দুইশ’ তিনতম বৃহস্পতিবার:
সাবা খুব হাসি-খুশি গলায় বলল, ‘আমি কি তোমার ডান পা’টা একটু দেখতে পারি, জাস্ট দু-তিন সেকেন্ড।’
বিন্দু হয়ে মিলে যাওয়া ট্রেনটা থেকে চোখ ফেরাল রাহাদ। সরু অথচ হাসি বিনিময়ের চোখ, ‘মানুষ চোখ দেখে, হাত দেখে, হাতের রেখা দেখে, কখনো কখনো কপাল এবং কপালের ভাঁজও দেখে। তুমি দেখতে চেয়েছো পা।’ আরো একটু হেসে নিল সে, ‘তাহলে আমার জুতো খুলতে হবে যে!’
‘পাহাড় কেটে শিরির জন্য পানি এনেছিল ফরহাদ, তুমি খুলবে জুতো!’ গলার স্বরটা কেমন অন্যরকম শোনায় সাবার, ‘থাক, আমরা বরং ওই সদ্য জাগা চাঁদটাই দেখি।’
কিছুটা সামনে দাঁড়ানো প্রাচীন বটগাছটার দিকে তাকাল রাহাদ। পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝিলিক। তার একটু ডান পাশে, ছোপ ছোপ মেঘ ঘেঁষা চাঁদটা ঝকঝক করছে কাঁসার থালার মতো। তারই থই থই ছায়া পরেছে পায়ের কাছে।
‘আচ্ছা-।’ রেল স্টেশনের বেঞ্চে মেলানো রাহাদের হাতটা নিজের হাতে নেয় সাবা, ‘তুমি কি মনে করো কোনো কিছু মনে রাখার শক্তি তোমার আগের মতোই আছে।’
‘না। কারণ গতকাল আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছিল তার ৪০ শতাংশ ইতোমধ্যে আমি ভুলে গেছি, প্রতিটি মানুষ ভুলে যায়।’ সাবার একটা আঙ্গুল টানতে থাকে রাহাদ, ‘ভুলে গেছো তুমিও।’
‘হবে হয়তো।’
‘হবে হয়তো না, সত্যি সত্যি ভুলে গেছ। বলো তো।’ সাবার দিকে একটু ঘুরে তাকায় রাহাদ, ‘কাল সকালে ঘুম ভাঙার পর কোন কাজটা তুমি প্রথমে করেছো?’
‘মনে নেই।’ হাসতে হাসতে একটু কাত হয় সাবা রাহাদের দিকে।
‘তথ্য বেশি হয়ে গেলে মানুষের মস্তিষ্ক ইচ্ছে করেই অনেক তথ্য ভুলে যায়, যাতে সে নতুন তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে।’
‘আমার আবার কী কী তথ্য বেশি হয়ে গেল?’
‘সেটাও তোমার মনে থাকার কথা না। কনসাস মাইন্ডে সব হয় না। অগোচরে হয় সবকিছু।’
‘বাদ দাও। কঠিন লাগছে এগুলো। তোমাকে বরং একটা প্রশ্ন করি, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।’
চোখ সরু করে ফেলল রাহাদ, ‘বেশি গুরুত্বপূর্ণ, না একটু কম?’
‘কমও না, বেশিও না, গুরুত্বপূর্ণ।’
‘ওকে। তোমার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা শুনি।’
‘ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওযার পেছনে অন্তত পাঁচটি বড় কারণ আছে।’ সাবা গভীর চোখে রাহাদের দিকে তাকাল, ‘তার মধ্যে মাত্র একটা কারণ বলো তো।’
নিজের দু ঠোঁট পরষ্পর চেপে ধরল রাহাদ। ভাবছে সে। বেশ কিছুক্ষণ পর মিষ্টি একটা হাসি দয়ে বলল, ‘জানি না।’
‘একটু ভাবো।’
‘ভেবেই বলছি।’
‘অহংকার।’
‘রাইট।’
‘এটা কিন্তু আমার কথা না, একটি গবেষনালব্ধ ফল।’
‘কে করল এই গবেষণা?’
‘কিছু গবেষক।’
হুইসেল শোনা গেল হঠাৎ। লম্বা একটা আলোও মেলে আছে রেললাইন বরাবর। ট্রেন আসছে ওপাশ থেকে। এ স্টেশনে অবশ্য সব ট্রেন থামে না। তবুও চঞ্চল হয়ে উঠল চারপাশ। খোঁড়া যে ভিক্ষুকটা তার জোড়াতালি ক্রাচটা পাশে রেখে কুঁজো হয়ে বসে ছিল এতক্ষণ, সোজা হয়ে বসল সেও। কেবল যে চার-পাঁচটা কুকুর জটলা পেকে শুয়েছিল নিজের শরীরে মাথা গুজে, শুয়ে রইল তারা তেমনই।
চায়ের একটা দোকান আছে টং ঘরের মতো। শীতের মৃদু আভায় দু-চারজন চা খাচ্ছেন বসে সেখানে। দু হাঁটুর সঙ্গে থুতনি ঠেকিয়ে তা রসালো দৃষ্টিতে দেখছেন দোকানদার। সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে একজন থামলেন, এক শলাকা সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে ঠেসে কায়দা করে আগুন লাগালেন তাতে। তারপর আড়চোখে রাহাদ আর সাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে এগুতে লাগলেন সামনের দিকে।
‘ভাইজান, আরো এক কাপ করে চা দেব?’
‘দিন।’
চার দোকানদার চা নিয়ে আসলেন দু কাপ। দুজনের হাতে দিয়ে লম্বা বেঞ্চটার এক কোণায় বসলেন, ‘এই যে বটগাছটা দেখছেন, এখানে একটা মেয়ে ফাঁসী নিয়েছিল।’
‘কবে?’ রাহাদ প্রশ্ন করল।
‘কয়েক বছর তো হবেই।’
‘কেন?’ চমকে ওঠে সাবা।
‘কারণ তো কিছু জানা যায় নাই। দু দিন ওভাবেই ঝুলেছিল। কেউ নিতে আসে নাই। শেষে গ্রামের লোকজন মিইল্যা কবর দিছে।’
‘কত বয়স ছিল মেয়েটার?’
‘কত আর হবে-আঠার উনিশ।’
‘এত অল্পবয়সী একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল! নিজ বাড়ি ছেড়ে এই নির্জন জায়গায়!’ সাবার চোখে বিষ্ময়।
‘মেয়েটাকে কিন্তু এখনো এখানে দেখা যায়। মাঝে মাঝে অনেক রাত পর্যন্ত দোকানে থাকতে হয়। তখন মেয়েটাকে হাঁটতে দেখি ওই রেললাইন বরাবর। মাঝে মাঝে খিলখিল করে হেসেও ওঠে।’
সাবা একটা হাত খামচে ধরে রাহাদের। রাহাদ একটা হাসি দেয়, ‘আপনার দিকে তাকায় না কখনো?’
‘তাকায় তো। একবার বলেছিলাম-আম্মাজান এক কাপ চা খেয়ে যাও। শুনে কেবল খিলখিল করে হেসে উঠেছিল, কাছে আসে নাই। এই কথাটা আমার বিবিজানরে বলতেই তার কী উচাটন ভাব। আয়াতুল কুরসী পড়ে সত্তরবার ফুঁ দিয়েছিল আমাকে। তবে ভয় নাই। কারো ক্ষতি করে না সে।’ দোকানদার উঠে দাঁড়ান ঝট করে, ‘আপনারা বসেন, কাস্টমার আইসছে, দোকানে যাই আমি।’
দুইশ বাইশতম বৃহস্পতিবার:
দুটো ছেলে-মেয়ে মারা গেছে রেলে কাটা পড়ে-শুনে মন খারাপ হলো না তাদের। বরং পায়ের কাছে পড়ে থাকা নীলাভ প্রজাপতিটার ডানা কেটে যখন বুভুক্ষ পিঁপরের দল টেনে নিয়ে যাচ্ছিল বাসায়, সাবা তখন হাহা করে উঠল, ‘দেখেছো, কী সুন্দর একটা প্রজাপতি! আহারে, মারা গেছে!’
‘প্রজাপতি তোমার খুব পছন্দ।’
‘হ্যাঁ, খুব খুব।’ হঠাৎ বাতাসে উড়ো চুলগুলো ঠিক করতে করতে সাবা উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, ‘জানো, একদিন একটা প্রজাপতি এসে বসেছিল।’ নিজের কোলটা দেখায় সাবা, ‘ঠিক এখানে।’
‘প্রজাপতিটা ভাগ্যবান।’
‘কেন?’
‘ইচ্ছে হলেই ও তোমার কোলে বসতে পারে।’ রাহাদের চোখে দুষ্টমি, ‘কেবল আমি পারি না।’
‘ইশ, তুমি একটা ঠোঁট কাটা।’
‘আর তুমি হচ্ছো চোর-কাটা। বুকের ঠিক বাঁ পাশটায় আছো, গেথে। একটু অসাবধান হলেই-উহ্।’
কোনো কথা বলে না সাবা। চোখ তুলে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে আবার। চিবুকের এক পাশের আলোতে কেমন রহস্যময় মনে হচ্ছে ওকে, আরেক পাশের ছায়াতে মনে হচ্ছে মানবী।
‘তোমাদের দোতালায় দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি একদিন।’
‘ওটা আমার প্রিয় জায়গা। সামনের খোলা মাঠটার দিকে তাকালে প্রশান্তি জাগে মনে।’
‘তোমার চুল তখন বব কাটা ছিল।’
‘ওই একবারই কেটেছিলাম।’
‘অথচ লম্বা চুলেই তুমি মানানসই।’
‘যদিও ঝামেলা, কিন্ত লম্বা চুল আমি তোমার জন্যই রেখেছি।’
‘তোমার চুলটা আসলে দেখার না, অনুভবের।’
‘কেমন?’
‘কোনো কোনো সময় ঝটকা বাতাসে চুলগুলো যখন মুখ ছেয়ে যায় আমার, ওটা তখন চুল মনে হয় না আমার। তোমার জড়িয়ে ধরা অস্তিত্ব মনে হয়। আমি চোখ বুজে ফেলি আবেশে।’
দুইশ চৌত্রিশতম বৃহস্পতিবার:
‘সঙ্গী খোঁজার পেছনে একজন মেয়েী যতটা সময় ব্যয় করে তার চেয়ে অনেক বেশী সময় ব্যায় করে জুতো খোঁজার পেছনে।’ রাহাদ তার স্বভাবসূলভ দুষ্টমি চোখে তাকাল সাবার দিকে, ‘তুমি বিশ্বাস করো?’
‘করি।’ ঘাড় ঘুরিয়ে সাবা রাহাদকে দেতল, ‘সহজলভ্য জিনিসে মানুষ সময় ব্যয় করবে কেন, ভালো জুতো খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন।’
‘সত্য। মানুষ আজকাল কত সহজ হয়ে গেছে! অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না।’ রাহাদ একটু থামল, ‘কাল রাতে বুষ্টি হচ্ছিল, জানো?’
‘জানি।’
‘রাতের বৃষ্টি একদম ভালো লাগে না আমার।’
‘কেন?’ কপাল কুঁচকে ফেলে সাবা।
‘রাতে বৃষ্টি হলেই মনে হয় আকাশ কাঁদছে?’
‘শিশিরকে?’
‘শিশিরকে মনে হয় সমবেদনা।’
‘চমৎকার।’ হাসি হাসি ওঠে সাবার মুখটা।
‘প্রেমের ব্যর্থতায় হƒদয়ে আঘাত পেয়ে মৃত্যু হতে পারে মানুষের। এ ধরনের পরিস্থিতিকে ডাক্তারি ভাষায় বলে কার্ডিওমায়োপ্যাথি।’ রাহাদ আড়চোখে সাবার দিকে তাকাল, ‘সম্ভবত এই কার্ডিওমায়োপ্যাথি শব্দটা অভিধান থেকে উঠে যাবে কয়দিন পর।’
‘কেন?’
‘প্রেমের ব্যর্থতায় আজকাল আর কেউ হৃদয়ে ব্যথা পায় না। বরং হৃদয়কে অন্য জায়গায় স্থাপন করে। দুঃখ পাওয়ার মাঝে যে একটা মোহিত সুখ আছে, মানুষ তা ভুলে গেছে।’ রাহাদ সামনের দিকে তাকাল। বটগাছটার দিকে স্থির করে ফেলল চোখ, ‘দ্রæত একটা ছায়া সরে গেল না ওপাশ থেকে!’
‘তুমি দেখেছো?’ রাহাদের একটা হাত খামচে ধরে সাবা।
‘তুমি দেখেছো?’
‘হ্যাঁ, স্পষ্ট দেখেছি।’
‘ভয় পেয়েছো?’
‘একটু।’
‘ভয়ের কিছু নেই। ওটা একটা ছায়া।’ রাহাদ মুচকি হাসে আবার, ‘ছায়া আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে-ছায়াটি মানুষের, কিন্তু ছায়াটি মানুষ না।’
‘ওটা কি মানুষের ছায়া ছিল?’
‘না। বরং বলতে পারো-ছায়ার মানুষটি একদিন মানুষ ছিল।’
‘এসব কী বলছো তুমি, কেমন দুর্বোধ্য লাগছে সব!’
‘তোমার কি মনে হয় না পুরো জীবন প্রক্রিয়াটাই দুর্বোধ্য, দুর্বোধ্য একটা খেলা। সমস্যা নেই, এই খেলার নিয়ম কানুন একদিন শিখে ফেলবে তুমিও। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে-ততদিনে তুমি দেখবে তোমার হাতে ওই খেলাটা খেলারই সময় নেই।’
সাবা কিছু বলে না। দু হাত দিয়ে রাহাদের ডান হাতের বাহুটা চেপে ধরে মাথাটা ঠেকিয়ে দেয় ওর কাঁধে।
দুইশ একান্নতম বৃহস্পতিবার:
‘ডিভোর্স যদি বিয়ের ভবিষ্যত কাল হয়, বিয়ে তবে কী?’ জোছনায় ভেসে যাচ্ছে পুরো স্টেশন-বটের পাতা, রেলের পাত, চা-কাপের শরীর। সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে রাহাদ বলল, ‘বিয়ে হচ্ছে সেই অনুষ্ঠান, যেখানে নিজের অন্তিম যাত্রার ফুল নিজেই শোঁকা যায়।’
‘না-।’ সাবা বাগড়া দিল, ‘Marriage is not a noun; it’s a verb. It isn’t something you get. It’s something you do. It’s the way you love your partner every day.’ সাবার নরম গলা, ‘কথাটা যদিও আমার না, বারবারা অ্যাঞ্জেলিসের। খুব বিশ্বাস করি আমি কথাটা।’
‘তাই!’ রাহাদের মুখে দুষ্টমির হাসি, ‘এবার বলো তো-প্রেমের বিয়ে আর অ্যারেঞ্জড বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?’
‘এই পার্থক্যটা সবাই জানে।’
‘না, আসল পার্থক্যটা জানে না-প্রেমের বিয়ে মানে নিজের প্রেমিকাকে বিয়ে করা, আর অ্যারেঞ্জড বিয়ে হলো অন্যের প্রেমিকাকে।’
‘এটা খুবই বাজে একটা কথা।’
‘ওকে, বাজে কথা। ব্যাচেলর আর বিবাহিত পুরুষের মধ্যে পার্থক্য কি, এটা বলতে পারবে?’
‘বলতে না পারার কি কোনো কারণ আছে?’
‘আছে। কারণ তুমি আসল ব্যাপারটাই জানো না-বিবাহিত পুরুষ ব্যাচেলরের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে, কিন্তু বিবাহিতরাই সবচেয়ে বেশি নিজের মৃত্যু কামনা করে।’
‘এসব আজগুবি কথা তুমি কোথা থেকে যে পাও!’ সাবা হাত টেনে ধরল রাহাদের, ‘ওঠো তো। শেষবারের মতো এই জায়গাটা দেখে নেই।’
‘আমরা আর এখানে আসব না?’
‘না।’ সাবা একটু থেমে বলল, ‘এবার অন্য কোথাও।’
‘এই জায়গা খুব চমৎকার ছিল, না?’
‘এর পরের বৃহস্পতিবার থেকে আমরা যেখানে বসব, সন্ধ্যায়, সেটাও কয়দিন পর প্রিয় হয়ে উঠবে আমদের।’
‘এভাবে আর কতদিন?’
‘প্রতিদিন, অনেকদিন।’ সাবা প্রগাঢ় চোখে রাহাদের দিকে তাকায়, ‘লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করতে হয়।’ সাবার চোখ আরোও প্রগাঢ় হয়, ‘রবীন্দ্রনাথ বলেছেন।
‘আর ভালোবাসা হচ্ছে সদ্য লাগালো চারার মতো, প্রয়োজন-প্রতিদিন নার্সিং। নইলে মরে যাবে এক সময়।’ দু হাত দিয়ে সাবার চিবুক চেপে রাহাদ গভীর করে ফেলে তার নিঃশ্বাস, ‘মাঝে মাঝে আমরা নিজেরা নিজেদের চিনতে পারি না; চিনতে পারি না নীলাভ আকাশ, সোনালু জোছনা, ডানা ঝাপটানো প্রজাপতি। কখনো কখনো এমনও হয়-প্রচÐ অচেনা মনে হয় সবকিছু, তোমাকে-আমাকেও।’
‘তারপর?’ গাঢ় হয়ে আসে সাবার নিঃশ্বাসও।
‘তারপর-।’ অসংলগ্ন মোদির হয়ে ওঠে রাহাদের গলা। সঙ্গে সঙ্গে খিলখিল করে হেসে ওঠে সাবা, ‘ছাড়ো তো। স্টেশনের এই প্রকাশ্য আলোতে…মানুষ ভাববে কী! চলো, বাসায় চলো। বাচ্চা দুটোকে এভাবে বাসায় রেখে আসতে মন খারাপ হয়ে যায়।’
‘আমারও।’ গলাটা এবার সত্যি সত্যি ভিজে যায় রাহাদের, ‘আমাদের যুগল বন্দীর আজ এগার বছর, না?’
সাবা আর কিছু বলে না। হাত টেনে এগুতে থাকে সামনের দিকে। পেছনে, বটগাছটার কাছে, কে যেন হঠাৎ হেসে ওঠে খিলখিল করে। সাবা আর রাহাদ শুনতে পায়।
আর কেউ না।