ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে নিজেদের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো কাছে হাত পেতে বা ভিক্ষা চেয়ে নয়, নিজের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করলে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় চলতে পারবে।
পাট একটি কৃষিজাত পণ্য।বাংলাদেশের কৃষক পাট চাষ করবেই। কেননা বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি পাট উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
জমিতে পাটের পর ধান লাগালে ফলন ভালো হয় ও জমির উর্বরতা বাড়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাট এমন একটি পণ্য, যার গাছের পাতা থেকে শুরু করে আঁশ, পাটকাঠি, শেকড়, সবই একেকটি অর্থকরী ফসল।’
পাটের বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে তা আর্থিকভাবে লাভজনক হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান নামের যে রাষ্ট্র ছিলো, সেখানে পাট, চা তামাক প্রভৃতি অর্থকরী ফসলের সবগুলো আমাদের অঞ্চলেই হতো। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষ তার সুফল পেতো না। এ বৈষম্যের কথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বারবার তুলে ধরেছেন ও আন্দোলন করেছেন। যে আন্দোলনের ফসল আজকের স্বাধীনতা।’
‘স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার জন্য তিনি জুট মার্কেটিং করপোরেশন, জুট ট্রেডিং করপোরেশন এবং পাট উৎপাদন ও রপ্তানি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।’
কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী সময় থেকে এই ক্ষেত্রটিকে ধ্বংস করার সব চেষ্টা করে আসা হয়েছে। ১৯৯১ সালে তৎকালীন সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সব পাটকল বন্ধ করে দেয়ার চুক্তি, পাটশিল্প লাভজনক নয় এই অজুহাতে ২০০১ সালে আদমজী পাটকলসহ অন্যান্য পাটকল বন্ধ করে দেয়া, এসবই পাটশিল্প ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা ছিলো বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
পাট বাংলাদেশের সম্পদ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা পাট নিয়ে বাংলাদেশে আরো গবেষণা করার আহ্বান জানান। এতে পাটের উৎপাদন ও মান আরো বাড়বে। বাংলাদেশের পাটের জিনোম আবিষ্কার হওয়ার পর গবেষণার সুযোগ আরো বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়াও পাট শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পাটের ধুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে গিয়ে যেনো ফুসফুসে ঢুকে অসুস্থতার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য তাদেরকে শ্রমিকদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় করা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।