চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য হলেও বয়স বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ২৪ জনকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে আসামিদের ওই দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। ৭০টি বাড়ি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের দ্বিতীয় অভিযোগে ৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়। তৃতীয় অভিযোগে সাজা না দিলেও এ ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অদক্ষ বলে পর্যবেক্ষণ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বিচারকি কার্যক্রম শেষ হওয়ার প্রায় ১ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা করা হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর মামলার। রায় ঘোষণার সময়ে ট্রাইব্যুনালের ভেতর-বাইরে ছিল স্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুই আসামিকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। সকাল ১১টার পর ১শ’৩৩ পৃষ্ঠার পুরো রায়ের মধ্যে শুধু আদেশের অংশটুকু পড়া শুরু করেন দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ওই সময় ট্রাইব্যুনালে নির্ধারিত স্থানে কাঠের চেয়ারে বসে ছিলেন আসামি মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটু।
সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে আসামিদের কোন অপরাধে কী শাস্তি দেওয়া হলো তা ঘোষণা করেন দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। দু’ রাজাকারের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ ছিল। এগুলোর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তৃতীয় অভিযোগে তারা ১৯৭২ সালে দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
প্রথম অভিযোগ ছিল পাকিস্তানী বাহিনী নিয়ে শিবপুর থানায় হামলা চালিয়ে ৩৯ জনকে অপহরণ করে ২৪ জনকে হত্যা। দ্বিতীয় অভিযোগ ৭০ টি বাড়িতে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট। তৃতীয় অভিযোগ কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজনকে হত্যা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা, লুট অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আগে সাজা খাটায় নতুন করে আসামিদের সাজা না দিলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সম্পর্কে ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণ দেন।
প্রত্যাশিত রায় পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবে আসামিপক্ষ।
প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান বলেন, প্রথম অভিযোগে বিনোদপুর এলাকা থেকে ৩৯ জন লোককে ধরে এনে বিনোদপুর হাইস্কুলের মাঠে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আসামিরা নিজ হাতে তাদের হত্যা করে। এই হত্যার জন্য তাদের আমৃত্যু সাজা ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আরেকটি অভিযোগে তাদের ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, যদিও অপরাধ অনুযায়ী তারা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য তবুও তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। পূর্ণাঙ্গ রায় দেখার পরে সিদ্ধান্ত নিবো আপিলের। তদন্তকারী কর্মকর্তার রিপোর্টের ভিত্তিতে এটা ট্রায়াল হলো। সেখানে কোর্ট বলেছেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা একজন অথর্ব। তার অনেক ভুল ত্রুটি আছে।
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ: শিবগঞ্জের কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আগে সাজা খাটায় নতুন করে আসামিদের সাজা না দিলেও এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সম্পর্কে ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে শাহিদুর রহমান বলেন, আদালত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ইন-কমপিটেন্ট ইনভেস্টিগেশন অফিসার হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাদের অদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উল্লেখ করে তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছি।
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, যেহেতু বিচারক এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করেছে সুতরাং রায়টি পেলে, কাগজপত্র দেখে বিষয়টি আর একবার অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত করবো।
রাজাকার মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটু আটক থাকায় আইন অনুযায়ী রায় ঘোষণার দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আসামিদের আপিল করতে হবে।