ছয় বছর আগে যে লর্ডসে দুঃস্বপ্নের শুরু হয়েছিল; সেই মাঠেই আমিরের নতুন স্বপ্নযাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। ক্রিকেট তীর্থে তার ফেরার ম্যাচ শুরু বিকেল ৪টায়। এই ম্যাচকে সামনে রেখে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দুদলকে ছাপিয়ে সব আলো পড়েছে ২৪ বছরের এ তারকার ওপরে।
২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে মোহাম্মদ আমিরসহ পাকিস্তানের তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে। পরে এ ঘটনায় ইংল্যান্ডে জেল খাটেন আমির। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পাঁচ বছর নির্বাসনে ছিলেন। জেল হয় তার অন্য দুই সতীর্থ তৎকালীন অধিনায়ক সালমান বাট ও পেসার মোহাম্মদ আসিফের।
দীর্ঘ বিরতি পর চলতি বছর আবার দেশের জার্সি গায়ে তােলার সুযোগ পান আমির। তবে সেটা এতো সহজে হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে তো ছিলই, নিজ দেশের বাঘা বাঘা অনেক সাবেকও আমিরের মাঠে ফেরার ঘাের বিরোধী ছিলেন। শুধু সাবেকরা কেন, তার দলের বর্তমান সতীর্থদের অনেকেই পষ্ট করে বলেছিলেন আমির ফিরলে দলের হয়ে খেলবেন না তারা। যার জন্য মাঠ থেকে কেঁদেও ফিরতে হয়েছিল এই পেসারকে।
অনেক বিরোধীতা যেমন ছিল তেমনি সহানুভূতিও পেয়েছেন। ইমরান খান থেকে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস থেকে শহিদ আফ্রিদ সবাই আমিরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বেকে বসা দু-একজনও তাকে মেনে নিয়েছেন।
যেকোনাে ইভেন্টের একজন খেলেয়াড়ের জন্য পাঁচ বছর বিরাট সময়। এতো সময় বাইরে থেকে নিজের আসল কাজটা ধরে রাখা বেশ কঠিন। তবে আমির যেন আন্তদহণে আরো খাঁটি হয়েছেন। নির্বাসন শেষে মাঠে ফিরেই আমিরের ঝড়। কায়দে আজম কাপে প্রথম চার ম্যাচেই ২৬ উইকেট তুলে নেন তিনি। এর পর আর পেছেন তাকাতে হয়নি তাকে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দারুণ শুরু পর পিসিএলে সমান উজ্জ্বল পারফের্মেন্স তার। ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকটাও তুলে নেন সেখানে।
এর পর নিউজিল্যান্ড সফরের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানড নিজের সেরাটা প্রমাণের পর ঝলক দেখান ভারতে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপেও। এক স্পেলেই মামুলি টার্গেটে ব্যাট করতে নামা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
শর্টার ভার্সনের পর ক্রিকেটের মূল মঞ্চে আজই হয়তো আসীন হবেন ওয়াসিম-ওয়াকারদের অন্যতম সেরা উত্তরাধিকারী। ইংল্যান্ডের মাটিতে মোহাম্মদ আমিরের রেকর্ডটা দারুণ উজ্জ্বল।
১৪ টেস্টে নেয়া ৫১ উইকেটের মধ্যে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে মাত্র ৬ টেস্টে আমিরের শিকার ৩০ উইকেট। গড় নিজের সেরা ১৯ দশমিক ৮০। আছে ৮৪ রানে নেওয়া ৬ উইকেটের বোলিংও। ১৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে যে তিনবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তার দুটিই ইংলিশদের বিপক্ষে। অথচ ক্যারিয়ারের বাকি ৮ টেস্টে ৪৪ দশিমক ৬২ গড়ে আমিরের শিকার ২১ উইকেট।
বিপিএল, পিসিএল ও ওয়ানডে-টি২০ পর ইংল্যান্ডে আমিরের প্রত্যাবর্তনটা কেমন হবে? সেটা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে। তবে আমির যে আলো ছড়াবেন তার প্রমাণ রেখেছেন প্রস্তুতি ম্যাচেও। দুটি অসাধারণ বোল্ডসহ মার্কাস টেসকোথিস্ককে যে সুইংয়ে ফিরিয়েছেন তাতে সমারসেটের বিপক্ষে দুরন্ত বোলিং করা সেই পুরনো আমিরকেই মনে করিয়েছে।
সমারসেটের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে আমিরের সেই অসাধারণ বোলিং দেখুন-