রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরারের মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের ৮ দফা মেনে নিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে ৪৮ ঘণ্টার আাল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনে সিটি কর্পোরেশনের ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন সেখানে বাস চাপায় নিহত আবরারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ আহমেদ চৌধুরী।
উদ্বোধন শেষে দুই মাসের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ শেষ করতে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশও দেন ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এরপর শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের অবরোধ তুলে নিতে আহ্বান জানান তিনি এবং ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদেরকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে জানায়, এই সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত ৮ দফা দাবি সরকারকে মেনে নিতে হবে। দাবি মানার আগ পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এই ৮ দফার মধ্যে রয়েছে:
১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতিমাসে বাস চালকদের লাইসেন্সসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।
২. আটক হওয়া চালক ও সম্পৃক্ত সকলকে দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. আজ থেকেই ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করতে হবে।
৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল স্থানে আন্ডারপাস, স্পিডব্রেকার ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়কে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৬. দায়িত্বে অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. ছাত্রদের হাফপাস অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।
দাবিগুলো প্রথম নিহত আবরার আহমেদ চৌধুরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল। পরে অন্যান্য বিক্ষোভকারীরাও এতে সমর্থন জানায়।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ভাটারার প্রগতি সরণি এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সুপ্রভাত পরিবহনের বাস চাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এ ঘটনার পর বাস চালক ও হেলপার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে চালককে ধরে ফেলে সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে আটক এবং বাসটি জব্দ করে পুলিশ।
আবরারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার পর থেকেই যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের রাস্তা বন্ধ করে প্রগতি সরণি এলাকা জুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে বাড্ডা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তখনই তিনি দ্রুততম সময়ে সব ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে আগামী দশ দিনের মধ্যে ওই এলাকায় নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণসহ দোষীদের দ্রুত বিচারের আশ্বাস ঘটনাস্থলে এসে দেয়ার দাবি জানিয়ে বুধবারও রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করার ঘোষণা দেয়।
পূর্বঘোষিত ওই কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার বাস চাপার ঘটনাস্থল প্রগতি সরণিসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।