ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশের স্কোর ২ পয়েন্ট কমে তার অবস্থান চার ধাপ অবনতি হয়েছে। সর্বনিম্ন স্কোর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথমে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান।
প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, নিম্নক্রম থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে অবস্থান ১৩। গত বছর তা ছিল ১৭তে। আর ঊর্দ্ধক্রম অনুযায়ী ১৪৯তম। এক্ষেত্রেও গত বছরের তুলনায় ৬ ধাপ অবনতি হয়েছে।
এসব তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দেশের দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বলছে, সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা জানি, ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর ধরে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে ছিল। এরপর সেখান থেকে প্রতি বছরই সেই অবস্থান থেকে নিজেকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে আবার অবনতি দেখা গেলো। নানা কারণেই অনেক ভালো করার সুযোগ ছিল বাংলাদেশর সামনে।
টিআই যখন বাংলাদেশের দুর্নীতির অবস্থান প্রকাশ করছে, তার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াতে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। নতুন মন্ত্রীদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো রকম দুর্নীতি, অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর এমন অবস্থানকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কেননা আমরা মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার প্রধান কঠোর অবস্থান নিলে, তার মন্ত্রিসভার অনেকেই কোনো অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়াতে সাহস করবেন না। আর রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং তার বাস্তব প্রয়োগই পারে একটি দেশ থেকে সমূলে দুর্নীতিকে উপড়ে ফেলতে।
গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে বড় দুর্নীতির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ অর্থ পাচারের ঘটনাও অনেকেই জানেন। এর বাইরে প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে দুর্নীতি ছিল অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’। দুঃখজনক হলেও সেসবের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ দুর্নীতি দমন কমিশন বা সরকারের অন্য কোনো সংস্থাকে নিতে দেখা যায়নি।
তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থান নতুন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের বড় রকমের প্রত্যাশা তৈরি করেছে। তাই আমরা মনে করি, টিআইয়ের পরবর্তী দুর্নীতির ধারণা সূচকে তার প্রতিফলন থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।