বিপিএলের পঞ্চম আসরে শেষ চারে উঠতে পারেনি গতবারের রানার্সআপ রাজশাহী কিংস। মাঠের খেলায় দাপট ধরে রাখতে না পারলেও দলটির কিছু কিছু পদক্ষেপ চোখে লাগার মতো। দেশের ক্রিকেট উন্নয়ন ও পাইপলাইন সমৃদ্ধ করার ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে দল গঠন ও একাদশ নির্বাচনে। অন্যরা যেখানে স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটারদেরও বসিয়ে রাখছে সাইডবেঞ্চে সেখানে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারকে বিপিএলের মঞ্চে খেলার সুযোগ দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
আগের আসরে হঠাৎ করেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার আফিফ হোসেনকে। সেই তরুণ অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়ে বাজিমাত করেছিলেন। এবার খুলনা টাইটানসে খেলে দারুণ ব্যাটিং করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই অলরাউন্ডার। রাজশাহীর হয়ে এবার অভিষেক হয় নরসিংদীর তরুণ হোসেন আলী ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কাজী অনিকের। দুই পেসারই দুর্দান্ত বোলিং করে নিজেদের এক ধাপ উপরে নিয়ে গেছেন। বিপিএলের শুরুর কয়েকটি আসরে উপেক্ষিত জাকির হাসান, নাঈম ইসলাম জুনিয়র, নিহাদুজ্জমানের মতো তরুণরাও পেয়েছে রাজশাহীর জার্সিতে বিপিএল খেলার সুযোগ। যেটিকে উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবেই কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
টি-টুয়েন্টিতে যাদের প্রতি অন্য দলগুলোর আগ্রহ তুলনামূলক কম সেই মুমিনুল হক ও রনি তালুকদার রাজশাহীর ওপেনিং পার্টনার। সঙ্গে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমানের মতো তরুণরা তো আছেনই। স্কোয়াডে থাকা ১২ স্থানীয় ক্রিকেটারের মধ্যে ৫ ক্রিকেটারের বয়স ২০ পেরোয়নি।
বিপিএলের মতো প্রতিযোগিতামূলক আসরে রাজশাহী কিংস প্রতিবারই কেন স্থানীয় তরুণদের গুরুত্ব দেয় সেটি জানার চেষ্টা করেছে চ্যানেল আই অনলাইন। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদ আজিজুল হক তুলে ধরেন মালিকপক্ষ ও টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনার কথা, ‘তরুণ ক্রিকেটারদের উঠিয়ে আনা একটি উদ্দেশ্য। কৌশলগত ব্যাপারও এখানে রয়েছে। টি-টুয়েন্টি কিন্তু হাই ভোল্টেজ গেম। ইনটেনসিটি অনেক বেশি। এখানে ফিল্ডিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। গতবার আফিফ আমাদের জন্য বিশাল একটা পাওয়া ছিল। এখান থেকে গিয়ে সে এখন ভাল খেলছে। নিহাদ, হোসেন আলী, জাকির, অনিকের মতো তরুণ যারা আছেন তাদের জন্য বিপিএল খেলতে পারা অনেক বড় মোটিভেশন। সিমন্স, স্যামিদের কাছ থেকে তারা অনেক কিছু শিখেছে। এখান থেকে পারফরম্যান্স শুধু না, জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার জগতও পরিবর্তন হচ্ছে। নবীন খেলোয়াড়দের যত নেয়া যায় আমাদের জন্য ততই ভাল। তারা ভাল পারফর্ম করছে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নবীনদের মধ্যে যারাই সুযোগ পাচ্ছেন তারাই নিজেদের নিয়ে যাচ্ছেন পরের ধাপে। আজিজুল হকের মতে প্রত্যাশার চেয়ে ভাল খেলছেন অনেকেই, ‘ওদের কাছে খুব ভাল পারফরম্যান্স অনেকে প্রত্যাশা করে না। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ওরা করে যাচ্ছে। জাকির কয়েকটা ম্যাচে পর পর ভাল করেছে। হোসেন আলী খুব ভাল করছে। খুব জোরে বল করে। অনেক কিছু শেখার আছে এখনও। টিমের ট্রেনার, ফিজিও, কোচ, সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে অনেক টিপস পায়; এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওদের পারফরম্যান্সে আমরা গর্বিত। সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগেই ওরা খেলছে। চিন্তা-ভাবনা অনেক পরিণত হচ্ছে।’
নতুন খেলোয়াড় তুলে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি, ‘রাজশাহী কিংসে সামনেও তরুণদের দেখতে পাবেন, নতুন মুখ দেখতে পাবেন। সিলেকশনে যারা আছেন সারা বছর খেয়াল করেন কোন উঠতি খেলোয়াড় ভাল করছে। এসবের উপর ভিত্তি করেই দল বানানো হয়। এই স্ট্র্যাটেজি ধরে রাখার চেষ্টা করবো আমরা।’
দুই আসরে আফিফ, হোসেন আলীর মতো একেবারেই নতুন খেলোয়াড় তুলে আনা প্রসঙ্গে রাজশাহী কিংসের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘হোসেন আলীকে আমরা ড্রাফট থেকেই নিয়েছি। ওর সম্পর্কে টিম ম্যানেজম্যান্টে যারা আছেন তারা আগে থেকেই জানত যে অনেক জোরে বল করে। এভারেজ গতি ১৪০ এর মতো। ভাল দিক হল ও অনেক প্যাশনেট ও হার্ডওয়ার্কিং। ভবিষ্যতে ভাল করবে। বাংলাদেশের সেরা ফাস্ট বোলার হয়ে ওঠার যোগ্যতা ওর মধ্যে রয়েছে। আর গতবার টুর্নামেন্টের শেষের দিকে আফিফকে নিয়েছি। ওই সময়টায় যুব দলের হয়ে ভাল করছিল। আমাদের অফস্পিনারের প্রয়োজন ছিল। চিটাগংয়ের বিপক্ষে আমরা ওকে নিয়ে আসি। ৫ উইকেট নিল। ওখান থেকেই আমরা অনুভব করলাম তরুণরা ভাল করতে ক্ষুধার্ত থাকে। তাদের এই হাঙ্গারকে আমরা ক্যাপিটালাইজড করতে চাই।’
‘রাজশাহী কিংস’ নামটা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিত করার মনছবি আঁকছেন আজিজুল হক। যে কারণে দলীয় সংহতি ও সংঘবদ্ধতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে জানান তিনি, ‘আমাদের দলের বন্ডিং এবারও খুব ভাল। ক্যাপ্টেন স্যামি একজন গ্রেট মোটিভেটর। এছাড়া সিনিয়র প্লেয়ার, কোচিং স্টাফদেরও বিশাল অবদান আছে। টিমের অন ফিল্ড পারফরম্যান্স একদিনের একটা ব্যাপার। কিন্তু অফ দ্য ফিল্ড বন্ডিং খুব জরুরী।’
‘আমরা চাই যাতে টিম হিসেবে পারফর্ম করতে পারে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভাল হবে আশা করি। কিন্তু টিম পারফর্ম না করলে কঠিন হয়ে যায়। আমরা এক বছর-দুই বছরের জন্য আসিনি। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আন্তর্জাতিক লিগগুলোর ফ্র্যাঞ্চাইজি যেরকম হয়। আমরা চাই যে রাজশাহী কিংসের পরিচিতি হবে পুরো বিশ্বে। ক্রিকেটে যেমন সিডনি সিক্সার্স, মেলবোর্ন স্টারস, কেকেআর… একসময় রাজশাহী কিংসও তাদের কাতারে যাবে সেটা অন দ্য ফিল্ড ও অফ দ্য ফিল্ড পারফরম্যান্সের মাধ্যমে।’