বাংলা লেখার জন্য স্ট্যান্ডার্ড একটি কিবোর্ড তৈরির দাবি বহুদিনের। তবে কোন এক অদৃশ্য কারণে এটা এখনও হয়ে ওঠনি। এ কারণে ব্যবহারকারীদের ভুগতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে গুগলের কান্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট ও ড্রিম ডোর সফটওয়্যারের সিটিও ড. খান মোঃ আনোয়ারুস সালাম।
চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন দেশের তথ্য-প্রযুক্তির নানা দিকের সম্ভবনার কথা।
বাংলাদেশ কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ২০০০ সালের শুরুর দিকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেও মামলাজনিত কারণে তা আটকে যায়।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারুস সালাম বলেন, ‘আমি ওই সময়েই একটা স্ট্যন্ডার্ড বাংলা কিবোর্ড তৈরির জন্য তাগিদ দিয়েছিলাম। কিন্তু সফল হইনি।’
ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশে নিজেস্ব ভাষার জন্য কিবোর্ড থাকার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, ‘ভারত তার নিজেস্ব ভাষার জন্য আলাদা স্ট্যান্ডার্ড কিবোর্ড তৈরি করেছে। আমাদেরও উচিত ছিলো ওই সময়ে সকলকে একমত হওয়া। তখনই সকলকে সতর্ক করে বলেছিলাম, আমরা এখন যদি এটা করতে না পারি তাহলে আগামী ২৫-৩০ বছরের মধ্যে আমরা এটা পারবোনা। হয়েছেও তাই।’
কোনো স্ট্যন্ডার্ড বাংলা কিবোর্ড না থাকায় সাধারণ ব্যবহারকারীদের ভুগতে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। এক এক কোম্পানি তাদের ইচ্ছে মতো কিবোর্ড তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। সেটা ছেড়ে যখন ব্যবহারকারী অন্য ব্রান্ডের কাছে যাচ্ছে তখন আবারও তাদের নতুন করে অভ্যস্ত হতে হচ্ছে।
কলেজ ছাত্র অবস্থাতেই ইউনিকোড সাপোর্টেড ‘অক্ষর’ কিবোর্ড তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেওয়া আনোয়ারুস সালাম মনে করেন, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে মেধার কমতি নেই, তারা দেশের বাইরে ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তবে নিজেদের আরো যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ দেন এ আইটি বিশেষজ্ঞ।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে মেধাবৃত্তিতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া শেষে জাপানে গিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রীসহ অর্জন করেছেন পিএইচডি ডিগ্রী। জাপানের ইউইসি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালের ‘সেরা ছাত্র-গবেষক’ নির্বাচিত হন তিনি। তারপরে যুক্ত হন সার্চ-ইঞ্জিন জায়ান্ট ‘গুগল’ এর সাথে।
দেশে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সাথে সাথে দেশের বাইরেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার ভালো সুযোগ করেছে উল্লেখ করে তরুন আইটি বিশেষজ্ঞ আনোয়ারুস সালাম বলেন, ‘দেশের বাইরে এখন লেখা পড়া করার ভালো সুযোগ রয়েছে। স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে ইচ্ছে করলেই নিজেদের মেধাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে পারে।’
গুগল ট্রান্সেলেটরে ইংরেজি থেকে বাংলা করার যে সুবিধা, তা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে তরুন এই আইটি বিশেষজ্ঞের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে। গতবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রায় দু’লাখ বাংলা শব্দ যোগ করা হয়েছে গুগলের বাংলা শব্দ ভান্ডারে। বাংলাদেশে গুগল ডেভলপার্স গ্রুপ (ডিডিজি) এর কার্যক্রমেও আসে গতি।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করা তরুনদের কর্মক্ষেত্র বড় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি এমন একটি বিষয় যেটাকে পড়ে বিশ্বের সব জায়গায় কাজ করা সম্ভব। দিন দিন এ সেক্টরে কর্মক্ষেত্র বড় হচ্ছে। দেশের তরুনদের হতাশার কোনো কারণ নেই। তবে শুধু পড়ে পরীক্ষা পাশ করলেই হবেনা, নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে সবাই তাকে চিনে নেবেই।
এ সময়ে জনপ্রিয় অনলাইন ভিত্তিক বই বেচাকেনা ওয়েবসাইট রকমারি ডট কমের আগেই তিনি ভুবন ডট কম নামে বই বিক্রির ই-কমার্স তৈরি করেছিলেন। কিন্তু দেশের বাইরে থাকায় তা আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। তবে একইরকমের নানা প্রকল্প-সাইট দিয়ে দেশের আইটি তথা ই-কমার্স এগোচ্ছে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তরুন আইটি বিশেষজ্ঞ ড. খান মো: আনোয়ারুস সালাম।