থাই সরকারের হুমকি পেয়ে রাজতন্ত্রের সমালোচকারী একটি ফেসবুক গ্রুপ ব্লক করে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
দেশটিতে সম্প্রতি রাজতন্ত্র, সংবিধান ও রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভ গড়ে উঠেছে।
‘রয়ালিস্ট মার্কেটপ্লেস‘ নামের ওই গ্রুপ রাজতন্ত্রের বিপক্ষে জনমত গঠন ও তীব্র সমালোচনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যার সদস্য সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক।
রাজতন্ত্রের সমালোচক ও গবেষক পভিন চাচাওয়ালপংপুন এপ্রিল মাসে জাপান থেকে ওই গ্রুপটি খুলেন। খোলার সঙ্গে দ্রুত গ্রুপে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যায় এবং থাই রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা চলতে থাকে গ্রুপে।
এর ফলে গ্রুপটি সামরিক জান্তা সরকারের নজরে পড়ে এবং গ্রুপটিকে ব্লক করতে ফেসবুকের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর হুমকি দেয় জান্তা সরকার। তারই প্রেক্ষিতে গ্রুপটিকে ব্লক করতে বাধ্য হয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
তবে থাইল্যান্ড থেকে ওই গ্রুপে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও অন্যান্য দেশ থেকে প্রবেশ করা যায় বলছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুক বলছে, তারা এই বিষয়ে থাই সরকারের বিপক্ষে আইনী চ্যালেঞ্জে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
সোমবার রাতে গ্রুপে একটি বার্তা আসে যেখানে বলা হয়, ডিজিটাল অর্থনীতি ও সমাজ মন্ত্রণালয়ের আইনী অনুরোধ অনুসারে থাইল্যান্ডে এই গ্রুপে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাপানে নির্বাসিত গ্রুপের এডমিন পাভিন বলেন, এর মধ্যদিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সামরিক অধ্যুষিত সরকারের চাপের সামনে মাথা নত করলো।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, আমাদের গ্রুপটি গণতন্ত্রের পক্ষে একটি প্লাটফর্ম, এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা। গ্রুপটি ব্লক করার মধ্যদিয়ে ফেসবুক একপ্রকার গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং থাইল্যান্ডে স্বৈরাচারকে সহযোগিতা করছে।
তবে এরই মধ্যে প্যাভিন একই নামে আরেকটি গ্রুপ খুলেছেন এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত গ্রুপে সদস্য সংখ্য দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায় যে, তারা আগের গ্রুপটি প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তবে এই বিষয়ে থাই সরকারকে আইনত চ্যালেঞ্জ জানানোর পরিকল্পনা করছে।
ফেসবুকের একজন মুখপাত্র জানান, সরকারের এই জাতীয় অনুরোধগুলো গুরুতর, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী এবং মানুষের মত প্রকাশের ক্ষমতাকে খর্ব করে। আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সবার অধিকার সুরক্ষিত ও তাদের মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় কাজ করি।
থাই আইন অনুযায়ী, রাজতন্ত্রের সমালোচনা নিষিদ্ধ। রাজপরিবারের সমালোচনা করলে দীর্ঘদিন কারা ভোগের বিধান আছে।
গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই দেশটিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। গত বছর বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সাবেক সামরিক সরকারের নেতা প্রায়ুত চান-ওছার পদত্যাগ দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারও করেছে থাই পুলিশ।
রোববার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য শ্রেণি পেশার মানুষ তাতে অংশ নেয়। রোববার সন্ধ্যায় ওই প্রতিবাদে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট প্রায়ুত চান-ওছার ক্ষমতা দখলের পর থাইল্যান্ডে এটাই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।