মাশরাফী-সাকিবরা দেশ-বিদেশের যে প্রান্তেই খেলেন, সালমা-রুমানারা ম্যাচের আপডেট রাখেন। মিরপুরে খেলা হলে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসে উৎসাহ যোগান টাইগ্রেসরা। রোববার দুপুরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। কুয়ালালামপুরে খেলছে টিম টাইগ্রেস, আর মিরপুরে অনুশীলনের ফাঁকে ফাঁকে আপডেট রাখছেন তামিম-মুশফিকরা।
মেয়েদের এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ যতই এগোল, বিসিবি কার্যালয়ের প্রথম তলা ও দ্বিতীয় তলার রিসিপশনের টিভির সামনে দর্শকদের ভিড় বাড়তেই থাকল। বিসিবির স্টাফ ও সংবাদকর্মীরাই অবশ্য মূল দর্শক তখন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রস্তুতি অনুশীলনে ব্যস্ত ক্রিকেটাররা উল্লাস শুনেই বুঝে গেলেন মেয়েদের হাত ধরেই আসতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসের প্রথম শিরোপা।
শেষ মুহূর্তে তাই নিজেদের আর অনুশীলনে রাখতে পারেননি তামিম-মুশফিকরা। সালমাদের জয় দেখতে সোজা ড্রেসিংরুমে ঢুকে বসে যান টিভির সামনে। লাল-সবুজদের জয় টাইগাররা উদযাপনের পাশাপাশি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেটি ফেসবুকে পোষ্ট করে ফিরে যান অনুশীলনে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, মেয়েদের নিয়ে গর্বের কথা। সংবাদকর্মীদের প্রশ্নে উঠে এলো মেয়েদের বোনাস প্রসঙ্গও। দেশের ক্রিকেটের প্রথম শিরোপা যাদের হাত ধরে এলো, তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে কী থাকবে? জবাবে নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানালেন, সোমবার বোর্ড সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
মেয়েদের বেতন, ম্যাচ ফি বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়নি বিসিবি। সালমা-রুমানারা এশিয়ার সেরা হওয়ায় এবার বোর্ড কর্তাদের মুখে ফুটতে পারে হাসি। বিসিবির তরফ থেকে তাতে বেতন, ম্যাচ ফি বৃদ্ধির সঙ্গে মোটা অঙ্কের বোনাস ঘোষণা শোনারও অপেক্ষায় দেশের মানুষ।
মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রস্তুতির জন্য আসা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মুখেও শোনা গেল বোনাসের আলাপ। সিনিয়র এক ক্রিকেটার তো বলেই ফেললেন, নারী দলকে কমপক্ষে এক কোটি টাকা বোনাস দেয়া উচিত।
নিধাস ট্রফির ফাইনালে উঠেই তামিম-মুশফিকরা বিসিবি থেকে পেয়েছিলেন এক কোটি টাকার বোনাস। সেই সাফল্যের চেয়ে মেয়েদের এই সাফল্য নিশ্চিতভাবেই আরও অনেক বড়। কেননা দ্বিপাক্ষিক সিরিজের বাইরে বহুজাতিক আসরের প্রথম ট্রফি আনার সম্মান বাংলাদেশ পেয়েছে মেয়েদের হাত ধরেই। আরও বড় ব্যাপার হল, মেয়েদের মাঝে কতটা সম্ভাবনা আছে সেটি তারা এশিয়ার সেরা হয়ে তুলে ধরেছে বিশ্বের সামনে।
বিসিবির অধীনে মেয়েদের একমাত্র লিগে ৬০০ টাকা ম্যাচ ফি নিয়ে কম হইচই হয়নি। যদিও পরে জানা গেছে কাগজে-কলমে ৬০০ টাকা আসলে টিএডিএ। জাতীয় লিগে মেয়েদের জন্য ম্যাচ ফি’র কোনো ব্যবস্থাই এখনও করতে পারেনি বিসিবি। গত বছর টিএডিএ ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়।
কুয়ালালামপুরে এশিয়া কাপের ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে হারাতে স্নায়ুর কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে নারী দলের ক্রিকেটারদের। ১ বলে ২ রানের সমীকরণ মেলানো উইনিং শট খেলেন পেসার জাহানারা আলম। এরপরই বুনো উল্লাস। কিনরারা ওভাল মাঠ মেয়েদের সাফল্য ফিরিয়ে নিয়ে আসে ১৯৯৭ সালে আকরাম-বুলবুলদের কিলাত কিলাব মাঠের আইসিসি ট্রফি জয়ের স্মৃতি। সেখান থেকেই হয়েছিল দেশের ক্রিকেটের পালাবদল। এবার হয়ত দেশের নারী ক্রিকেটেরও তেমন কিছুই হবে! তার আগে মেয়েদের বেতন-বোনাস ভাগ্যেও পরিবর্তন আবশ্যক।