বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারন সম্পাদক দীপু সারোয়ার এবং প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক ইমরান হোসেন সুমনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপত্তিকর চিঠির প্রতিবাদে দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে তৃতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছে সাংবাদিকরা।
এসময় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান করেন। অবিলম্বে ওই চিঠি প্রত্যাহার না করলে সাংবাদিক সমাজ এক হয়ে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
রোববার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে ক্র্যাব ও অন্যান্য সংঠনের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন: সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার এটি কোন নমুনা হতে পারে না। স্বাক্ষী না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি? তার মানে কি? এ প্রতিষ্ঠানের ভেতরে একটি সরকার বিরোধী গ্রুপ আছে। যারা সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করার পাঁয়তারা করছে। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন করে আপত্তিকর চিঠি প্রত্যাহারে বাধ্য করা হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারন সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন: আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত হতে দিতে পারিনা। সেখান থেকে সরে আসার আবারও বিনীত অনুরোধ করছি। সাধারণ মানুষ দুদকের অনেক কর্মকর্তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এখনও সময় আছে, কর্মকর্তাদেরকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরে আসতে অনুরোধ করুন। অবিলম্বে এই চিঠি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে এবং চিঠি প্রদানকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এই আন্দোলন চলবে।
ডিআরইউর সাবেক সাধারন সম্পাদক মুরসালিন নোমানী বলেন: দুদক কোনভাবেই চিঠি দিয়ে সাংবাদিককে তলব করতে পারেন না। অবিলম্বে আপত্তিকর এ চিঠি প্রত্যাহার করে, ক্ষমা না চাইলে, সাংবাদিকরা আরো বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলবে।
এ সময় বিক্ষোভে ডিআরইউ’র সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দারসহ নেতারা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা বাছিরের ঘুষ কেলেংকারী নিয়ে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের জেরে দীপু সারোয়ার এবং ইমরান হোসেন সুমনকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশ দেয়া হয়। এছাড়াও নোটিশে দীপু সারওয়ারকে কার্যালয়ে না গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর প্রতিবাদেই এই মানববন্ধন।
এর আগে মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাদের সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।
দুদকের দুটি চিঠিতেই অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণী হিসেবে উল্লেখ করা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন।
আরও বলা হয়, ‘উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৬/০৬/২০১৯ খ্রি. তারিখ ১০.৩০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’
এদিকে দুদকের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার কারণেই দুই সাংবাদিককে নোটিশ দিয়ে পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ‘হুমকি’ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন গণমাধ্যকর্মীরা। নোটিশটি প্রকাশ হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।