একজন গরীব মানুষকে ‘দারিদ্র্যের ফাঁদ’ থেকে কীভাবে ধাপে ধাপে বের করে আনা যায়, তা গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বকে দেখিয়ে এবছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি, তার স্ত্রী এসটার ডুফলো এবং তাদের আরেক সঙ্গী মাইকেল ক্রেমার।
মূলত ২০০৪ সালে প্রকাশিত ‘পুওর ইকোনমিকস’ বইয়ে তারা বলেছিলেন, অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এই ফাঁদ থেকে বের করে আনার জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত কিছু দক্ষতা, ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ়তা। তা না থাকলে চরম দরিদ্র মানুষগুলোকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেঙে বের করে আনাটা অসম্ভব।
এখানে নতুন বিষয় হলো নোবেল বিজয়ীদের ওই গবেষণায় উঠে আসে বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অতি দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সাফল্য। এই পদ্ধতিটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতেই তারা গবেষণায় নেমেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা দেখিয়েছেন, অত্যন্ত গরীব মানুষগুলোর কাছে শুধু টাকার অভাব না, অভাব আরও অনেক কিছুরই। বিশেষ করে দারিদ্র্য থেকে বের হতে ন্যূনতম জ্ঞানও থাকে না তাদের। এমনকি নিজেদের যোগ্যতা সম্পর্কেও আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে সেইসব গরীব মানুষের।
আরো সহজ করে বললে, শুধু টাকা দিয়েই ‘দারিদ্র্যের ফাঁদ’ থেকে গরীব মানুষকে বের করা যায় না। আর এ জন্যই অভিজিৎ ব্যানার্জি এবং তার সঙ্গীদের এ গবেষণাকে দারিদ্র্য দূরীকরণে নতুন দিশা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। বলা হচ্ছে, এটা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার নতুন হাতিয়ার। যা দিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি গরীব মানুষকে স্বাবলম্বী করা সম্ভব।
এই গবেষণা আমাদের বাংলাদেশের জন্য কতটা উপযোগী? আমরা জানি, সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য কমানোর পরিকল্পনা করেছেন। এ জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, জিডিপি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে। সে যাইহোক বাংলাদেশ এখন বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে। কিন্তু বিশ্বের অতিগরীব মানুষের সংখ্যার দেশ হিসেবে তার অবস্থান পঞ্চম। এদেশে ২ কোটি ৪১ লাখ মানুষ হতদরিদ্র।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে শুধু প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে এই পরিমাণ হতদরিদ্রকে ‘দারিদ্র্যের ফাঁদ’ থেকে বের করে আনা যাবে না। অভিজিৎ ব্যানার্জি এবং তার সঙ্গীদের গবেষণা সেটাই বলছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য হঠাতে এই নোবেল বিজয়ীদের দিকনির্দেশনা কাজে লাগবে। সরকারের নীতি-নির্ধারকদেরকেও নতুন করে ভাবতে হবে।