যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি রাশেদ চৌধুরী এবং মোসলেমউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে লবিস্ট এবং আইনজীবী নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র সেখানে একটি নামকরা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান এবং অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের কথা নিশ্চিত করেছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মেজর (বরখাস্ত) রাশেদ চৌধুরী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমউদ্দিন ওরফে মোসলেহউদ্দিন।
‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। তাই আইনি অন্যপথে দুই খুনিকে ফিরিয়ে আনার জন্য লবিস্ট ফার্ম এবং আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে,’ বলে উচ্চ পর্যায়ের সূত্রটি চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বৈধ। এরকম প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার, কংগ্রেস এবং সিনেটের নীতি-নির্ধারণী মহলে ক্ষতিগ্রস্ত কারো পক্ষে অবস্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্রটি জানায়, বৈধ লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যে অাইনজীবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনিও উপযুক্ত জায়গায় আইনি লড়াই করে দুই খুনিকে বাংলাদেশে ফেরানোর ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে সরকার আশা করছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামীদের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে আগেও একটি লবিস্ট ফার্ম কাজ করছিলো।
‘এরকম নিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রে অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার, দণ্ডিত কাউকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তির মুখোমুখি করার উদ্যোগও একটি রাষ্ট্র এবং সরকারের জন্য স্বাভাবিক,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার তথ্যটি গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে প্রথম জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি সব উদ্যোগ নেবে সরকার। রাশেদ চৌধুরী এবং মোসলেমউদ্দিনসহ পালিয়ে থাকাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদীও তিনি।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস কি উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস) শামীম আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দূতাবাস সম্ভাব্য সবকিছু করছে। নিকট ভবিষ্যতে ইতিবাচক ফল পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলেও দু’ দেশের মধ্যে এরকম প্রত্যর্পণের উদাহরণ আছে।
৯০ দশকে সিনেটর বিল রিচার্ডসন নিজে ঢাকায় এসে এলিয়েডা ম্যাকর্ড নামে মার্কিন এক তরুণীকে দেশে নিয়ে যান। মাদক চোরাচালানের অভিযোগে বাংলাদেশে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন এলিয়েডা।
আর ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক আমলে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ল্যান্সারের মেজর (বরখাস্ত) মহিউদ্দিনকে। পরে অন্য আসামীদের সঙ্গে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মেজর (বরখাস্ত) বজলুল হুদাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো থাইল্যান্ড থেকে।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার দিনই বজলুল হুদাকে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় আনা হয়। এর আগেই অবশ্য আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি করেছিলো বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া রাশেদ চৌধুরী এবং মোসলেমউদ্দিন ছাড়াও আরো চারজন বিদেশে পালিয়ে আছে।
তাদের মধ্যে মেজর (বরখাস্ত) নূর যে কানাডায় আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সরকার। ধারণা করা হয় মেজর (বরখাস্ত) রশিদ লিবিয়া অথবা পাকিস্তানে এবং মেজর (বরখাস্ত) ডালিম পাকিস্তানে আছে। আর ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদ ভারতে লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হয়।
মনে করা হতো মোসলেমউদ্দিনও ভারতে লুকিয়ে আছে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে তার অবস্থান এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।