চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা বনাম ৫৭ ধারা

৩ মে এমন এক সময়ে আমরা ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০১৭’ পালন করতে যাচ্ছি যখন বাংলাদেশে সাংবাদিকতার নামে উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রেস কাউন্সিলসহ অন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় না গিয়ে ৫৭ ধারা নামক ‘কালো আইনে’র ব্যবহার করায় একজন সাংবাদিক গ্রেফতার হয়ে ‘চাঁদাবাজি’র অন্য একটি মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন। দিবসটিকে সামনে রেখে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতিতে মুক্তমত পালনের পরিবর্তে দমননীতির কারণে সরকারের সমালোচনা করেছে। তাদের প্রতিবেদনে সংবাদকর্মীদের হেনস্থা, কাজে হস্তক্ষেপ, কঠোর আইনের মাধ্যমে অপরাধী কার্যক্রমের অভিযোগ আনা এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমগুলো স্ব-সেন্সরশিপ করতে বাধ্য হয় বলেও তারা অভিযোগ এনেছে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ এর করা ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-২০১৭’ এখানে উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪ এ থাকলেও ১৮০টি দেশের মধ্যে এবার তা ১৪৬। ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’-কে সামনে রেখে সরকার এ ইনডেক্সকে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবে বলে আমরা আশা করছি।দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘ক্রান্তিকালে সমালোচকের দৃষ্টি: শান্তিপূর্ণ, ন্যায়নিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’। আমরা মনে করি, শান্তিপূর্ণ, ন্যায়নিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে। তবে আমাদের দেশে শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠার বদলে আমরা গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকারও প্রত্যক্ষদর্শী। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সনের বদলে যখন কি-বোর্ড, মনিটর আর ডিভাইস জায়গা দখল করে নিচ্ছে, তখন আমরা অনেকক্ষেত্রেই সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা উঠে যেতে দেখছি। আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই উন্নয়নে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব, অসত্য প্রতিবেদন এবং দেশের মৌলিক আদর্শের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির অপকর্মকে আমরা কোনভাবেই সমর্থন করি না। মুক্ত গণমাধ্যমের দাবির পাশাপাশি গণমাধ্যমের কাছে আমরা কেন পেশাদারিত্বের এই বিষয়টি আশা করবো না? মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের এবারের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে আমরা শান্তিপূর্ণ, ন্যায়নিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের অগ্রণী ভূমিকা দেখতে চাই। সেই ভূমিকার ক্ষেত্রে বৈরিভাব নয়, বরং সরকারকে আমরা গণমাধ্যমের সহযোগী হিসেবে পেতে চাই। সেজন্য আমরা দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার যেমন সমালোচনা করতে চাই তেমনি এটাও দেখতে চাই যে কোনভাবেই যেন আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার না হয়। একটিও দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এ আইনের ব্যবহার মানে দায়িত্বশীল এবং সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধেও এ কালো আইনের অপব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া।