গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদী চরাঞ্চলের কুন্দের পাড়ায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গণ উন্নয়ন একাডেমী হাইস্কুল নামের একটি বালিকা বিদ্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে স্কুলের ৭টি কক্ষ, আসবাবপত্র, শিক্ষা সরঞ্জাম, শিক্ষার্থীদের ১২ বছরের অন্তত ২০ হাজার স্কুল সাটিফিকেট ও একটি এনজিওর অফিস পুড়ে যায়।
আগুন নজরে আসার পর স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, বালুচরে কোন স্কুল ছিলো না। বালুচরে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। চারদিকে পানি আর বালু -সেই বালুচরকে সবুজে পরিণত করে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় স্কুল। আর এই স্কুল পুড়িয়ে দেয়ার ফলে চরাঞ্চলের ৬০০ নারী শিক্ষার্থীর ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।
অফিস পুড়িয়ে দেয়ায় আগামী ২ ফেব্রয়ারি স্কুল থেকে যে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের জন্য এক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করলো।
তিনি আরও জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দরিদ্র সন্তানদের ও চরাঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই বিদ্যালয়। দরিদ্র মানুষের অর্থ সহায়তা ছাড়াও স্থানীয় একটি এনজিওর সহায়তায় শিক্ষার্থীদের আনা নেয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা হিসাবে রাখা হয় নৌকা । শিক্ষা ব্যবস্থা ,পদ্ধতি ও পরিবেশ ভালো হওয়ায় ১৫ -২০ কিলোমিটার দূর থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ালেখা করেন । ৬’শ শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে এই চরাঞ্চলের শিক্ষাক্রমে ভালো ভূমিকা রেখে আসছিলো ।
গণ উন্নয়ন একাডেমী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুর হক বলেন,‘সর্বনাশ হয়েছে । পড়ালেখা নিয়ে ,দরিদ্র চরাঞ্চল বাসীর শিক্ষা নিয়ে যারা রাজনীতি করতে পারে তাদের বিচার হওয়া দরকার।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন ,‘বেশ কিছু দিন হলো কিছু লোক স্কুলের কার্যক্রমে বাধা দিয়ে আসছিলো। আমরা দূরের শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক ব্যবস্থা করে নজির সৃষ্টি করেছি তা কারো কারো চক্ষুশুল হয়েছে । সে কারনেই পড়ালেখার উপর আঘাত এসেছে। কিন্তু এক শ্রেনীর মাদকাসক্ত ও স্বার্থপর ব্যক্তি পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে ওই জুয়া, মদ ও যাত্রার নামে অশ্লীল নাচ-গানের আসর জমিয়ে তোলে। স্থানীয় লোকজন এর প্রতিবাদ জানালেও কোন কাজ হয়নি । দুর্বৃত্তরা আরও ক্ষেপে যায়। এছাড়াও ওই এলাকায় কিছু ব্যক্তি আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পনা করে । এনিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানায়। গতকাল বৃহস্পতিবার এই নিয়ে কুন্দেরপাড়া স্কুলের মাঠে এক সুধী সমাবেশ হয়। এধরনের ঘটনা থেকেও দুর্বৃত্তরা ঈর্ষান্বিত হয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্কুলে আগুন দিয়ে পুুড়িয়ে দেয় বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এঘটনার পর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আলীয়া জাহান ফেরদৌসীসহ সরকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এঘটনায় এখনও কোনো মামলা দায়ের হয়নি।