নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মনে করছেন, ভারতে অনেক কিছু হলেও দরিদ্রদের স্বার্থে পরিবর্তন এসেছে খুবই কম। আগামী মাসে তার নতুন বই ‘দ্যা কান্ট্রি অব ফার্স্ট বয়েজ’ এর প্রকাশনার আগে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ এর মঞ্জুলা নারায়ণকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন সবসময় বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করা এই অর্থনীতিবিদ। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্ত রূপে অনুবাদ করেছেন সাবিত খান।
প্রশ্ন: দেশ পরিবতির্ত হয়েছে।
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, দেশ পরিবর্তিত হয়েছে। আমার আশা ছিলো যে তারা গুজরাট মডেলের সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝতে পারবে। গুজরাটে বিহারের চেয়ে টিকা প্রদানের হার কম, স্বল্প সাস্থ্য সুবিধা এবং শিক্ষা যা বিহারের চেয়ে কম, যদিও রাস্তাঘাট এবং শক্তি সরবরাহে ভালো কাজ দেখিয়েছে গুজরাট। দুর্ভাগ্যবশত, কেন্দ্রীয়ভাবে মানব উন্নয়নে একটি বিস্তৃত উন্নয়ন মডেলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তাদের দৃষ্টিপাতের বিষয়ে আমার আশা সত্যি হয়নি। এমনকি বাজেটেও শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে তারা কাটছাট করেছে। শক্তি সরবরাহ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতিও সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রশ্ন: নতুন বইয়ের সূচনায় আপনি আমাদের সমাজে বিদ্যমান সাধারণ পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে বলেছেন যা গরীব এবং ধনী ভারতীয়দের মধ্যে বিভাজনের ক্ষেত্রে আমাদের অন্ধ করে তুলে, যেটা আমাদের সকল সমস্যার মূল।
অমর্ত্য সেন: অবশ্যই। শুধু একটি বিভাজনই নয়। এখানে একের চেয়েও বেশি রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগের অভাব, স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা এবং টিকা গ্রহণ না করার ক্ষেত্রেও একটি বড় বিভাজন রয়েছে। ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এই বিভাজনের বিষয়টি যে কতো বড় সমস্যা সে বিষয়ে জ্ঞানের অভাব, বোঝার অভাব রয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীণ সঙ্গতি রেখেই উন্নয়নের কাজ করতে হবে। এটা শুধু সরকারের দোষ নয় বরং সরকার পরিচালনায় অপূর্ণ চিন্তা সংশোধনের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ না করাও দায়ী।
প্রশ্ন: মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো দেশের বিভাজনগুলো কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব।
অমর্ত্য সেন: না, এটা অসম্ভব নয়। আমার মনে হয় বিষয়টি প্রতিনিয়ত আমাদের উত্থপন করতে হবে। নানাভাবে বঞ্চনার শিকার প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষদের দুর্দশার কথা এতোটা মনোযোগ পাচ্ছে না। এটা চিন্তার শীর্ষে নেই, সংবাদপত্রের শীর্ষে নেই।
প্রশ্ন: দরিদ্র্য সেক্সি কোনো বিষয় নয়।
অমর্ত্য সেন: ঠিক তাই।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায় ভারতের দরিদ্র শিশুর সংখ্যা আফ্রিকার অনেক দেশের চেয়েও অনেক বেশি।
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এবং পুষ্টিহীনতা অনেক খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। টিকার হার আফ্রিকার থেকে খারাপ নয়, কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে অনেক খারাপ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর চেয়ে নাটকীয়ভাবে কম।
প্রশ্ন: এতো বছর পরও এ বিষয়গুলো আমাদের জড়িয়ে রয়েছে কেনো?
অমর্ত্য সেন: এই বিষয়গুলোতে আমরা মনোযোগ দিয়েছি বলে আমার মনে হয় না। যখন জনগণ বলে গুজরাট একটি সফল অর্থনৈতিক মডেল, পুষ্টিহীনতা, অশিক্ষা, টিকা প্রদানের হারের ক্ষেত্রে গুজরাটের রেকর্ড অত্যন্ত খারাপ।