এক.
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা পেয়েছি পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি ভূখন্ড। একটি পতাকা। আর একটি জাতীয় সঙ্গীত, আমার সোনার বাংলা। বিজয় বছর ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চলল কিন্তু যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পরিচালনার হাল ধরেছিলেন সেই চ্যালেঞ্জগুলো কম-বেশি এখনো রয়েই গেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষের জন্যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং পুনর্গঠন ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেছিলেন। অবাক করা সত্যি হলো আমাদের রাজনীতিবিদরা ৪৫ বছর পরে এখনো সেই ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং পুনর্গঠন ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলোই মোকাবেলা করছে। যেমন, সাড়ে ৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে ২০১৬ সালে প্রায় ৩ কোটি মানুষের খাবারের যোগান দিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করতে হচ্ছে কিংবা আশ্রয়নসহ নানান প্রকল্পের মাধ্যমে সারাবছর জুড়ে দরিদ্র পরিবারগুলোকে পুনর্বাসিত করতে হচ্ছে। খন্ডিতভাবে সাফল্যের কথা হয়তো বলা যাবে কিন্তু এমন একটা সেক্টর গত ৪৫ বছরে তৈরি হয়নি যা নিয়ে বুকের ছাতি ১০ ইঞ্চি ফুলিয়ে গর্ব করা যায়।
দুই.
স্বাধীনতার পরপরই শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ করেন। উদ্দেশ্য ছিলো সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আয় বণ্টনের পুজিবাদী পদ্ধতির অবসান, উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানার উচ্ছেদ এবং উৎপাদন সম্পর্কে প্রাক-পুজিবাদী মার্কেনটাইল ও সামন্তবাদী কাঠামোর বিলোপ সাধন।
কিন্তু শিল্প-কারখানা জাতীয়করণের পর পরিচালনার জন্য যে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, সততা ও দেশপ্রেমমূলক অঙ্গীকার প্রয়োজন ছিলো সংশ্লিষ্ট শিল্প ইউনিটগুলোতে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তার মারাত্মক ঘাটতি থাকার কারণে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ও শিল্প ও কৃষি খাতের উৎপাদন স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়কাল যেমন, ১৯৬৯-৭০ এর চেয়েও কম হয়। এভাবে সরকারিকরণ করার সকল প্রাক- হিসেব নিকেশ সরকারিকরণের পর শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খায়। সেটি আরো ভয়াবহতার দিকে টার্ন নেয় যখন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করেন যে, সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করবে না। এভাবে বিদেশী বিনিয়োগের উপর বিধি-নিষেধ আরোপের ফলে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি আর্থিক দিক থেকে বহুমুখী সমস্যায় আক্রান্ত হয়। একদিকে নিজস্ব মানবসম্পদের দক্ষতার ঘাটতি ও দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে যুক্তদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং অন্যদিকে নিকট প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্র চীনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর শীতল মনোভাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবস্থাপনাগত অরাজকতাকে আরো উসকে দেয়। যার কারণে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং সরকারি হিসেবেই না খেতে পেরে ২২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, বেসরকারি হিসেবে যা ৩ থেকে ৫ লাখ।
তিন.
১৯৭৫ সালে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া নানামুখী ঘটনা একসময় ক্ষমতায় নিয়ে আসে সেনা অফিসার জিয়াউর রহমানকে। ১৯৭৭ সালের পর্যন্ত দেশ স্থিতিশীল ছিল না। ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়া উৎপাদন কর্মকান্ডে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব কমিয়ে বরং রাষ্ট্রকে ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকায় রেখে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার উপর জোর দেন। সেসঙ্গে তিনি রপ্তানি বৃদ্ধির উপরও জোর দেন। তিনি শিল্প কারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। বিদেশী বিনিয়োগকেও তিনি উৎসাহিত করেন। এলক্ষ্যে ১৯৮০ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাশ করা হয়। এতে বলা হয়, সরকার বিদেশী বিনিয়োগ দখল বা জাতীয়করণ করবে না। এতে আরো বলা হয়, জনস্বার্থে যদি কোনো বিদেশী শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করা হয় তাহলে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
কিন্তু জিয়াউর রহমান বিদেশী বিনিয়োগের পথ সুগম করলেও বাংলাদেশে মুজিব সরকারের শিল্পখাত সংরক্ষণের তালিকায় থাকা পাট ও গ্যাস খাত অবমুক্ত করেননি ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় আগ্রহের জায়গা প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকায় তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে খুব একটা আগ্রহী হয়নি। সেসময়ে তারা বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় খাত খুজে পাচ্ছিল না। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত থাকায় জনসংখ্যা আধিক্যের বাংলাদেশে একসময় ক্রেতানির্ভর ব্যবসা যেমন: সিগারেট, সাবান, গুড়া সাবান ইত্যাদি উৎপাদনে বহুজাতিক কম্পানিগুলো অংশ নিতে শুরু করে।
একটা পর্যায়ে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি তেল অনুসন্ধান ও গ্যাস তরলীকরণের ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এতে বিদেশী বিনিয়োগ চাঙ্গা হওয়া শুরু করে। ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসতে শুরু করে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়ার নির্মম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে এই কাজের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে।
চার.
এরপর ক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি ক্ষমতায় এসে ব্যাপক উদার নীতি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদেশী পুজি বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ তৈরি করে দেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় দুর্নীতির গন্ডিকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে যেতে দেন নতুন এই “দেশ শাসক”। ক্ষমতা নেওয়ার সময় বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার কথা বললেও প্রতিবছর সেটা বাড়তে থাকে। ফলে ১৯৮০-৮১তে যেখানে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ৬৫ ভাগ ছিলো বৈদেশিক সাহায্য তা বেড়ে ১৯৮২-৮৩ সালে ৭৯ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ১৯৮৬-৮৭ সালে ৯৭ দশমিক ৯২ শতাংশ হয়। দেশের রপ্তানি আয়ের ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশী সাহায্যের দায়দেনা পরিশোধ করার জন্য সেসময়ে ব্যয় করা হয়। নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে জেনারেল এরশাদ এসময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের ধরে ধরে এনে তার মন্ত্রীসভায় স্থান দিতে শুরু করেন। যাদের ভুল রাষ্ট্র পরিচালনায় এসময়ে বিদেশী পণ্যের কাছে প্রতিযোগিতায় মার খেতে শুরু করে দেশীয় পণ্য। উৎপাদিত মূল্য না পাওয়ায় খাদ্য ও পাটসহ কৃষি উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়ে। সেসঙ্গে বন্যা, খরা ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশে দারিদ্র্যের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। খেপে উঠে বাংলাদেশের মানুষ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৯০ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গণ অভ্যুত্থান হয়। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
পাচ.
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও অবিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসে। দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরশাসন ও গণ আন্দোলনের সুফল পাওয়া জাতি নব উদ্যমে উজ্জীবিত হয় একটি গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো উম্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য শিল্প-ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে সরকারি খাতের ভূমিকা ক্রমশ কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেন। তিনি ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড গঠন করেন। তাছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য দেশীয় বিনিয়োগকারীদের মতোই তাদেরকে সমান সুযোগ সুবিধা দিতে শুরু করেন। ফলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়তে থাকে।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার দেশে বিনিয়োগের নতুন নতুন খাত তৈরি ও পুরনো খাতগুলোর সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নেয়। বিশেষ করে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির অঙ্গনে বিদেশী বিনিয়োগ আনার লক্ষ্যে নতুন কয়েকটি পদক্ষেপ নেন। তার সময়েই বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ফোন চালু হয়। যা এই উপমহাদেশের জন্যও প্রথম। কিন্তু মাত্রারিক্ত কল চার্জ এবং সেটের অত্যাধিক মূল্যের কারণে মোবাইল ফোন তখন বিলাস দ্রব্য ছিলো। তবে একথাও ঠিক যে, মাত্র বিশ্ব বাজারে আসা নতুন এই প্রযুক্তিটির বিপুল সম্ভাবনা তখনই টের পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজারে আকৃষ্ট হয়ে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন কম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠে।
ছয়.
তবে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে বেসরকারি পুজি বিনিয়োগের দুর্দান্ত সুযোগের সম্প্রসারণ করেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরপরই তারা বিএনপি প্রবর্তিত একটি সেলুলার মোবাইল ফোনের একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটাতে তিনটি নতুন মোবাইল ফোন কম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান করেন। যদিও অভিযোগ রয়েছে নিতান্ত কম দামে কোম্পানিগুলোকে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। তবে ৫ বছর পরে লাইসেন্স ফি সংশোধনের সুযোগ থাকার পরেও সেই সুযোগকেও কাজে লাগানো হয়নি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ তখন থেকেই আরো অনেকগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। ওই সময়ে তারা পেজিং, রেডিও ট্রাংকিং, রিভারাইন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানসহ নতুন নতুন ধরনের প্রযুক্তি নির্ভর সেবা সুবিধা চালু করতে শুরু করে। দেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশকে আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহে যুক্ত করার লক্ষ্যে একের অধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়। তাছাড়া সরকারের প্রতিষ্ঠান বিটিটিবি-র মাধ্যমেও ইন্টারনেট ও ই-মেইল সুবিধা চালু করা হয়। ১৯৯৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রবর্তিত হয়।
দেশের মানুষ অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, এই একটি মাত্র খাত যেখানে খালেদার পর হাসিনার সরকার কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। আবার শেখ হাসিনার ১৯৯৬ সালের সরকারের পর ২০০১ সালে পুনরায় খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় এসে আগের সরকারের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টেলিফোন খাতকে গতিশীল ও জনকল্যাণমুখী করার লক্ষ্যে বিটিআরসি নামে একটি স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন একটি খাতের উন্নয়নে কাজের ধারাবাহিকতা একটি দৃষ্টান্ত, যা টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে হয়েছে। এরপর ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির ঘোষণা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে টেলিযোগাযোগসহ জীবনযাত্রার সকল অংশে তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা শুরু করেছেন যার ধারাবাহিকতা চলছে।
সাত.
এখন একদিকে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রাজনীতিকদের হাতে শিফট হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও রাজনীতি অঙ্গনে দু’টো ঘটনা ঘটে একটি মহাঘটনা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশ রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিক হয়েছেন এবং রাজনীতিকদের একাংশ ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ব্যবসায়ী হয়েছেন। বর্তমান সংসদের প্রায় ৭০ শতাংশ ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। আগের সংসদে যা ছিল ৬৩ শতাংশ। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছিল ৪৮ শতাংশ। আর ১৯৭৩ সালে ছিল ১৩ শতাংশ। ক্রমাগতভাবে এই যে রাজনীতি ও ব্যবসার “অপূর্ব মিলন” বেড়েই চলছে; সেই মিলনের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হয়েছে “বঞ্চনা”, যার মালিকানা জনগণের। ৩০ লাখ গণমানুষের রক্তে অর্জিত স্বাধীন দেশের সংবিধানে দেশের মালিকানা জনগণের বলা হলেও, জনগণের বড় অংশটা মালিকানার প্রশ্নে দেশে “সংখ্যালঘু”। গত ৪৫ বছরে দেশের গণমানুষের মাথাপিছু আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়লেও মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে জনগণ একটা ফাঁকে পড়ে গেছে। খুব অল্পতে সন্তুষ্ট এই দেশের সাধারণ জনগণ শুধু একবার ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে পেরেছিল। ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক সরকার আসার পর জনগণ তাদের সেই সক্ষমতা ধীরে ধীরে হারাতে হারাতে এখন প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি চলে গিয়েছে।
আগে একটা সময় ছিল জনগণের হয়ে ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা কথা বলতেন। এখন সেখানেও বড় ধরনের শুন্যতা তৈরি হয়েছে। এখনকার শিল্পপতি রাজনীতিকরা দেশটাকে নিজেদের বসতবাড়ি মনে করেন। দেশের মানুষদের তারা হুকুমের দাস মনে করেন। দেশের মানুষকে তাদের প্রাপ্য অধিকার নয় দয়া দাক্ষিণ্য দিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। দেশী বিদেশী বিনিয়োগের ঘি-মাখন ও সর তুলে নিচ্ছে কয়েকজন ব্যক্তি ও তাদের পরিবার। তারপরও এদেশের মানুষ আশাবাদী। কারণ এদেশের আপামর জনগণের সামনে আশা নামের বস্তুটি ছাড়া অন্য আর কোনো কিছুই নেই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)