দুই নেতা মারা গেছেন কয়েক মাস আগেই। তাদের একজনের মৃত্যু অসুখে। আরেকজন খুন হন আততায়ীর গুলিতে। কিন্তু থেমে নেই তাদের রেখে যাওয়া সেই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আধিপত্যের লড়াই। প্রয়াত সেই দুই নেতার সমর্থকরাই এখন যুদ্ধে লিপ্ত।
এই দ্বন্দ্বে গত দেড় বছরে নিহত এবং গুমের শিকার হয়েছে অন্তত ১৪ জন। যার সর্বশেষ বলি চার তরুণের জীবন। তাই নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিউয়ন এখন ‘টেঁটা-বল্লমের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান শাহেদ সরকার এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ৩০ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা সিরাজুল হক। তাদের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
তাদের এই শত্রুতা ছড়িয়েছে পাশের নীলক্ষা ইউনিয়নেও। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সিরাজুল হকের সমর্থক। আর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সমর্থন করেন শাহেদ সরকারকে।
চলতি বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান শাহেদ সরকার। এর কিছুদিন পর গত ৩ মে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। এ দুই নেতার মৃত্যুর পর অনেকেরই ধারণা ছিল, এলাকায় শান্তি ফিরবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার পর এলাকা ছাড়া করা হয় শাহেদ সরকারের সমর্থকদের।
খুনের ঘটনার কয়েক মাস পর এলাকা ছাড়া সমর্থকরা ফিরে আসার পর গতকাল শুক্রবার আবার শুরু হয় সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছে। অাহত হয়েছে দুইপক্ষের অসংখ্য মানুষ।
সকালে ওই সংঘর্ষের তোফায়েল হোসেন (১৮) নামে এক স্কুলছাত্রর মৃত্যু হয়। পরে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নীলক্ষা ইউনিয়নেও। গুলিতে গুরুতর আহত সুমন মিয়া (২৬) মামুন মিয়া (২৫) ও সুমন মিয়া (২৫) নামের তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, দুই বছর আগে ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন শাহেদ সরকার নির্বাচনে । কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দীনের সমর্থনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সিরাজুল হক। এরপর থেকেই মূলত শুরু হয় অশান্তির।
তবে সব পক্ষই বলছে, এই লড়াই ক্ষতি সবারই। তারা শান্তি চাইলেও একটি গোষ্ঠী এই বিরোধ দিনের পর দিন জিইয়ে রেখেছে। কারণ এখানে লাখ লাখ টাকার মামলা বাণিজ্য আছে। দুইপক্ষের পকেট থেকে সেই টাকা চলে যায় ওই গোষ্ঠীর পকেটে। কিন্তু মামলার শেষ হয় না।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, শুক্রবারের ঘটনা এখানেই থেমে থাকবে না। আবার শুরু হবে সংঘর্ষ। আবারো ঝরবে রক্ত। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?