‘আপনার অপ্রয়োজনীয় কাপড় ও জিনিসপত্র এখানে রেখে যান, প্রয়োজনীয় কাপড় ও জিনিসপত্র এখান থেকে নিয়ে যান’ এমন লেখাযুক্ত দেয়ালে হ্যাঙ্গারে ঝোলানো রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবিসহ আরো অনেক কিছু। নিচে লাল কাপড়ের টেবিলে সাজানো রয়েছে সেমাই, চিনি, রয়েছে নতুন শাড়ি,পাঞ্জাবি ও লুঙ্গী।
গরিব,অসহায় দুঃস্থ মানুষ যাদের শাড়ি, লুঙ্গী, সেমাই, চিনির প্রয়োজন তারা এখান থেকে একে একে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের দরকারি জিনিস। বলছি অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের জন্য দিনাজপুরের বিরামপুরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘‘মানবতার দেয়াল’’-এর কথা।
গত ২০মে এই ‘মানবতার দেয়াল’টি উদ্বোধন করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি শিবলী সাদিক। উপজেলার কাটলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দেয়ালে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা “আলোর ঠিকানা”র উদ্যোগে এ মানবতার দেয়াল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘মানবতার দেয়াল’এ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারিবদ্ধভাবে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। টেবিলের উপর রাখা সেমাই, চিনি, শাড়ি, লুঙ্গী একে একে যার যেটা প্রয়োজন তিনি সেটা নিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয় আবেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ঈদে তার সেমাই, শাড়ি কেনার মতো কোন সম্বল নাই তাই ‘মানবতার দেয়াল’ থেকে সেমাই, কাপড় নিলাম।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, এই মানবতার দেয়ালটিতে প্রতিদিন মানুষ এসে তার প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে যাচ্ছে আবার কেউ নিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি বিরল ঘটনা। এই এলাকায় আগে কখনো এমন উদ্যোগ কেউ নেয়নি। আসলেই এটি ‘মানবিকতার জন্য মানবতার দেয়াল’।
কথা হয় ‘মানবতার দেয়ালের’ উদ্যোক্তা সেচ্ছাসেবী সংগঠন আলোর ঠিকানা’র চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী নূরের সঙ্গে। তিনি বলেন, অসহায় মানুষের মুখে আলো ফোটানোই এই মানবতার দেয়ালের প্রধান উদ্দেশ্য। কিছু মানুষের অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু আছে যে অন্য কারো প্রয়োজন হতে পারে এটিই মানবতা।
স্থানীয় কাটলা ইউপির চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করার মত মহৎ কাজ এই দুনিয়াতে আর নেই। আর এ কাজটি করার জন্য “আলোর ঠিকানা”র নিবেদিত সদস্যরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসিত এবং সবার জন্য অনুপ্রেরণার।
তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের উচিৎ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমরা হেলায় অনেক কিছুই নষ্ট করি। সেটা না করে বস্তুটি যেন হয় মানব কল্যাণের সেই দিকে সবার আগে নজর দেয়া উচিত।