চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

দণ্ডিত ছয় রাজনীতিবিদ

বড় একটি রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এবং সাবেক দুই মন্ত্রীসহ ছয় রাজনীতিবিদের সাজা হয়েছে ১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে।

তাদের মধ্যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপ-মন্ত্রী আবদুল সালাম পিন্টুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান (পলাতক), বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), বিএনপি নেতা ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ (পলাতক) এবং ঢাকা মহানগরীর ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বুধবার এই মামলায় ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং খালেদা জিয়ার বড় ছেলেসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ মামলার আসামি ১১ একাধিক বাহিনীর কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত রায় ঘোষণা করেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, নৃশংস গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শত নেতা-কর্মী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সে মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি।

এর চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যার অভিযোগে এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। এরপর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচার শুরু হয়।

কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় নতুন ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। সেখানে বিএনপির নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের নাম আসে।

এরপর ২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। নতুন করে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। রাষ্ট্রপক্ষের ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে মোট ২২৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। আর ১২০ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলা দুটি রায়ের পর্যায়ে আসে। সব মিলিয়ে এ মামলা শোনার জন্য মোট ১ হাজার ৪৫৪ কার্যদিবস আদালত বসে। অবশেষে ১০ অক্টোবর রায় দেন আদালত। রায়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলায় ৪৯ আসামিকে দণ্ডিত করা হয়।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জমান বাবর, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, শেখ আবদুস সালাম, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল সালাম পিন্টু, আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউছুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিব উল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সায়ীদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামীম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ। এরমধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও মোহাম্মদ হানিফ পলাতক রয়েছেন। বাকি ১৭ আসামি কারাগারে আছেন।
রায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান (পলাতক), বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর ওরফে আবু হুমাইয়া ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আবিদ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, ঢাকা মহানগরীর ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন (পলাতক), মোহাম্মদ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক), রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের (পলাতক)। গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং এই অপরাধে সহায়তা করে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন ১১ আসামি। এদের মধ্যে সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা ও সাবেক আইজিপি শহুদুল হককে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসামি- অব. লে. কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, অব. লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার (পলাতক) ও মেজর জেনারেল এটিএম আমিনকে (পলাতক) দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে প্রত্যেককে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, আসামি অব. ডিআইজি খান সাইদ হাসান (পলাতক) ও পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খানকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসামি- অব. আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, অব. এসপি রুহুল আমিন, অব. এএসপি আব্দুর রশিদ ও অব. এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।