“আমি তো জানি না আমার স্বামীর কবর কই, তাই এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলই আমার স্বামীর কবর। আমি যেখানেই মোনাজাত ধরব, আল্লাহ সেখানেই জেয়ারত কবুল করে নেবেন”-সংলাপটি বলেই তিশা আচমকা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মোনাজাত ধরলেন। তখন তার দু’চোখ বেয়ে নেমে এসেছে অজস্র অশ্রুধারা। তিশার সাথে সাথে দর্শকদেরও কি চোখ দুটো তখন ভিজে ওঠেনি অজান্তেই?
বলছিলাম ‘আয়েশা’ টেলিফিল্মটির কথা। সত্তর দশকের পটভূমি নিয়ে আনিসুল হকের ‘আয়েশামঙ্গল’ উপন্যাস অবলম্বনে টেলিফিল্মটি নির্মাণ করেছেন ৮ বছর পর ছোট পর্দায় ফেরা মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
‘আয়েশা’ এক সাধারণ বাঙালি নারীর স্বামী নিখোঁজ হওয়ার গল্প। সেই হারানো স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার এক আকুলতায় ভরা ভ্রমণের গল্প। কিংবা স্বামীর লাশটাও দেখতে না পাওয়ার এক হাহাকারময় গল্প। নাটকটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। সঙ্গে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী।
নববিবাহিত এক বিমানবাহিনী সদস্যের সংসার শুরু হয় বিমানবাহিনীর এক কোয়ার্টারে। হাসি, খুনসুটি এবং ভালোবাসাবাসি নিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়ে কোনো এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ একদিন ডেকে নেয়া হয় তাকে। স্ত্রীকে দ্রুত ফিরে আসার আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত আর ফেরা হয় না তার।
এমন এক দুঃসহ পরিস্থিতিতে স্ত্রী বার বার ছুটে যান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে, এবং সবশেষে পরাজিত হন এক বিশাল শক্তির বিপরীতে, পরাজিত হন নিজের কাছে। তিশার অভিনয় দেখে বোঝার উপায় ছিল না তিনি অভিনয় করছেন। মনে হচ্ছিল যেন তিনি আমাদের পাশেই আছেন, ওইতো আমাদের পাশেই হাসছেন, কাঁদছেন, কিংবা স্তব্ধ হচ্ছেন। তার সাথে সাথে স্তব্ধ হচ্ছি আমরাও, চোখ দুটো ভিজে উঠছে আমাদেরও। অল্প সময়ের জন্য থাকলেও চঞ্চল চৌধুরী নিজেকে একজন জাত অভিনেতা হিসেবেই প্রমাণ রেখে গেছেন।
সুন্দর ধারাবাহিক সিকোয়েন্সের পর সিকোয়েন্স এবং অসাধারণ চিত্রনাট্য ও দারুণ কিছু সংলাপে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার মেধার প্রমাণ রেখেছেন সুনিপুণভাবে। এই টেলিছবিতে তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন বললেও ভুল হবে না।
দর্শকরাও চায়, এই গুণী নির্মাতা তার প্রতিটা নির্মাণে বার বার ছাড়িয়ে যাক নিজেকে। এই সস্তা কাহিনী কিংবা ভাঁড়ামো গল্পের নাটকের ভিড়ে বাংলা নাটক তার প্রাণ ফিরে পাক, দর্শক বাংলা নাটকে ফিরুক, বাংলা নাটক দেখে তারা হাসুক, তারা কাঁদুক, জীবনের অর্থ বুঝুক কিংবা খুঁজুক। এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।
‘আয়েশা’ প্রচারিত হয়েছিল চ্যানেল আইয়ের বিশেষ ঈদ আয়োজনে। চ্যানেল আইয়ের ইউটিউবে টেলিফিল্মটি প্রচারের পর অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পড়ে।
ইউটিউবেও দেখে ফেলতে পারেন আলোচিত ‘আয়েশা’: