ম্যাচের তখন ৩৭ মিনিট। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাছাইপর্বে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে জমাট রক্ষণ সাজিয়ে বাধার দেয়াল বানিয়ে রেখেছে ভিয়েতনাম। গোলের জন্য মরিয়া হয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণে সেসময় জোরাল এক আক্রমণ শানায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
ফরোয়ার্ড সাজেদার কল্যাণে শামসুন্নাহার জুনিয়রের শটে অবশেষে প্রতিপক্ষের রক্ষণদেয়াল ভাঙে। গোল উদযাপনে ব্যস্ত লাল-সবুজের কিশোরীরা হঠাতই অবাক হয়ে খেয়াল করলেন সহকারী রেফারির সিদ্ধান্ত গোলের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও অফসাইডের বাঁশি বাজিয়ে বসে আছেন অস্ট্রেলিয়ান রেফারি ক্যাথেরিন জেসউইচ!
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে রেফারি প্রসঙ্গ আসতেই ক্ষোভ ঝাড়লেন কোচ গোলাম রব্বানী। তার মতে ছোট দলগুলোর বিপক্ষে রেফারির এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ম্যাচে অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়। একাধিকবার এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়ার পরও প্রতিকার না পাওয়ায় বেশ ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ কোচ।
‘আগে তো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিকে খেয়াল করতে হবে। উনি একজন সিনিয়র রেফারি। ২০১৪ সালে ঢাকাতেই উনি আমাদের খেলা চালিয়েছেন। অফসাইড হতেই পারে। আমার প্রশ্ন হল প্রথমে গোলের সিদ্ধান্ত দিয়ে কেনো পরে অফসাউড দেয়া। দ্বিতীয় গোলেও উনি এমনটা করলেন।’
শুধু সেটিই নয়! রোববার বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে ক্যাথেরিনের আরও দুই সিদ্ধান্ত। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে তহুরা খাতুনের গোলটি ছাড়া ৩৭ ও ৫৬ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে অভিজ্ঞ এ নারী রেফারির বাতিল করা দুই গোলের সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে বিতর্ক! ম্যাচে সাইডরেফারি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক নারী রেফারি রিনি কগহিল, যার সিদ্ধান্ত গোলের পক্ষে গেলেও পরে ক্যাথরিন নিজের সিদ্ধান্তে বাতিল করেছেন ওই গোল দুটি। অথচ টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে দুটি গোলই পেতে পারতো বাংলাদেশ!
কেবলমাত্র রোববারের ম্যাচেই নয়। ক্যাথেরিন বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন আগেও। ২০১৪ সালে একই আসরে তার এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে চোখে পানি গড়িয়ে ছিল লাল-সবুজ মেয়েদের। ভিয়েতনামের বিপক্ষে সময়মত ২ গোলের জয় না পেলে গোলাম রব্বানীর ছোটনের দলকে ভুগতে হত এ ম্যাচেও।
‘আমরা সবসময় এমন দুশ্চিন্তায় থাকি। রাতে ঘুমাতে পারি না। আমাদের জীবন চলে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমরা আগেও বলেছি। উনারা বলেন যে, রেফারিই সঠিক। বাইরে যারা থাকেন তারা কিছুই বুঝি না। আসলে এটাই বাস্তবতা। সাফ হলে বলেন রেফারিরা শিখতে এসেছেন। আর এএফসি বলে তাদের রেফারিরা এলিট। আসলে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। সাফে তো আমাকে মাঠ থেকে বের করে দেয়ার ধমকও দেয়া হয়েছে।’ ক্ষোভের সঙ্গে যোগ করেন কোচ ছোটন।
রেফারির এমন বিতর্কের পরও শিষ্যদের খেলায় খুশি ছোটন। স্বল্প সুযোগকে গোলে রূপান্তর করতে পারায় খেলায় উন্নতি দেখছেন তিনি। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার পরও আনন্দে উদযাপন দীর্ঘ করবে না তার দল। কারণ ২৬ তারিখ এই দলের মোট ১৩ জনসহ বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৮ নারী দল উড়াল দেবে ভুটানে। সেখানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে অনুশীলনে নেমে পড়বে তার শিষ্যদের।