চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দুই কৃষকের মৃত্যুতে দায়ীদের কঠিন শাস্তি দিতেই হবে

বোরো ধান আবাদ করতে গিয়ে সেচের পানি না পেয়ে দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আত্মহত্যা করা কৃষকদের পরিবারের অভিযোগ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পরিচালিত গভীর নলকূপের অপারেটরদের দুর্নীতি, বৈষম্যমূলক আচারণ এবং অসহযোগিতার কারণে ওই দুই কৃষককে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুই কৃষক গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন। তারা হলেন দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘটু গ্রামের অভিনাথ মারান্ডি (৩৬) এবং তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি (২৭)। ঘটনার দিনই অভিনাথ মারা যান। তার দুইদিন পর ২৫ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রবি।

নিহত কৃষকের পরিবারের দাবি, ১০ থেকে ১২ দিন অপেক্ষার পরও ধানের জমিতে পানি নিতে না পারার ক্ষোভ থেকে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তাদের এই দাবি যে মিথ্যা নয়, তার প্রাথমিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। ঘটনার পর কয়েকটি গণমাধ্যম সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেচের পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে নলকূপের অপারেটরদের ভয়াবহ দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র। মূলত এইসব অপারেটররা কয়েক লাখ কৃষককে জিম্মি করে রেখেছে।

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে, সেচ প্রকল্পে প্রতি ঘণ্টা পানি পাওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত বিল ১২৫ টাকা। কিন্তু তার বদলে অপারেটরদের কয়েক গুণ বেশি টাকা দিতে কৃষকদের বাধ্য করে থাকেন। আবার বেশির ভাগই অপারেটর ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না। এসব অনিয়ম, দুর্নীতির কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি কৃষকরা। বছরের পর বছর এসব অপকর্ম চলে আসছে।

এমন নির্মম আর বেদনায়ক ঘটনার পর টনক নড়েছে প্রশাসনের। এখন বলা হচ্ছে, সেচের পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আজ মঙ্গলবার কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেছেন, কৃষকের আত্মহত্যার বিষয়ে পুলিশও তদন্ত করছে, তারা ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে। এরই মধ্যে তদন্ত কাজও শুরু করেছে কমিটি।

আমরা জানি, যে দুইজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে, তারা নিতান্তই দরিদ্র মানুষ। খেতে ফসল না ফলাতে পারলে তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হয়। সেই জন্যই পানি পাওয়ার জন্য তাদের এমন তাড়া ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন আশাহত হয়েছেন তারা। কোনোভাবেই তাদের কথায় মন গলেনি সেই পাষণ্ড অপারেটরের। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে অভিনাথ ও রবি এই নির্মম অবিচারের প্রতিবাদ করে গেছেন।

এটা ঠিক, তাদের এমন করুণ মৃত্যুর কারণেই আজ সারাদেশে তোলপাড় হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই- এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে; সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নলকূপ অপরারেটদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। আর নিরীহ দুই কৃষকে যে বা যারা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে; তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।