বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপে সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে এবং উস্কানিদাতা ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ সমাবেশে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ডাইভারসিটি প্লাজায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউইয়র্কের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শহীদ সন্তান ফাহিম রেজা নূর এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা সারা বাংলাদেশে পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাংচুরের তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, এই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে ৩০ লক্ষ বাঙালী বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেননি। আধা সামরিক বাহিনী নামিয়ে এই বছর বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে, এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধর্ম নিরপেক্ষতা থেকে কতটুকু পিছিয়ে এসেছে।
কুমিল্লায় সংখ্যাগরিষ্ঠদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থকে অবমাননা করা সংখ্যালঘুদের ষড়যন্ত্র ছিল না, তাও আবার তাদের ধর্মীয় উৎসবের সময়। এই ষড়যন্ত্র যারা করেছে, তারা পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবকে বানচাল করার অপচেষ্টা করিনি বরং বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মুখে কালিমা লেপনের অপচেষ্টা করেছে।
যারা শাপলা চত্বরে কোরান শরিফ পুড়িয়েছিল, তারাই হনুমানের পায়ের নিচে কোরান শরিফ রেখে নিজেদের ধর্মকে অবমাননা করেছে, তারাই আবার হিন্দুদের পূজামণ্ডপে হামাল করেছে এবং তারাই চাঁদে তাদের ধর্মীয় গুরুকে দেখতে পায়।
কুমিল্লায় মৌলবাদী শিবির কর্মীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমেই বুঝা যায়, কারা হনুমানের পায়ের নিচে পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ রেখেছিল। কিন্তু অবাক করার বিষয়, গ্রেফতারের পর সব অনুভূতিওয়ালারা চুপ হয়ে গেছেন, তাদের অনুভূতিতে এখন আর আঘাত লাগে না।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ যখন সমুজ্জ্বল, তখনই এই ধর্মান্ধ মৌলবাদী স্বাধীনতা বিরোধী জামায়েত- বিনপি চক্র বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এর দায় এরাতে পারে না।
যে বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে সকল ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহবাস করে আসছে, সেই বাংলাদেশে গত দশ পনের বছর ধরে বারবার সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র ও হামলা হয়ে আসছে। তার একমাত্র কারণ বিচারহিনতা। আমার শুধু দেখে আসছি তদন্ত হয়, গ্রেফতার হয়, কিন্তু বিচার কখনো হয়না।
রামু, নাছিরনগর, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় ধর্মীয় অনুভূতির নাম করে সাম্প্রদায়িক হামলা, জ্বালাওপোড়াও হয়েছে কিন্তু একটারও বিচার হয়নি। এই বিচারহিনতার কারণে ভবিষ্যতে আরও সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও হামলার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সাবেক বিটিভি পরিচালক বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক বেলাল বেগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস, প্রবীণ সাংবাদিক ফজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ আনোয়ার বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিরু ভুঁইয়া, অধ্যাপিকা হোসনে আরা, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, সাবেক ছাত্রনেতা মুজাহিদ আনসারি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোপাল সান্যাল প্রমুখ। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিরু ভুঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আকবর রিচি, শাহীদ রেজা নূর।