বিশেষ পরিস্থিতিতে আজ জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশ্বব্যাপী করোনাকালের এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আয়ের পথ সংকুচিত হচ্ছে, কিন্তু ব্যয়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই উচ্চাভিলাষী কোনো বাজেট দেয়া সম্ভব হয়নি।
করোনাকালে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে এবারের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর আয়করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বার্ষিক করমুক্ত আয়ের সীমা পুরুষের জন্য আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ, আর মহিলা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সর্বনিম্ন করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ ও সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২.৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
২০২০ সালের ১লা জুলাই থেকে ৩০শে জুন ২০২১ এর মধ্যে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট এর উপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে রাখা অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিলে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
এই সময়ে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ওপর ১০% কর দিলে এই টাকা নিয়েও কোন প্রশ্ন করবে না আয়কর বিভাগ। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে কর রেয়াত দেওয়া হবে ২ হাজার টাকা। ভ্যাট এর আওতা তেমন একটা বাড়ছে না। তবে উৎসে কর রেয়াতসহ যেসব অসঙ্গতি আছে সেগুলো দূর করে সংস্কারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করলে এবং কর ফাঁকি দিলে বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান থাকছে নতুন বাজেটে। যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হবে তার উপর ৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। দেশ থেকে অর্থপাচার রোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সামাজিক সুরক্ষায় নজর দিলে দেখা যায় করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে সর্বমোট ৮১ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার ৫শ ৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব আছে যা জিডিপি’র ৩ শতাংশের বেশি।
বাজেট উপস্থাপন করে অর্থমন্ত্রী যে দিকনির্দেশা দিয়েছেন তার মূল কথা: অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতের কাঙ্খিত ভিত রচনা করতে চান তিনি।
করোনাকাল একদিন আমরা পাড়ি দিয়ে ফেলবো। রাতের অন্ধকার শেষে ভোরের আলো ফুটবে। সেই দিনের জন্য আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এই অন্ধকার দিনগুলো থেকে। করোনা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের করুণ দিকগুলো ফুটিয়ে তুলেছে তাই তড়িঘড়ি করে এই খাতকে মেরামতের চেষ্টা চলছে। জাতীয় বাজেটে থোক বরাদ্দসহ নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এ খাতের উন্নয়নে। অথচ সরকার যদি জনস্বাস্থ্যের দিকে আগে থেকেই নজর দিতো। বরাদ্দকৃত অর্থের যথার্থ ব্যবহারের প্রতি তৎপর থাকতো তাহলে মানুষের দুর্ভোগ, উৎকণ্ঠা আজ কম থাকতো।
দৃশ্যমান উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন নয়। সবার আগে প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। তারপরেই কেবল বিলাসী উন্নয়নের পথে আমরা পা বাড়াতে পারি।