দিনাজপুরের বিরলে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। দখল করে নিয়েছে পরিবারটি’র উপার্জনের একমাত্র প্রতিষ্ঠান স্কুল। প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে স্কুলের পরিচালকে ওই স্কুল থেকে বিতাড়িত করেছে ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার প্রাণকেন্দ্র কালিয়াগঞ্জ বাজারে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালিয়াগঞ্জ মেমোরিয়াল ক্যাডেট স্কুল। শুরুতেই চার জন এর অংশিদারিত্ব থাকলেও পাওনা মুনাফা ও লভ্যাংশ নিয়ে সাদ্দাম হোসেন নামে একজনকে অন্য তিনজন লিখিতভাবে দায়িত্ব অর্পণ করে চলে যায়। ওই ধর্মপুর ইউনিয়নের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ মাস্টারকে ওই স্কুল কমিটি’র সভাপতি করা হয়। কিন্তু, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজ গৃহশিক্ষককে প্রধান শিক্ষক করে স্কুলের বৈধ পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক সাদ্দাম হোসেনকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয় আব্দুল মজিদ মাস্টার।
ওই ঘটনার শিকার হওয়া স্কুলের পরিচালক সাদ্দাম হোসেন জানায়: শুধু তাকেই নয়, এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় আরো কয়েকজন শিক্ষককেও বিতাড়িত করে ওই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তার মা নুর সাফা বেগম একজন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে।
সাদ্দামের মা নুর সাফা বেগম অভিযোগ করেন: তার ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে কর্মসস্থানের পন্থা হিসেবে জায়গা-জমিন বিক্রি করে ওই কালিয়াগঞ্জ মেমোরিয়াল ক্যাডেট স্কুলটি গড়ে দেয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আব্দুল মজিদ মাস্টার নিজ গৃহশিক্ষককে প্রধান শিক্ষক করে স্কুলের বৈধ পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক সাদ্দাম হোসেনকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়ায় তারা এখন খুব কষ্টে আছেন। সাদ্দাম হোসেন বেকার হয়ে পড়ায় তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে আব্দুল মজিদ মাস্টারের নিয়োজিত বর্তমানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কমল জানান, স্কুলটি আব্দুল মজিদের নামে দলিল করা রয়েছে। স্কুলের আরেকজন সহকারী শিক্ষক আক্কাসও স্কুলটি আব্দুল মজিদের নামে দলিল করা রয়েছে বলে জানালেও দুইজনের একজনও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ মাস্টার জানান, তার রাজনৈতিক ইমেজ নষ্ট করার জন্য কতিপয় ব্যক্তি উঠে পড়ে লেগেছে। মিথ্যা কুৎসা রটাচ্ছে। কালিয়াগঞ্জ মেমোরিয়াল ক্যাডেট স্কুলটি যাতে বিনষ্ট না হয়, এজন্য তিনি প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সাদ্দাম হোসেনের অসৎ আচরণ আর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অনেক শিক্ষক বরং ওই স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তাই তিনি স্কুলটি রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি সাদ্দাম হোসেনকে বের করে দেননি। সাদ্দাম নিজেই বের হয়ে গেছেন।
স্থানীয় ৮ নং ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র সরকার জানান, তিনি সাদ্দাম হোসেনের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আব্দুল মজিদকে ৩ বার নোটিশ দিয়ে ডেকেও পায়নি। সাদ্দাম হোসেনের বৈধ দলিল, কাগজ-পত্র রয়েছে এবং সাদ্দামেই ওই স্কুলের পরিচালক বলেও জানান তিনি।
শুধু স্কুল দখল নয়, বন বিভাগের গাছ নিধন ও অন্যের জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে আব্দুল মজিদ মাস্টারের বিরুদ্ধে। আব্দুল মজিদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পেতে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।