ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণের তীব্রতা সময়ের সঙ্গে আরও বাড়ছে। শহরের বাতাসে তৃতীয় দিনের মতো জমে থাকা বিষাক্ত কণাযুক্ত ‘স্মগ’ বা ধোঁয়াশা প্রতি ঘণ্টায় আরও বেশি গাঢ় হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমনকি পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শহর ছেড়ে চলে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
ভারী কুয়াশার চেয়েও ঘন এই ধোঁয়াশা তৈরি হয় বাতাসে তীব্র ধোঁয়া আর সূক্ষ্ম বস্তুকণিকা মিলে। এই স্মগে রয়েছে প্রাণীকূলের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পিএম ২.৫ নামের সূক্ষ্ম বস্তুকণা, যার সূক্ষ্মতা মানুষের চুলেরও ৩০ ভাগের এক ভাগ। এই কণাগুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে খুব সহজেই ফুসফুসের অতি গভীরে চলে যেতে পারে। বেশি পরিমাণে এই কণা ফুসফুসে ঢুকলে তা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।
এই পিএম ২.৫ কণার পরিমাণ কোনো এলাকার বাতাসে সর্বোচ্চ ৫০ পর্যন্ত থাকাটা নিরাপদ। অথচ দিল্লিতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আমেরিকান দূতাবাসের পক্ষ থেকে পরীক্ষা করে পিএম ২.৫ এর পরিমাণ পাওয়া যায় ৬০৮। অথচ তার এক ঘণ্টা আগেই পরিমাপ করে পিএম ২.৫ পাওয়া গিয়েছিল ৫৯১।
তীব্র বায়ুদূষণে দিল্লিবাসী অনেকেই মাথাব্যথা, কাশি এবং চোখ জ্বালাপোড়া করার অভিযোগ করেছেন। বিষাক্ত দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় অনেকেই থাকছেন ঘরের ভেতরে। শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলোও বৃহস্পতিবার ছিল প্রায় ফাঁকা।
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমাতে সরকার দিল্লি জুড়ে দূষণজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে শহরে সব ধরণের নির্মাণকাজ এবং বাইরে থেকে ট্রাক প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৬ হাজার স্কুলের সবগুলোই পুরো সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির প্রতিবেশী পাঞ্জাব ও হরিয়ানা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন যেন সেসব অঞ্চলের কৃষকরা শীতে গম চাষের জন্য এখন ক্ষেতের বর্জ্য না পোড়ায়।
দিল্লি হাইকোর্ট আগামী তিনদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আমলাদের জরুরি বৈঠকে বসার আদেশ দিয়েছেন। দূষণ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিও সেখানে থাকবেন।
দিল্লির বায়ুদূষণ ভয়াবহ অবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং প্রতি বছর এমন স্মগ সৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছেন, ২ কোটি মানুষের আবাস দিল্লি নগরী একটা ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছে। ধোঁয়াশা কমিয়ে বাতাস স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রীয় সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেবে।