিউটার এর মতো। এতো বড় একটি জনসংখ্যাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, একটি মোবাইল আরেকটি মোবাইলের সাথে কীভাবে কানেক্ট করে মাঝখানে একটি অর্থ লেনদেনের প্লাটফর্ম তৈরি করা যায় তা ভাবছিলাম। সে চিন্তা থেকেই বিকাশের সূচনা। ব্যাপারটি বলা যত সহজ করা তত সহজ ছিল না। ২০০৮ সালে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে মোবাইল মানি’র আইডিয়াকে বুঝতে চেষ্টা করলাম। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার তখন প্রযুক্তি নির্ভর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দিকে নজর দিচ্ছে। এ সময় বিশেষ আগ্রহ দেখালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সব দিক থেকেই কাজ এগোল। বড় ভাই ও আরও দুজনকে নিয়ে শুরু করলাম মানি ইন মোশন এলএলসি নামে একটি কোম্পানি। যুক্ত হলো ব্র্যাক ব্যাংক। নীতিমালায় ছিল একটা ব্যাংকের ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকতে হবে যাতে সমস্যা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিকাশের যাত্রা শুরু ২০১১ সালের ২১ জুলাই। এরপর পর্যায়ক্রমে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আইএফসি বিকাশের অংশীদার হয় ২০১৩ সালে। পরের বছর বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং ২০১৮ সালে চীনের আলিবাবা গ্রুপের অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল (বর্তমান অ্যান্ট গ্রুপ) বিকাশের অংশীদার হয়।

বিকাশের জন্য কোন কাজটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল এ প্রসঙ্গে কামাল কাদীর বলেন, টেলিফোন নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার পাওয়া এবং সব ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করতে পারাটা ছিল বিকাশের জন্য বড় অগ্রগতি। আগে একটা ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে হতো। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। এর সাথে নিরাপত্তা ও দক্ষতার বিষয়টিও জড়িত ছিল। আমরা এ বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরার পর নীতিমালায় পরিবর্তন হলো। এরপর আসব অ্যাপ এ যাওয়ার কথা। আমরা সব সময় গ্রাহকের কথা চিন্তা করি। তাদের চাওয়া ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের অনেক গ্রাহকের ভাষাগত সীমাবদ্ধতা আছে। গ্রাহকের যাতে সুবিধা হয় সেজন্য মাতৃভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া চোখে দেখার একটি গুরুত্ব আছে। অ্যাপ থাকায় এই দুই ক্ষেত্রেই গ্রাহকের অনেক সুবিধা হয়েছে।
বিকাশের মতো একটি সেবা কেনো প্রয়োজন এ প্রসঙ্গে কামাল কাদীর জানান, ব্যাংকিং সেবা অবকাঠামোগত কারণে নিম্ন-আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না। একেকটি গ্রাহক সেবার পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয় তার তুলনায় ওই সেবা থেকে অর্জিত আয় অনেক কম। ফলে দেশে এই আর্থিক সেবার জন্য এমন একটা কিছু প্রয়োজন ছিলো যার অবকাঠামোগত খরচ কম এবং সেই সেবার ইকোসিস্টেম প্রস্তুত করা সহজতর। বিকাশ এমনই একটি সেবা। এর যখন শুরু ততক্ষণে দেশের সাধারণ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে। আর মোবাইল ফোনের ব্যবহারের সাথে সাথে বিকাশের গ্রাহকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এতে উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতি আমাদের এই সেবাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার পথে অনেক সুবিধা দিয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সকল নীতিমালা মেনেই বিকাশ তার আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে যা এখন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি অতি প্রয়োজনীয় সেবায় পরিণত হয়েছে।

বিকাশের লেনদেনের খরচ প্রসঙ্গে কামাল কাদীর বলেন, এখন বিকাশের প্রায় তিন লাখ এজেন্ট আছে সারাদেশে। টাকা উত্তোলন বা ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে যে আয় হয়, তার ৭৭ শতাংশই এজেন্ট ও পরিবেশককে দেয়া হয়। সাড়ে ৮ শতাংশ পায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর। বাকি সাড়ে ১৪ শতাংশের ওপরই নির্ভর করছে বিকাশের ব্যবসা পরিচালনা, বেতন ভাতা, বিপণন, যোগাযোগ, প্রযুক্তি ব্যয়, লাভজনকতা সব কিছু। তারপরেও আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি গ্রাহকের খরচ কমানোর। এ জন্য আমরা প্রিয় নম্বর বলে একটি নতুন সেবা চালু করেছি। এতে একজন গ্রাহক ৫টি নম্বরে বিনা খরচে অর্থ পাঠাতে পারবেন। প্রতি মাসেই এই নম্বর বদল করাও যাচ্ছে। অনেক গ্রাহকই এটা ব্যবহার করছেন। একজন গ্রাহক যত বেশি ডিজিটাল মানি ব্যবহার করবেন, তার খরচও তত কমে আসবে।

এছাড়া বিকাশ এ টাকা জমা রাখলে গ্রাহকরা অনেকভাবেই লাভবান হতে পারেন। যেমন গ্রাহকের টাকা একটা নিরাপদ জায়গায় থাকে। তিনি যখন তখন যে কোনো প্রয়োজনে টাকা পাঠাতে পারেন। বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখলে গ্রাহক ইন্টারেস্টও পাচ্ছেন।

প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে কামাল কাদীর বলেন, বিকাশের আগে এই সেবা শুরু করেছিল ডাচ-বাংলা ব্যাংক। তবে মোবাইল আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে বাজারে যত ধরনের সমস্যা আছে, তার সমাধানের ক্ষেত্রে বিকাশ মূল ভূমিকা পালন করেছে। এজেন্ট নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন নিয়ে এজেন্ট ও গ্রাহকদের ধারণা দেওয়া, প্রতারণা প্রতিরোধ, সবই বিকাশের করতে হয়েছে। আমরা প্রতারণার প্রতিরোধে একজন মনস্তত্ত্ববিদকেও নিয়োগ দিয়েছিলাম। তার কাছ থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখেছি। প্রতারকদের সঙ্গে কথা বলা চালিয়ে যাওয়া যাবে না, ফোনের লাইন কেটে দিতে হবে। কথা চালিয়ে গেলেই অনেক কথার ফাঁদে আটকে যান। এরকম একটি বিজ্ঞাপনচিত্রও আমরা প্রচার করছি। আমাদের প্রত্যাশা অন্যরাও একইভাবে এগিয়ে আসবেন।

বিকাশ এর মালিকানা ও তাদের ভূমিকা নিয়ে কামাল কাদীর জানান, ব্র্যাক ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এসএমই) কেন্দ্র করে কার্যক্রম চালায়। আবার আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ব্র্যাক ব্যাংক থাকার ফলে আমরা একটি ভালো পরিচালনা ব্যবস্থা পেয়েছি এবং অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় সংস্কৃতিও তাদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। মানি ইন মোশন এলএলসি বিকাশের শুরুর উদ্যোক্তা। মোবাইল আর্থিক সেবার ব্যবসাটি ভালো জানে, এমন লোকদের তারা জড়ো করেছে। মোবাইল কোম্পানিদের সঙ্গে মানি ইন মোশনের একটি সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল। এছাড়া কেনিয়ার মোবাইল মানি কোম্পানি এম-পেসার প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস হিউজকেও মানি ইন মোশন বিকাশের পরিচালক হিসেবে নিয়ে এসেছে। এছাড়া রয়েছে আইএফসি, যারা বিশ্বব্যাপী ভালো ও দক্ষ পরিচালনা ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। তারা আসার পর একটি ভালো করপোরেট পরিচালনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গবেষণা এবং এর বিদ্যমান প্রবণতা বা ধারা বিশ্লেষণে সম্পৃক্ত। বিশ্বের কোথায় কী ধরনের সেবা চলছে এবং তার ফল কী এ নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে তারা। ২০১৮ সালে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয় চীনের আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল (বর্তমান নাম – অ্যান্ট গ্রুপ)। তারা সেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। সব মিলিয়ে আমাদের বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি সম্পৃক্ত। তবে তারা কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করেন না। ভবিষ্যতেও হয়তো আমরা বিশ্বের সেরা বিনিয়োগকারীদেরই আমন্ত্রণ জানাব।

একটি ব্যাংকের সহযোগী হয়ে থাকাটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রসঙ্গে কামাল কাদীর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সেহেতু একটি ব্যাংকের সঙ্গে থাকতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে ব্যাংকের ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকার বিষয়টি ছিল। এখন বিকাশ সরাসরি রিপোর্ট করছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বিকাশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে গ্রাহকের টাকার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ ট্রেজারি বিলে রাখতে হবে। আমাদের এর চেয়ে বেশিই রাখা আছে। আর বাকি অর্থ কোনো একটি ব্যাংকে না রাখার লক্ষ্যে আমাদের পর্ষদ একটি ট্রেজারি পলিসিও তৈরি করে দিয়েছে। আমানত-ঋণের অনুপাতের ভিত্তিতে কোন ব্যাংকে কী পরিমান অর্থ রাখতে পারব, সেটাই এই নীতিমালার উদ্দেশ্য। এসব করা হয়েছে যাতে করে গ্রাহকের টাকা কোনো ধরনের ঝুঁকির মধ্যে না থাকে। ১৬টি ব্যাংকে আমরা এখন গ্রাহকের টাকা রাখছি। সুতরাং আমার মনে হয় ৫১ শতাংশ মালিকানা রাখার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনর্বিবেচনা করে দেখতে পারে। তবে আমি অবশ্যই মনে করি এই খাত পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারাই।

করোনা মহামারীর এ সময়টাতে বিকাশের কার্যক্রম সম্পর্কে কামাল কাদীর বলেন, করোনার সময় মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেন স্বাভাবিক রেখে জীবন চলমান রাখতে বিকাশ হয়ে উঠেছিল বড় বন্ধু। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি সব অনুদান ও অর্থসহায়তা স্বচ্ছতা, দ্রুততা ও নিরাপত্তার সঙ্গে সঠিক উপকারভোগীর কাছে পৌঁছায় বিকাশ। করোনার সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন বিতরণেও বিকাশ সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে। করোনার মতো পরিস্থিতে বিকাশের মতো ডিজিটাল সেবার গুরুত্ব সবাই অনুধাবন করেছেন। বিকাশও প্রত্যেক গ্রাহককে তার প্রয়োজন ও ব্যবহার অনুসারে ডিজিটাল লেনদেনের সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা দিতে আধুনিকতম প্রযুক্তির সংযোজন এবং সেবার পরিধি বাড়ানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়ায় শিগগিরই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য পার্সোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট সেবা যুক্ত হবে। এই সেবার মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্তে বিকাশের মাধ্যমে সব ধরনের কেনাকাটার অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। ফলে দৈনন্দিন সবকিছু ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে কেনার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া বিকাশ গ্রাহকদের জন্য সিটি ব্যাংকের জামানতবিহীন তাৎক্ষনিক ডিজিটাল ঋণ সুবিধার যে পাইলট প্রকল্প তা এ বছরই বানিজ্যিকভাবে চালু হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের জন্য সঞ্চয়সহ আরও নানা ধরনের সেবা আনার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।

বিকাশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে কামাল কাদীর বলেন, আমি চাই দেশের সব সাধারণ মানুষের জন্য বিকাশ হোক লেনদেনের অপরিহার্য সমাধান। আমরা চাই সব নিয়মকানুন মেনেই লেনদেন আরও অনেক সহজ হবে। হয়তো দেখা যাবে, একজন গ্রাহক ফোনটা মুখের সামনে ধরলেন, আর লেনদেন সম্পন্ন হয়ে গেল। এতে হয়তো নিয়মকানুন মানা হলো কি না, তা দৃশ্যমান হবে না। কিন্তু এমন একটি ব্যবস্থা থাকবে, যাতে পেছনে আসলে সবকিছুই সম্পন্ন হয়ে যাবে। আমরা সরকারের কর-রাজস্বের একটি বড় উৎস হতে চাই। আমরা নিজেদের মধ্যে একটি ভালো কর্মপরিবেশও বজায় রাখতে চাই। যেমন কম্পাসের উত্তর দিক একটাই, আমাদের লক্ষ্যও তেমনই এবং আমরা কখনোই এ লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি। আমরা লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, তারপর সেখানে ধাপে ধাপে পৌঁছেছি। সেভাবেই এগিয়েছে বিকাশ। সামনের দিনেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।