দখিন-হাওয়া, জাগো জাগো, জাগাও আমার সুপ্ত এ প্রাণ
না, ‘দখিন হাওয়া’ শুধু রবি ঠাকুরের গানেই নয়, বাংলাদেশের হুমায়ূন ভক্ত পাঠক মাত্রই জানেন ‘দখিন হাওয়া’ কী? হুমায়ূন আহমেদ’র লেখা থেকে পাঠকের মগজে গেঁথে যাওয়া একটি বাড়ির নাম ‘দখিনা হাওয়া’। ধানমন্ডির এ বাড়ির একটি ফ্ল্যাটেই ছিলো হুমায়ূনের একটা দীর্ঘ সময়ের বসবাস। কত গল্প, উপন্যাসই না ওই ফ্ল্যাটে বসে লিখে গেছেন প্রিয় এই শব্দজাদুকর হুমায়ূন আহমেদ!
‘দখিন হাওয়া’ বাড়ির হুমায়ূন আহমেদের ফ্ল্যাটের কিছু ছবি দেখুন চ্যানেল আই অনলাইনের ক্যামেরায়।
এ কথা তো সকলেই জানেন, হুমায়ূন আহমেদের দখিন হাওয়ার ফ্ল্যাটের দরজা কখনো বন্ধ থাকতো না। বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন ঘনিষ্ঠদের কথায় এইরকমটাই উঠে এসেছে। এখনো দরজা সবসময় খোলা থাকে কিনা জানা নেই। তবে, সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায় এখনো খোলা দরজা।
সারা ঘরে যেন গল্পের ফিসফিসানি। বাতাসে বাতাসে উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা চরিত্রগুলো ঘোর তুলেছে। তুলেছে গুঞ্জন, কে যেন নাই! কী যেন নাই!
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর পাঠকদের চোখে এঁকে দিয়েছেন জোছনার পৃথিবী, মেঘমালার শহর, বৃষ্টিদিনের গান, রবিনাথ, জীবনানন্দ দাশ আর দেশ-বিদেশের নানান চলচ্চিত্রের। দখিন হাওয়া’র এই ফ্ল্যাটের বসার ঘরেই ঝুলে আছে প্রজেক্টর। এইখানে বসেই হয়তো হুমায়ূন সিনেমা দেখতেন।
একজন লেখকের মূল শক্তি তাঁর পাঠ। হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর পড়াশোনা করতেন। বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে থাকতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাঁর না থাকা নিয়ে শূন্য হয়ে আছে তাঁর পড়ার ঘর।
হুমায়ূন আহমেদ ফ্লোরে বসে টোলের উপর কাগজ রেখে লিখতেন। সেই অর্থে হুমায়ূন আহমেদের লেখার টেবিল বলতে নীচু একটা টেবিল। সেটার একটা ড্রয়ার, একটা খোপ। সেই টেবিলের উপর দুটি কচ্ছপের ঘর।
হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন,
“মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। মরে গেলাম ফুরায়া গেল। তবে এটা আমার কাছে খুব পেইনফুল। একটা মানুষ পৃথিবীতে এতো ক্ষমতা নিয়ে আসে, ৭০ বা ৮০ বছর বাঁচে। তারপর শেষ। আর একটা কচ্ছপ সাড়ে তিনশ বছর বাঁচে। হোয়াই? কচ্ছপের মত একটা প্রাণীর এতো বছর বাঁচার প্রয়োজন কী?”
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন, এইখানে। এখন নেই। তাঁর না থাকার গুঞ্জন তোলে দখিন হাওয়া। কে যেন গুনগুন করে ডাকে, চলে এসো, চলে এসো, এক বরষায়…