পাকিস্তানি বর্বরদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে স্বাধীন দেশ এনে দেওয়া লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম তারামন বিবি। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যে কারণে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সম্মানজনক বীর প্রতীক খেতাব।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে লড়াই করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরুতেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করছি।
জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত পাকিস্তানি হায়েনাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে গিয়েছিলেন তারামন বিবি। চ্যানেল আই অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন: ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের একজন কিশোরী আমি। গ্রামের মেয়ে হিসেবে যে সময়টাতে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেই সময়টা কাটিয়েছি ভয় আর শঙ্কা নিয়ে। পাকিস্তানি নির্লজ্জ হায়েনাদের কথা মনে পড়লে এখনও আমার গা ঘেন্নায় রি রি করে ওঠে।’
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন: ‘আমরা যদি দেশ স্বাধীন না করতাম তাহলে আজ আমাদের অমানুষদের পাশে থাকতে হতো। তারা (পাকিস্তান হানাদার বাহিনী) আমাদের মানুষ বলে মনে করত না। দেশের এই বিজয় ভাইসা আসে নাই, এমনি এমনি আসে নাই। বড় কষ্ট কইরা এই বিজয় এনেছি। অনেক কষ্ট করে সোনার বাংলা স্বাধীন করেছি।’
হ্যাঁ, আমরাও বিশ্বাস করি এই স্বাধীন দেশ ‘ভাইসা’ আসে নাই। জাতির অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তানের জীবন, রক্ত, ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন দেশ, নিজস্ব পতাকা এবং মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা তাদের মর্যাদা কতটুকু রাখতে পেরেছি? তাদের আশা আকাঙ্খার বাংলাদেশ গড়তে কতোটা সচেষ্ট রয়েছি? তারামন বিবিকে হারানোর এই দিনে তা নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি।
আমরা বিশ্বাস করি, মৃত্যু কখনোই তারামন বিবিদের এদেশের মানুষের থেকে আলাদা করতে পারবে না। তারা চিরদিন এদেশের মানুষের হৃদয়ে থাকবেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তারামন বিবিদের অবর্তমানে তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং তাদের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। সরকারের পাশাপাশি সবাইকে যার যার জায়গা থেকে এজন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে আমরা মনে করি। তারামন বিবিকে হারানোর শোকাবহ দিনে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি, তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস পাঠ করে তারামন বিবিদের চেনার আহ্বানও জানাচ্ছি।