প্রথমবার ওয়েব ফিল্ম নির্মাণ করেছেন ‘সাপলুডু’ খ্যাত নির্মাতা গোলাম সোহরাব দোদুল। মুক্তি প্রতীক্ষিত এই ফিল্মটির নাম ‘ছক’। যেখানে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন তারকা অভিনেতা তাহসান খান ও স্পর্শিয়া। আছে একঝাঁক থিয়েটার আর্টিস্ট। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার গল্পে নির্মিত ছকের প্রথম পোস্টার। যা প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমত হুলস্থুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা পেয়েছে পোস্টার পরিকল্পনা।
প্রথম ওয়েব ফিল্ম নিয়ে আশাবাদী দোদুল। জানিয়েছেন, ফিল্মটি চলতি মাসেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমাটিক অ্যাপে। চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আরো আলাপে এই নির্মাতা জানিয়েছেন ছক মুক্তির ছক এবং ওটিটি নিয়ে নিজস্ব ভাবনার কথা:
‘ছক’ এর পোস্টার রিলিজ হলো। সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
হ্যাঁ, পোস্টার রিলিজের পর বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। সবাই দেখলাম খুব ভালো রেসপন্স করলো।
সামনে ছক নিয়ে আর প্ল্যান কী?
এই মাসেই রিলিজ। সামনে আরো চার/পাঁচটা পোস্টার আসবে। টিজার, ট্রেলারও খুব শিগগির দেখতে পারবেন দর্শক।
পোস্টারে তাহসানকে দেখা গেলো, অভিনেত্রীর চেহারা উন্মোচিত হলো না। সম্ভবত তিনি স্পর্শিয়া?
হ্যাঁ। ব্যাসিকেলি ‘ছক’ এর গল্পটা ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার। তো সেই আবহটা দিতেই প্রথম পোস্টারটা এরকম করা হয়েছে। গল্পের প্রতি যেন দর্শক টান অনুভব করেন। দুটো ক্যারেক্টারেই অনেক মিস্ট্রি আছে। মানে দর্শককে ফিল্মের গল্প নিয়ে একটু আগ্রহী করে তোলার প্রয়াস ছিলো। একটা ক্যারেক্টার এক্সপোজ হয়, আরেকটা ক্যারেক্টার এক্সপোজ হয় না। গল্পেও হয়তো এরকম একটা জায়গা যাবো।
তাহসানকে নিয়ে প্রথম কাজ করলেন। তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করছেন, যদি একটু বলা যায়?
আসলে ক্যারেক্টার নিয়ে বললেতো গল্পের প্রসঙ্গটিও চলে আসবে। মুক্তির আগে কোনোভাবেই দর্শককে সেই ধারণাটি দিতে চাইছি না। তবে এটুকু বলছি, ফিল্মের শুরুতে তাকে খুব সাধারণ একজন মানুষের চরিত্রেই পাই। তার নাম বাবু। সিনেমার শেষে গিয়ে হয়তো দর্শক অনেক কিছুই আবিষ্কার করবেন নিজে নিজে, যা হয়তো গল্প চলাকালীন কিছুই আঁচ করতে পারবে না। আরেকটা কথা, যে কোনো প্রতিষ্ঠিত অভিনেতাকে যদি এক্সপেরিমেন্টালি কোনো চরিত্রে ব্যবহার করা যায়, যেভাবে তাকে আগে কখনো দেখা যায়নি- তাহলে সেটা সেই অভিনেতার জন্যও যেমন লাভ, তেমনি আমাদের মিডিয়ার জন্যও প্লাস পয়েন্ট। তাহসানকে ‘ছক’ এ তেমনি রোল প্লে করতে দেখা যাবে। আর এই এক্সপেরিমেন্টের কাজের জন্য ওটিটি হচ্ছে সেরা মাধ্যম।
শুধু প্রতিষ্ঠিত অভিনেতায় নয়, তাদের পাশাপশি নতুনদের কাজের জন্যও ওটিটি দারুণ জায়গা। গত কয়েক মাসে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে…
অবশ্যই। যেরকম আমার ‘ছক’ এ তাহসান ও স্পর্শিয়া ছাড়া বাকিরা প্রায় সবাই থিয়েটার আর্টিস্ট। দীপক সুমন, শাহরিয়ার সজীব, প্রণীল, বিপলী প্রমুখ। এরা প্রত্যেকেই কিন্তু মেজর সব ক্যারেক্টার করেছে।
এখনতো ওয়েব ফিল্মে ‘বাস্তব ঘটনা অবলম্বন’ করে নির্মাণের হিড়িক। ‘ছক’ এর পেছনে কি এমন কোনো সত্য ঘটনা আছে?
এটা ট্রু ইভেন্ট না, তবে এ ধরনের ঘটনা হরহামেশায় ঘটে আমাদের চারপাশে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে লিয়াজু, ছোট ছোট ঘটনা- এগুলো ঘটে। যেহেতু আমি থ্রিলার বেইজ গল্প নিয়ে টুকটাক কাজ করি, তাই পুলিশের কাছে আসা বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কেইস স্টাডিগুলো দেখার সুযোগ তৈরী হয় ব্যক্তিগতভাবে। ২০১১/২০১২ সালের দিকে একটা কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। তখন পুলিশের খুব ইন্টিলিজেন্ট একজন মানুষ, সৎ অফিসার- যে আমার খুব কাছের বন্ধু। তারই এই ধরনের একটা অভিজ্ঞতা আছে, যা সেই সময়ে আমাকে বলেছিলো। সেই অভিজ্ঞতার একটা ছায়া আছে ‘ছক’ এর মধ্যে। ছায়া বলতে, গল্পের সত্যতা আছে এই ছকের মধ্যে। তবে এটাকে বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে বলা যাবে না।
ঠিকাছে…
যেহেতু আমি থ্রিল নিয়ে কাজ করি, ফলে যারা ফরেনসিক করে, বা যারা থ্রিল লেখে, বা যারা পুলিশের লোকজন- ইন্টিলিজেন্সে কাজ করে তাদের অনেকেই আমার বন্ধুবান্ধব। যাদের সাথে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আমি কথা বলি, তখন তারা কিছু ঘটনা বলে। যে ঘটনাগুলো বেশ লোমহর্ষক। কিন্তু পাব্লিকলি ওই ঘটনাগুলো কখনো আসে না। তাদের ক্রেডিট, সত্য উদঘাটন করতে যেয়ে তাদের কষ্ট- কেউ জানেই না। মাঝখানে আজিমপুরে খলিলউল্লাহ নামের একজন লোকের কথা হয়তো সবার শোনা আছে, যে লোকটা কবরে গিয়ে মরা মানুষের কলিজা খেয়ে ফেলতো। উনি কেন এটা করতো? উনার ফ্যামিলি কনজুগাল লাইফ কী ছিলো, এই অভ্যেস কীভাবে তিনি পেলেন? এটা কিন্তু পাব্লিক না জানলেও ইন্টিলিজেন্স বা এই সংশ্লিষ্টরা স্টাডি করে সত্যটা ঠিকই বের করে ফেলেন। যে কোনো লোমহর্ষক অমিমাংসিত ঘটনার সমাধান কিন্তু তারা খুঁজে বের করেন। এই যে তাদের নিবিড় পরিশ্রম, এটাও কেউ খুব একটা জানে না।
ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, সব মাধ্যমেই কাজ করেছেন। এরআগে ওটিটিতে ‘নীল দরোজা’ নামে ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছেন। অন্য মাধ্যম থেকে ওয়েবটা কি বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয় আপনার?
অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। বরং ওয়েব আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হটস্টার, জি ফাইভ, হইচই- অসংখ্য প্লাটফর্ম আমার চারপাশে। আমি যখন কোনো কন্টেন্ট করতে যাবো, তাই আমাকে অনেক কনসার্ন থাকতে হয়। সবাই জানি যে, আমাদের হাই বাজেট নেই- কিন্তু এটাতো দর্শককে বোঝানো যাবে না, বা তারা বুঝবেও না। দর্শকতো এখন নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন দেখে অভ্যস্ত। তারা ওই কোয়ালিটির কন্টেন্টই প্রত্যাশা করবে, সেরকম কন্টেন্ট তো আমরা দিতে পারবো না- কাছাকাছি দেয়ার টেন্ডেন্সিটা থাকতে হবে। আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমার প্রথম সিনেমা ‘সাপলুডু’ যে ক্যামেরায় শুট করেছি একেবারেই সেই প্রসেসেই কিন্তু ‘ছক’ নির্মাণ করেছি। সাউন্ড কোয়ালিটি, ফলি, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক- সব দারুণ কোয়ালিটিতে করা। ট্রেলার আউট হলেই দর্শক বুঝতে পারবে, ‘ছক’ কোনো অংশ কমার্শিয়াল সিনেমা থেকে কম কিছু নয়। তো এখনকার ম্যাচিউরড দর্শকদের জন্য যে কোনো কন্টেন্ট নির্মাণই যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। তবে আশার কথা, ইতোমধ্যে আমাদের এখানে বেশকিছু ওয়েবের কাজ ক্লিক করেছে, মানুষ দেখেছে, প্রশংসা করছে। দেখা যাক বাকিটা।
গত কয়েক মাসের মধ্যে ওটিটিতে বেশ কয়েকটি কাজ দারুণ প্রশংসা পেয়েছে। এরমধ্যেই আপনি ‘ছক’ নিয়ে আসছেন। কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন কিনা?
এগুলোতে আমার কোনো চাপ নেই। আমি যখন ‘সাপলুডু’ নির্মাণ করে মুক্তি দিতে চাইছি, তখন সামনে-পেছনে ছিলো শাকিব খান অভিনীত ছবি। কিন্তু আমরা ঠিকই নিজেদের মতো করে বের হয়ে গেছি। আসছে মার্চ/এপ্রিলে কিন্তু আমার আরেক ওয়েব ফিল্ম আসছে, যেটার নাম ‘ডার্ক রুম’। ওইটার মেইন কাস্ট কিন্তু চঞ্চল চৌধুরী। তো আমি মনে করি, কাজ নিয়ে চাপে থাকার কিছু নাই। ব্যাক টু ব্যাক ভালো কাজ আসাটা জরুরী, ভালো কাজ আসলে সবার জন্যই ভালো।
‘সাপলুডু’র পর বড় আয়োজনের সিনেমা কবে থেকে শুরু করতে যাচ্ছেন?
গেল বছরের অক্টোবরে আমার দ্বিতীয় সিনেমা করার কথা ছিলো। সব গুছিয়েও এনেছিলাম। বেঙ্গল মাল্টিডিয়ার প্রযোজনায়। শিগগির কাস্টিং ঠিক ঠাক হওয়ার পর এই সিনেমাটি নিয়ে বিস্তারিত জানাবো।