রক গার্ডেন থেকে ফিরে সেন্টার পয়েন্ট হোটেলে রাতের খাবার সেরে নিলাম। সবজি, ভাত, ডাল রুটি, ডিমের ঝোল, পাপড় ও চাটনিসহ ৫-৬টি আইটেমের থালা খেয়ে সবাই মুগ্ধ (বড় একটা থালায় সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়)। খাবার খেয়ে বাইরে আর ঘোরাঘুরি করা গেল না, কারণ দার্জিলিংয়ে রাত ৯টার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। রুমে এসে বেশ ক্লান্ত লাগছিলো। দার্জিলিং শহরটিতে সমতল কোনো যায়গা নেই। সব সময় হয় ঢাল ধরে নামতে হয় নয়তো উঠতে হয়। আমাদের মতন সমতলের মানুষের জন্য বেশ কষ্টকর ব্যপারই বটে। এছাড়াও পরদিন ভোর ৪টায় উঠতে হবে টাইগার হিলের সুর্যোদয় দেখার জন্য। তাই বেশি সময় না জেগে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।
মোবাইল ফোনের এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘড়ি বলছে সময় তখন ভোর সাড়ে তিনটা। বাইরে জমাট অন্ধকার, সঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা। অক্টোবরের ১৩ তারিখ, দার্জিলিং। অ্যালার্ম দেয়ার কারণে তখনই ঝটপট উঠে পড়তে হলো। টাইগার হিল-এ সূর্যোদয় দেখতে গেলে খুব দেরি করে হলেও ভোর চারটেয় বেরিয়ে যেতে হবে-এমনটাই জানিয়েছিল ট্যাক্সিচালক। আমি একটু হতোদ্যমই হয়েছিলাম সময়টা শুনে, কিন্তু কিন্তু সূর্যাদয় দেখতে গেলে এর কোনো বিকল্প নেই।
দার্জিলিংয়ে এটাই আমার প্রথম ভ্রমণ। আর সেই কারণেই টাইগার হিল-এ বিশ্ববিখ্যাত সূর্যোদয় দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষ করছিলাম। টাইগার হিল দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। এর উচ্চতা প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফুট। দীর্ঘদিন ধরেই সূর্যোদয় দেখার জন্য এই স্থানটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত গন্তব্য। এখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও শীতের মধ্যে সূর্যোদয়ের অপরূপ দৃশ্য মন কারে সবার। যদিও এখানে সূর্যোদয় দেখাটা ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ এখানে কখনও মেঘ আবার কখনও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে।
অভিজ্ঞদের মত হচ্ছে, আগ্রায় গিয়ে তাজমহল না-দেখা যেমন অপরাধ, দার্জিলিং এসে টাইগার হিল-এ সূর্যোদয় না-দেখাও ততখানি অপরাধ। সুতরাং হাড় হিম করা ভোররাতের শীতকে কাঁপতে থাকা বুড়ো আঙুল কোনওরকমে দেখিয়ে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। আমাদের তৈরি হতে হতে চারটে দশ বেজে গেল। গাড়িতে উঠেই অন্ধকার-কুয়াশা-ঠাণ্ডা ভেদ করে গাড়ি ছুটে চলল। ড্রাইভার জানাল, অনেকেই নাকি সাড়ে তিনটে বাজতে না বাজতে গাড়ি নিয়ে টাইগার হিল-এর দিকে ছুট লাগিয়েছে। বুঝলাম, সূর্য যখনই উঠুক, আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সূর্যোদয় দেখার একটা ব্যবস্থা আছে।
আমরা ছুটে চললাম টাইগার হিলের দিকে। সেখানে পৌঁছে দেখি সাড়ি সাড়ি গাড়ি। নির্দিষ্ট পয়েন্টের অনেক আগে আমাদের গাড়ি পার্ক করা হলো। আমরা দ্রুত রওনা হলাম উঁচু স্থানটির দিকে, যেখান থেকে সূর্যোদয় দেখা যায়। সেখানে গিয়ে দেখি ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। এই ভিড়ের মধ্যে আমরা উত্তর-পশ্চিম কোণায় দাঁড়িয়ে পড়লাম। দর্শকদের বেশিরভাগ বাঙালি এবং তারা ক্যামেরা-মোবাইল নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী একটা ভাব ফুটিয়ে তুলছেন। সূর্যোদয় তো নয়, যেন বাঘ আসবে। সবাই প্রস্তুত কার আগে কে সেই দৃশ্য দেখবে-তার প্রস্তুতিতে।
আকাশের আলো ফুটি-ফুটি অবস্থা দেখে উত্তেজনা শুরু হয়ে গেল। মোবাইল-ক্যামেরা নিয়ে ঠ্যালা-ধাক্কা দিয়ে অনেকেই সামনে যাবার চেষ্টা করল। প্রথম দিকে মানুষের পশ্চাৎদেশ ছাড়া কোনও শোভাই আমাদের দৃশ্যগোচর হয়নি। পরে অবশ্য আমরাও শক্তি প্রয়োগ করে জায়গা করে নিয়েছিলাম। সূর্যোদয়ের মুহূর্তে আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। সে এক অনির্বচনীয় দৃশ্য।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, সূর্যের আভাস দেখা দেওয়া মাত্র প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও একটা উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল। একটা বিশৃঙ্খলাও তৈরি হল। কে কাকে টপকাবে, কে আগে ছবি তুলবে, কে আগে শোভার চোটে আকুল হবে, এই তাড়নায় ন্যূনতম সভ্যতা এবং সৌজন্য ভুলে গিয়ে একটা চূড়ান্ত পড়ি-কি-মরি পরিস্থিতি। সূর্যর আভা যখন কাঞ্চজঙ্ঘার চূড়া স্পর্শ করল তখনই উপস্থিত জনতা একসঙ্গে হো-ও-ও-ও করে উঠলেন, অগুনতি সিটির তীক্ষ্ণ আওয়াজে ভরে গেল ভোরের পাহাড়। সূর্য উঠছে। যেন ‘ডাই অ্যানাদার ডে’-র হ্যাল বেরি কিংবা ‘বাহুবলী’-র অনুষ্কা। সবাই ব্যস্ত সেল্ফি তোলায়।
কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পেছনে রেখে যে-যার মতো পোট্রেট তুলে নিচ্ছে, ফিরে গিয়ে দেখাবে এবং পোস্ট করে এন্তার লাইক কুড়োবে বলেই। সে এক তুলকালাম কাণ্ড। আমরাও কিছু ছবি তুললাম। আর উপলব্ধি করলাম সূর্যের যেমন অহমিকার তেজ আছে, জনপ্রিয়তার পর্বতশীর্ষ আছে, সৌন্দর্যপিপাসু দর্শকেরও তেমন কাণ্ডজ্ঞানহীনতা আছে, চরম আদেখলেপনা এবং অশিক্ষা আছে। সূর্যদেবের আলো কাঞ্চজঙ্ঘার চূড়াতে পড়তেই তা লাল আভায় ভরে গেল। আস্তে আস্তে সাদা বরফের পাহাড় পরিণত হলো সোনালী পাহাড়ে। পাহাড়ের চূড়ায় উদীয়মান সূর্যদেবকে প্রণাম জানাতে শুরু করেন অসংখ্য পূজারি। অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে টাইগার হিল থেকে মাত্র ৩০ রুপিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা, হিমালয়, সিকিম, নেপাল সীমান্ত ও অন্যান্য পাহাড় দেখতে।
সূর্য দেখা দেবার আগের মুহূর্ত ভোলার নয়, সবাই তাকিয়ে আছে আর অপেক্ষা করছে। অলৌকিক ভাবে উঁকি দিল, সেই সময়ের মানুষের অভিব্যক্তির বর্ণনা দেবার ভাষা সত্যিই আমার অজানা! টাইগার হিলে সূর্যোদয়ের বর্ণণা অনেক পড়েছি অনেক গল্প উপন্যাসে। এবার নিজেই তা প্রত্যক্ষ করলাম। আমরা সৌভাগ্যবান যে, এমন স্পষ্ট সূর্যোদয় দেখতে পেয়েছি। সূর্য একটু একটু করে উঠতে গিয়ে মনে হল যেন হঠাৎ করে লাফ দিয়ে পরিপূর্ণতা পেল। ঠিক যেন একটা আগুনের বল, কাঁপছিল এলোমেলো ভাবে আর মনে হচ্ছিল যেন কেউ খেলছে আগুনের বল নিয়ে। মনে হচ্ছিল কেউ যেন এটাকে গোল করে আকার দেবার চেষ্টা করছে। সেই আলোর রশ্মির কোমল রূপের কোনো তুলনা নেই।
এই হৈহৈ রৈরৈ-এর মধ্যে পাহাড়ের উত্তর কোণায় চোখ পড়ল। সেদিকটায় কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। পাহাড়ের এক কিনারে তুমুল হই-হট্টগোল আর সূর্য দেখে ফেলার উল্লাস, অন্য কিনারটা শান্ত, একলা। সেখানে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালাম- অনেক দূরের ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রামে পা টিপে টিপে ঢুকছে সূর্যের আলো। কয়েকঘর কুঁড়ে, কিছু ছোটখাটো ক্ষেত- এটুকুই অস্তিত্ব গ্রামটার। হয়তো সাকুল্যে শ’খানেক কি তারও কম বাসিন্দার জমায়েত। কোনও তাড়া নেই, কোনও প্রতিযোগিতা নেই, শুধু নীরবে, নিশ্চিন্তে থাকাটুকু আছে। সেখানেও সূর্যোদয় হচ্ছে, কিন্তু সেই সূর্যোদয়ের কোনও জনপ্রিয়তা নেই, খ্যাতি নেই, উদযাপন নেই। এখানে যে-কেউ চাইলেই দেখতে পারে ছোট্ট সেই গ্রামের সূর্যোদয়– এখানে কোনো উদ্যোগ-আয়োজন নেই, কোনও পূর্ব-পরিকল্পনা, কোনও অপেক্ষা প্রয়োজন নেই। হয়তো কখনও কোনও ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলো ছুটেও যায়নি তার দিকে। কী নাম গ্রামটার? কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। না-হয় না-ই জানা হল তার নাম। কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যালোকের সোনালী আভার পাশাপাশি একটা অনামী পাহাড়ি গ্রামের শরীরে ভোর হয়ে যাওয়ার সাক্ষী তো থাকতে পারলাম। খ্যাতি আর আলোর ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়ানো সেই গ্রামটার কাছেই রেখে এলাম আমার ভোররাতে অ্যালার্ম বাজিয়ে ঘুম থেকে ওঠার সার্থকতা, রেখে এলাম একটা লুকানো দীর্ঘশ্বাসের অ্যালবাম!
টাইগারহিল থেকে আমরা গেলাম বাতাসিয়া লুপ। অদ্ভুত নাম। বাতাসিয়া লুপ জায়গাটিতেই দার্জিলিং ট্রয় ট্রেন যেটা কিনা ঘুম আর দার্জিলিংয়ের মধ্যে এখন চলাচল করে, সেটি এখান থেকে ঘোরে। গোল লুপের মতোন লাইনটি ঘুরে আবার ঘুমের দিকে যায়। বাতাসিয়া লুপ হচ্ছে অনেকটা আমাদের দেশের শহিদ মিনারের মত। এটি বানানো হয়েছিল গোর্খা সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যারা ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
“বাতাসিয়া লুপ” জায়গাটি দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দুরে ঠিক ঘুম স্টেশনের নিচের দিকে। বাতাসিয়া লুপের ভৌগলিক অবস্থান এমনই মনোরম যে এখানে পর্যাপ্ত হিমশীতল বাতাস শরীর ও মনকে উজ্জীবিত করে দেয়। পৃথিবীর যাবতীয় বাতাস যেন এই পবিত্র কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদস্পর্শে এসে সংসার পেতেছে। শুধু বাতাস বাতাস আর অবিশ্রান্ত বাতাস। বিশাল সবুজ প্রান্তরটি শুধু নানান রঙবেরঙের ফুল আর চিরহরিৎ বৃক্ষের আবাসভূমি। একদিকে রাজার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে চির তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাতাসিয়া লুপের উপর থেকে তলায় সমস্ত দার্জিলিঙ শহরটাকে দেখা যায়। একেবারে ৩৬০ডিগ্রি। অসাধারণ সেই দৃশ্য। এখানে অপার সৌন্দর্য আস্বাদ করে আমরা আবার হোটেলে ফিরে যাই।
হোটেলে ব্রেকফাস্ট সেরেই আমরা আবার বেরিয়ে পড়ি। এবার আমাদের গন্তব্য দার্জিলিঙের দুটি প্রধান দর্শনীয় স্থান, পদ্মজা নাইড়ু জুলজিক্যাল পার্ক এবং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট। প্রবেশফটক একটাই। একটা টিকেটেই দুটি জায়গা দেখে নেওয়া যায়।
ভারতের উচ্চতম চিড়িয়াখানাগুলির মধ্যে এই পদ্মজা নাইড়ু জুলজিক্যাল পার্কই সব থেকে বড়ো। চিড়িয়াখানা চত্বরের মধ্যেই রয়েছে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (এইচএমআই)। এমন ভাবে পথ নির্দেশনা করা হয়েছে যাতে পর্যটকরা চিড়িয়াখানার একটা দিক দেখতে দেখতে চলে যাবেন এইচএমআইয়ে, আবার ফেরার সময় চিড়িয়াখানার অন্য একটা দিক দেখতে দেখতে ফিরবেন।
চিড়িয়াখানার কথায় আসা যাক। হিমালয়ান প্রাণীদের ব্যাপারে গবেষণা এবং সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৮ সালে বার্চ হিলে এই চিড়িয়াখানাটি তৈরি হয়। শীত প্রদেশের চিড়িয়াখানা। তাই মূলত শীতের প্রাণীদের বাস এখানে। চিড়িয়াখানার বিশেষ বাসিন্দা রেড পান্ডা। একটু যেন লাজুক প্রকৃতির। কিছুতেই আমাদের সামনে আসতে চায় না। ক্যামেরায় ধরার জন্য কয়েক সেকেন্ড থিতু হয়ে বসে আবার পালিয়ে গেল। ভাল্লুক বাবাজির অবশ্য এ রকম কোনো সমস্যাই নেই। পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে দারুণ পোজ মেরেছে সে। বাঘ, চিতা বাঘ, স্নো-লেপার্ডদের পাশ কাটিয়ে পৌঁছে গেলাম তেনজিং নোর্গে স্মৃতি বিজড়িত এইচএমআইয়ে।
এখানকার আত্মায় রয়েছেন তেনজিং, হাওয়ায় রয়েছেন তেনজিং, গাছগাছালিতে রয়েছেন তেনজিং। ১৯৫৩ সালে তাঁর এবং হিলারির এভারেস্ট জয়ের পর স্বাভাবিক ভাবেই এই অঞ্চলে পর্বতারোহণের ব্যাপারে আগ্রহ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সেই আগ্রহকে সম্মান দিয়েই তার এক বছরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় এইচএমআই। ১৯৫৪-এর ৪ নভেম্বর এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। এখানকার প্রথম ডিরেক্টর হন তেনজিং। প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সাধারণ পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। রয়েছে একটি সংগ্রহশালা, ট্রেকিংপ্রেমীদের কাছে যা স্বপ্নের মতো। এভারেস্ট নিয়ে যাবতীয় কৌতূহল এখানেই মিটে যাবে, শুধু প্রয়োজন ধৈর্য ধরে অনেক সময় দিয়ে সংগ্রহশালাটি দেখা। ১৯৮৬-তে মৃত্যুর পর এখানেই সমাধিস্থ হয়েছিলেন তেনজিং। তাঁর সমাধিকে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়লাম।
লোয়ার কার্ট রোড দিয়ে এগিয়ে গেলাম। বাঁ দিকে পড়ল তেনজিং রক। তেনজিং রক একটি বিশাল পাথর যেটা দেখতে বিরাট পর্বতের একটি ছোট মডেলের মতো। এখানে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়াও পর্যটকদের জন্য স্বল্প উচ্চতার পর্বতারোহন অভিজ্ঞতা হয়ে যায় এখানে। এরপর আমরা পৌঁছালাম ‘হ্যাপি ভ্যালি টি-এস্টেট’। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে এই চা-বাগান। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এই চা-বাগান দেখে কিছুটা হতাশই হলাম। বাগানের অধিকাংশই ফাঁকা। এখান থেকে চা-পাতা সংগ্রহ করে আমরা চলে এলাম সেন্ট পল স্কুলের সামনে। ঝকঝকে সুন্দর এই স্কুলটির ভেতরে আমরা প্রবেশ করতে পারিনি। স্কুলটির পাশেই রয়েছে রোপওয়ে। যা এখন বন্ধ রয়েছে। অগত্যা আমাদের এ দফা দার্জিলিংয়ের মায়া ত্যাগ করে ঘরে ফেরার উদ্যোগ নিতে হলো!
পাহাড় বড় রহস্যময়। একটু আগেই ঝকঝকে রোদে আমরা হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ চতুর্দিক কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল। অতর্কিতেই যেন এক বিপদের সংকেত নিয়ে হাজির হল কালো মেঘের দল। হুহু করে বইতে লাগলো হিমশীতল হাওয়া। তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম শিলিগুড়ি হয়ে শিববাড়ীতে ফিরে যাব, বোনের বাসায়। আবারও আমরা শিলিগুড়িগামী জীপে চেপে বসলাম। চারিদিকের সবুজের সমারোহ আর মেঘ-কুয়াশা আবার কখনও রোদ মন ও চোখকে বড়ই আরাম দিচ্ছিল। আমরা ভেসে যেতে লাগলাম উতল হাওয়ায়!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)