তরুণ, জনপ্রিয়, এবং অভিজ্ঞ নাট্যনির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান। ভক্তরা ভালোবেসে ডাকেন ‘ডিরেক্টর অব রোমান্স’। কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে বানিয়েছেন প্রায় পঞ্চাশটির মতো নাটক-টেলিফিল্ম। বিজ্ঞাপন নির্মাণেও রেখেছেন স্বকীয়তার ছাপ। প্রতিটি উৎসবেই দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে আরিয়ানের নির্মিত নাটক। আরিয়ানও হতাশ করেন না। আসছে ঈদের কাজ নিয়েও তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নতুনকিছু গল্প দর্শকদের উপহার দেবেন বলে। এসব নিয়েই চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন আরিয়ান:
কেমন আছেন? কী করছেন?
এই তো আলহামদুলিল্লাহ্। ভালো আছি। নতুন কিছু কাজের গল্প এবং কাস্টিং নিয়ে ভাবছি।
‘বড় ছেলে’র পর ‘বুকের বাঁ পাশে’ টেলিফিল্মটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পেলো। কেমন লাগছে?
এটা সত্যিই ভালোলাগার বিষয়। ফুটবল বিশ্বকাপের এই সময়টাতেও নাটকটি ১২ দিনে প্রায় ৪০ লাখের মতো ইউটিউব ভিউ হয়েছে, এটা দারুণ ব্যাপার। ইউটিউব কমেন্টসগুলো থেকেও বোঝা যায় কাজটি দর্শক কতোটা পছন্দ করেছেন। তাছাড়া, নাটকটির গান দুটিও প্রশংসা কুড়োচ্ছে খুব।
আপনার বানানো প্রায় সবগুলো নাটক-টেলিফিল্মই ইউটিউবে হিট। বাজেট বেশি পান, নাকি রহস্য অন্যকোথাও?
আমার জানামতে বাংলাদেশের সিনিয়র-জুনিয়র কোন নাট্যনির্মাতাই প্রোডাকশন বাজেট নিয়ে সন্তুষ্টির কাতারে নেই। আমার মূল শক্তিটা হলো গল্প। আমি মানুষকে পড়ার চেষ্টা করি। মানুষের জীবনের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করি আমার মতো করে।
দর্শকদের জন্যে সামনে কী কী অপেক্ষা করছে?
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রবাসীদের জীবনের প্রেম-ভালোবাসা-সংসারের গল্প নিয়ে তৈরি হবে ঈদ টেলিফিল্ম ‘প্রবাসী’। মূল চরিত্রে অভিনয়ে থাকবেন জননন্দিত অভিনেতা, বড়ছেলে, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়া’য় প্রবাসী’র শুটিং-এর প্রস্তুতি চলছে।
তাছাড়া, আসবে মোটিভেশনাল ড্রামা ‘শোক হোক শক্তি’। ব্রেক-আপের শোকটাই যে জীবনের শেষকথা নয় -এমন গল্পে দেখা যাবে আফরান নিশোকে।
অন্যদিকে, একটা মেয়ের একা জীবনের গল্প নিয়ে আসবে ‘আ সিঙ্গেল গার্ল’। সঙ্গে থাকবে ফেসবুক আসক্তি কাটানোর ফর্মূলা নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী নাটক ‘ফেসবুক ছাড়ার ছয়টি উপায়’।
আপনাকে সবসময় ছোটপর্দার বড় শিল্পীদের নিয়েই কাজ করতে দেখা যায়। উঠতি তারকাদের উপর কী আস্থা কম?
এটা আসলে গল্পের উপর নির্ভর করে। আমার গল্পের মূল চরিত্রগুলোর বয়স ২৮ থেকে ৩২ এর মধ্যেই বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে গল্পের প্রয়োজনেই একটু সিনিয়র শিল্পী নিয়ে কাজ করতে হয়। তবে, আমি উঠতি তারকাদের নিয়েও কাজ করেছি। আমার নাটকে সিয়াম কাজ করেছে, অ্যালেন শুভ্র কাজ করেছে, মনোজ ছিলো, তামিম মৃধা ছিলো। নতুন একটি কাজের পরিকল্পনা চলছে। গল্পের প্রয়োজনে সেখানেও নতুনরাই থাকবেন।
অনেকেই ভাবেন, নাটক তো কয়েকটা বানালাম। এবার চলচ্চিত্র বানানোর কাজে নামা-ই যায়। চল্লিশ মিনিটের গল্পের সাথে আরো চল্লিশ মিনিটের ব্যাপার মাত্র! -এ ব্যাপারে আপনার চিন্তাভাবনা কী?
সিনেমা বানালে সিনেমার মতো করেই বানাবো। নাটক-টেলিফিল্মের আদলে গল্প টেনে নিয়ে সেটাকে সিনেমায় রূপ দেয়ার ইচ্ছে নেই। আর সিনেমা বানানোর প্রস্তাবও আসছে আমার কাছে। প্ল্যানিং চলছে। আশা করি কয়েক মাসের মধ্যেই ভালো কোন খবর জানাতে পারবো।
প্রেমের নাটক বানাতে বানাতে ভক্তদের কাছ থেকে ‘ডিরেক্টর অব রোমান্স’ উপাধী পেয়ে গেছেন। অন্যধারার নাটক কি একদমই পরিকল্পনায় আসেনা?
হা-হা। এটা ঠিক যে প্রেমের নাটক বানাতে আমি একটু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ভালো লাগে। কিন্তু ‘বড়ছেলে’ কি পুরোপুরি প্রেমের গল্প? এটা একটা সংসারের গল্প। সংসারের মানুষগুলোর মধ্যে কারো কারো প্রেম থাকতেই পারে। প্রেমটাই কিন্তু মূখ্য ছিলোনা। আর আপনি যদি সরাসরি কমেডি নাটকের কথা বলেন, তবে বলবো, আপাতত তেমন কোন ভাবনা নেই।
আমি দর্শকদের জন্যে নাটক নির্মাণ করি। দর্শক আমার কাছে প্রেম আর পরিবারের গল্প দেখতে চায়।
‘মান-অভিমান, অনিশ্চয়তা শেষে দু’জন দু’জনার’- এমন গতানুগতিক গল্পের গাড়িতেই উঠে বসেছিলো আমাদের টিভিনাটক। নামানোর চেষ্টা করছেন যারা তাদের মধ্যে আপনিও একজন। এ ব্যাপারে নিজেকে কতটা সফল মনে করেন?
নিজের ব্যাপারে নিজেই মূ্ল্যায়ন করতে চাইনা। কিছু জিনিস অন্যের উপরে ছেড়ে দেয়াই ভালো। আমার দিন শুরু হয় আমার কাজগুলোর ইউটিউব কমেন্টস পড়তে পড়তে, শেষও হয় একইভাবে। শুধু এটুক বলতে পারি যে আমার কাজগুলো মানুষ পছন্দ করছেন। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছি প্রতিনিয়ত। তবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এখনো সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে আছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আপনার কী মনে হয়, চলমান প্রেক্ষাপটে নাট্যনির্মাতাদের মূল চ্যালেঞ্জগুলো কোথায়?
যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। একটা নাটক বানাতে যে পরিমান বাজেট লাগে আমরা ২৫-৩০ শতাংশ কম পাচ্ছি। খরচ কমাতে গিয়ে কোয়ালিটিতে ছাড় দিতে হয়। পুরোপুরি সন্তুষ্টি নিয়ে কাজগুলো শেষ করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ভালো গল্পের অভাব। প্রফেশনাল গল্পকার নেই বললেই চলে। এই কারনে অনেক নির্মাতাকে ইচ্ছে কিংবা সময়-সুযোগ না থাকলেও গল্প নিয়ে ভাবতে হয়। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের অনেক গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। শিল্পী সংকটের কারণেও কিছু কিছু কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে। বিভিন্ন উৎসবে কাজের পরিমান বেড়ে যায়। গুণী শিল্পীরাও তখন তাড়াহুড়োর মাঝে থাকেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে গেলে একটু এদিক-সেদিক হয়ে যেতেই পারে। অতএব, আমাদেরকে শিল্পী সংকটও কাটিয়ে উঠতে হবে।
সম্প্রতি প্রচারিত হলো আপনার একটি ধারাবাহিক নাটক ‘গল্পগুলো আমাদের’ –এর শেষ পর্ব। জার্নিটা কেমন ছিল?
এটা ছিলো ৫৭ পর্বের একটি ধারাবাহিক। একাধিক পর্বের নাটক এটাই প্রথম। চেষ্টা করেছি ভালোভাবে শেষ করার। মনে হয় পেরেছি। চ্যানেল থেকেও ভালো ফিডব্যাক ছিল। ইউটিউব ভিউও বেশ ভালো। এরমধ্যে কাজ শুরু করতে চলেছি আরেকটি ধারাবাহিকের। নাম- ‘ভালো থাকিস বাবা’।
‘ভালো থাকিস বাবা’ এবং আপনার জন্যে শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
আপনিও ভালো থাকবেন। চ্যানেল আই অনলাইন-এর সবাই ভালো থাকুক।