করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতজুড়ে। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, আক্রান্ত হচ্ছেন কয়েক লাখ করে। চারিদিকে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার! বিশেষ করে দিল্লীর কোথাও প্রয়োজন মতো অক্সিজেন মিলছে না। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন সংকটে পড়েছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার বড় বোন বন্যা।
চ্যানেল আই অনলাইনকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এমনটাই জানান ফারিয়া।
এরআগে বুধবার রাতে নিজের ফেসবুকে শবনম ফারিয়া বোনের জন্য দোয়া চেয়ে লিখেন, আমার বাবা ডাক্তার ছিলেন। সবার সব অসুস্থতায় বাবার কাছে আসতো। আজকে দিল্লীতে আমার বোন অক্সিজেন এর অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা হেল্পলেস, কিছু করার নাই। আমরা পরশু পর্যন্ত মার কাছ থেকে পুরা বিষয়টা গোপন করে রেখেছি। কালকে মোঝবোন বললো, “তৃপ্তি আম্মু দোয়া করলে যদি বন্যা ভাল হয়ে যায়, চল আমরা আম্মুকে জানাই“।
ফারিয়া লেখেন, গত দুইদিন আমার মার মুখের দিকে তাকানো যায় না, তার বড় মেয়ে, ১৮ বছর বয়সে তার মেয়ে হইসে, যখন সে নিজেই বাচ্চা… সেই মেয়ের এই অবস্থা তো তার সহ্য হয় না। তাও এতো দূরে এখন! আমরা আসলে কাছের মানুষদের উপরই বেশি অভিমান করি, কষ্ট পাই, রাগ করি, আর সম্ভবত সেজন্যেই তারা কাছের মানুষ! দূরের মানুষের সাথে আর কিসের রাগ!
শবনম ফারিয়ার বড় আরও দুই বোন রয়েছেন। তার কথা উল্লেখ করে জনপ্রিয় এ তারকা লিখেছেন, আমার বড় বোন আমার ১৬ বছর আর মেঝো বোন প্রায় ১২ বছরের বড়। আমার সারাজীবন কষ্ট ছিল, অন্যদের বোনদের সাথে যেমন বন্ডিং থাকে আমার নাই। ইনফ্যাক্ট আমার বড় দুইবোনের নিজেদের মধ্যে যেই বন্ডিং সেইটা আমার সাথে নাই। আমার বয়স যখন সাড়ে তিন, বড় আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। ৫ বছর বয়সে ছোট আপু পড়াশুনার জন্য বাসার বাইরে তারপর তো বিয়েই হয়ে গেল আপুর। আমি সেভাবে কখনো আমার বোনদের সাথে থাকি নাই, বরং আমার ভাগ্না-ভাগ্নি আমার বন্ধু।
বয়সে যুগের পার্থক্য থাকায় আমার সাথে ওদের একটা জেনারেশন গ্যাপ সব সময়ই প্রকট। তার উপর তাদের সবসময় মনে হতো “ভাল ফ্যামিলির মেয়েরা মিডিয়াতে কাজ করে না”। এইটা নিয়ে আমার দুঃখের সীমা-পরিসীমা নাই। কখনো উৎসাহ দূরের কথা, পারলে দুই-চারটা কথা শোনানোর সুযোগ পেলে মিস করে না। কষ্টের উপর ডাবল কষ্ট।
বড় বোনের অসুস্থতার প্রসঙ্গে ফারিয়া লেখেন, পরশু আমার বড় আপু যখন বললো, “তৃপ্তি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে” আমি জানি ফোনটা রেখে আমি কতক্ষণ হাউমাউ করে কেঁদেছি! আমার মেঝো বোন কল করে কাঁদতে কাঁদতে যখন বললো “তৃপ্তি আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, আমি এতো মানুষকে খাওয়াই, আমার বোন বিদেশে শুয়ে খাওয়ার কষ্ট পাচ্ছে” কী বলে আমার বোনের স্বান্তনা দিবো।
সবশেষ এ অভিনেত্রী দোয়া চেয়ে লিখেছেন, কিছু ঘটনা আসে, তখন বুঝতে পারি আমাদের জীবনে তারা কত স্পেশাল, তাদের আমরা কত ভালবাসি, তারা কত কিছু করে আমাদের জন্য… সবার কাছে একটা অনুরোধ, আপনার দোয়ার সময় আমার বড় আপুর কথা একটু স্বরণ করবেন। ঢাকায় বসে আসলে দোয়া করা বা দোয়া চাওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নাই।