বিভিন্ন সময় নিজেরা দল ভেঙ্গে টুকরো-টুকরো হলেও এখন রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে তারা বাম ঐক্য গড়ে তুলছেন বলে বাম নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে যে লুটপাট, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস– তার বিপক্ষে কঠোর অবস্থানে থেকে কাজ করতে চায় বাম ঐক্য। শুধু নির্বাচনে অংশ নেয়াটা এ জোট গঠনের উদ্দেশ্য নয় উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রহসনের নির্বাচন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে এবং দুর্নীতিমুক্ত, পেশীমুক্ত নির্বাচন যাতে হয় সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন তারা।
তবে, জনগণের প্রয়োজনে ও জনগণকে সহায়তায় ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে হলে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়টি ভেবে দেখার কথা বলেছেন বাম জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় থাকা নেতারা।
সিপিবি-বাসদসহ কয়েকটি বাম দলের সমন্বয়ে যে জোট গঠনের চেষ্টা চলছে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ওই দলগুলোর নেতা এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেছে চ্যানেল আই অনলাইন।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন: আওয়ামীলীগ ও বিএপি’র কারণে দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ দুই দলের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত। তারা ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৩০ এর কথা বলছে। কিন্তু আজ তারা ভিশন ১৯৭১ কে ভুলে গেছে। একাত্তরের চেতনা থেকে তারা আজ অনেক দুরে।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে নতুন দল প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যে লুটপাট, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, পেশী শক্তির দৌরাত্ম চলছে এর বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে আমরা লড়াই করবো।
‘বিকল্প কোন দল ছাড়া দেশকে এই দুরবস্থা থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।’
নির্বাচনে অংশ নেয়াটা এ জোট গঠনের উদ্দেশ্য কী না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে নয়- বরং প্রহসনের নির্বাচন থেকে জনগণকে রক্ষা করতে কাজ করবেন তারা।
তবে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে নির্বাচনে অংশ নেয়াও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যদি জনগণ চায় তাহলে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের কণ্ঠেও শোনা যায় একই সুর।
বামমোর্চা, সিপিবি ও বাসদ– এ তিনটি বামদল সমঝোতার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য প্রগতিশীল বামদলগুলোকেও আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
প্রস্তাবিত জোটে এমন দল আছে যারা একসময় বাসদেরই অংশ ছিল।
দল ভেঙ্গে এভাবে জোট গঠনের যৌক্তিকতা কী? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন: দেশে বর্তমানে একটি বিকল্প রাজনৈতিক দল গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ব্যর্থ দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক সরকার জনগণের আশা আকাঙ্খা্ পূরণে ব্যর্থ। এজন্য প্রয়োজন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি। এক্ষেত্রে বামদলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন তিনি।
আগামী নির্বাচনে এ জোট অংশ নেবে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর বিষয়টি জানা যাবে।
তবে এ বাম ঐক্যের ভবিষ্যৎ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করছে বলে মনে করেন তিনি। রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে নতুন জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে খালেকুজ্জামান বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন এতে দেখা যাবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ছাড়াও এ জোট প্রক্রিয়ারে মধ্যে আছে গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ এবং বাসদ (মার্কসবাদী)।
এমন একটি জোটের ভবিষ্যৎ আসলে কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন: দল ভেঙ্গে জোট গঠনের উদ্দেশ্য কী তা আমি দেখতে যাবো না। আমি যেটা দেখতে চাইবো তা হলো তারা কী কাজের জন্য জোট গঠন করছে? তাদের উদ্দেশ্য কী?’
‘যদি আসন্ন নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে তারা তাদের শক্তি জানান দিতে চায় তবে সেক্ষেত্রে তাদের আমি অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো।’
‘তবে যদি তারা কোন দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এ জোট গঠন করে তবে তা হবে দুঃখজনক,’ বলে মন্তব্য করেন ড. শান্তনু মজুমদার।
নির্বাচনে তাদের উপস্থিতি হবে অবশ্যই সমর্থনযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বামদলগুলো যদি তাদের উদারনৈতিক শক্তি গঠনের জন্য এবং দেশের উন্নতিকল্পে এ জোট গঠন করে তাহলে তাদের সাধুবাদ জানাতে কোন কার্পণ্য করবো না।’
সিপিবি-বাসদ ও বামমোর্চার ঐক্যের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে যৌথ সমাবেশ করেছে তারা। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই রাজনৈতিক জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৯ আগস্ট ‘ঘুষ, দুর্নীতি-লুটপাট ও অর্থপাচার রুখে দাঁড়ানোর’ আহ্বানে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিও আছে তাদের।